লিখেছেন আসিফ মহিউদ্দীন
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাইয়া অবশেষে স্বঘোষিত (১) নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীন ইসলাম ধর্ম কবুল করিলেন এবং পাক কুরআন ছুইয়া শপথ লইলেন যে তিনি আর নবী মুহাউম্মাদ মোস্তফা এবং আল্যাতালার লুঙ্গির কোঁচা] (২) ধরিয়া আর টানা-হ্যাঁচড়া করিবেন না। আসিফ মহিউদ্দীন তাহার নাস্তিক বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের আহ্বান জানাইয়া এক বিবৃতিতে বলিয়াছেন "হে আহাম্মক নাস্তিক ভাই এবং বন্ধুরা, এতদিন নাফরমানী আর গোমরাহীর পথ ছাড়িয়া অবশেষে আমি সত্যের সন্ধান পাইয়াছি, আল্যাতালার নূরের আলোয় নিজের অন্তর আলোকিত করিয়াছি। আসুন, আমরা দলে দলে পাক এচলাম কবুল করিয়া দুনিয়া এবং আখিরাতের অশেষ নেকী এবং ৩৬-২৬-৩৬ ঝাক্কাছ হুর হাছিল করি। নিশ্চয়ই আল্যাতালা পরম দয়ালু এবং ভয়ংকর শাস্তিদাতা!"
কী সেই মোজেজা, কী সেই অসামান্য উপলব্ধি, যার কারনে এই রকম ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক অবশেষে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ফিরিয়া আসিলেন? এ এক অপূর্ব ঘটনা, খোদাবিরোধীদের প্রতি আল্যাতালার সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং আল্যাতালার মোজেজা, তিনিই তো মাটির গাছে লাউ পয়দা করেন এবং সেই লাউকে কাঁঠালে পরিনত করেন (৩)। বলেন সুবহানাল্লা।
খবরে প্রকাশ, কঠোর নাস্তিক এবং ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মবিদ্বেষী আসিফ মহিউদ্দীন গত কয়েকদিন ধরিয়া খোদাবিরোধী প্রচারণা চালাইবার উদ্দেশ্যে পাক কুরআন অত্যন্ত গভীর মনোযোগের সহিত পাঠ করিতেছিলেন। পাঠ করিতে করিতে হঠাৎ তাঁহার উপলব্ধি হইলো, এই তো সেই বিজ্ঞানময় কেতাব, সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাংকেতিক নিদর্শনওয়ালা অসামান্য আসমানী মোজেজা "যাহার বিষয়ে কোনোই সন্দেহের অবকাশ নাই"।
আসিফ মহিউদ্দীন এক-এক করিয়া আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার একে-একে পাক কুরআনে খুঁজিতে লাগিলেন এবং আশ্চর্য হইয়া দেখিলেন, কুরআনে সকল বিজ্ঞানই সাংকেতিক ভাষায় লিপিবদ্ধ করা রহিয়াছে। শুধু তাহাই নয়, ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ঘটনাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট আভাস-ইঙ্গিতও দেওয়া হইয়াছে।
প্রথমেই দেখা যাক, পাক কুরআনে কী কী বিজ্ঞান আসিফ মহিউদ্দীন খুঁজিয়া পাইয়া নেক আমলকারী বান্দাদের খাতায় এবং বেহেস্তের অসংখ্য হূরীর পতি হিসেবে নিজের নাম লিখাইয়াছেন।
যাঁহারা বিজ্ঞানমনস্ক, মহামান্য হয়রান পীর এবং অন্যান্যদের ন্যায় বিজ্ঞানের সকল জটিল তত্ত্ব একটি পাত্রে ঢালিয়া ঘোল বানাইয়া কুৎ করিয়া গিলিয়া ফেলিয়াছেন, তাঁহারা সকলেই আসিফের সাথে একমত হইবেন যে, কুরআনই পরমবিজ্ঞানময় কেতাব এবং সকল জ্ঞানের নিদর্শনই কুরআনে দেওয়া রহিয়াছে। কিন্তু যাহারা বিজ্ঞান পাঠ করেন নাই, করিলেও ভাসা-ভাসা জ্ঞান (বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটামোটা ডিগ্রী দেখিয়া ভুল করিবেন না, তাহাদের মোটামোটা ডিগ্রী থাকিতে পারে, কিন্তু পাক কলাম তাহারা কলবে ধারণ করেন নাই বলিয়া জ্ঞান সীমাবদ্ধ হইয়া গেছে), গভীরে প্রবেশ করিতে সমর্থ হন নাই, যাঁহারা চোখের উপর ঠুলি পরিয়া রহিয়াছে, আল্যাতালা যাঁহাদের অন্তরে সিল মারিয়া দুনিয়ার চৌরাস্তায় পাছায় কষে লাথি মারিয়া ছাড়িয়া দিয়াছেন, তাঁহারা এই সকল তত্ত্ব কিছুই অনুধাবন করিতে পারিবেন না। অতএব সেই সকল পাঠক অযথা ত্যানা প্যাঁচাইয়া বা নাফরমানী যুক্তি-প্রমাণ চাহিয়া খোদাতালার অপমান করিবেন না। আপনারা বিজ্ঞান বোঝেন না, ইহা মানিয়া লওয়াই আপনাদের জন্য উত্তম।
আসুন, দেখা যাক, পাক কুরআনে আসিফ কী কী বিজ্ঞান খুঁজিয়া বাহির করিতে সমর্থ হইয়াছেন।
# এই মাত্র সেদিন স্টিফেন হকিং বলিয়াছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের ভূমিকা গৌণ, আসলে কোনো ভূমিকাই নাই। এই ২০১০ সালে পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং যে কথা বলিয়াছেন, পবিত্র কুরআনে আল্যাপাক সেই চোদ্দশত বছর পূর্বেই এই কথা বলিয়া দিয়াছেন। আল্যাতালা পবিত্র কুরআনে বলিয়াছেন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অর্থাৎ " আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই"। ইহা হইতে প্রমাণিত হয়, মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের কোনো ভূমিকাই নাই, থাকিতে পারে না। সব অযৌক্তিক অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা। মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে এক এবং কেবল মাত্র আল্যাতালা ছাড়া আর কারো কোনো অবদান নাই, থাকা সম্ভব নয়। যদিও স্টিফেন হকিং এখনও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হন নাই যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বর নয়, আসলে আল্য্যার হাত রহিয়াছে, তথাপি বিবেকবান এবং বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা, যাঁহাদের পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান আছে, তাঁহারা মানিয়া লইবেন যে, আজ প্রমাণিত হইল, মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের ভূমিকা নহে, রহিয়াছে আল্য্যাপাকের ভূমিকা।
তাছাড়া পবিত্র কুরআনে আল্যাপাক বলেছেন, "আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা এবং যখন তিনি কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন, 'হও' আর তা হয়ে যায়।"
অর্থাৎ এখানে ওনার কোনো ভূমিকাই পালন করতে হয় না, শুধু হও বলতে হয় মাত্র। পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাই শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনের প্রতিধ্বনি করিয়াছেন মাত্র।
বলেন আলহামদুলিল্লাহ।
টিকা-১: নাস্তিক তো সব সময় স্বঘোষিতই হবে, নাস্তিক যে নাস্তিক, তা কি পাড়াপ্রতিবেশী ঘোষণা করবে নাকি নিজে ঘোষণা করবে? আস্তিকদের এই শব্দটার ব্যবহার তাদের যে কতখানি হাস্যকর আহাম্মকে পরিনত করে, তারা কি সেটা বোঝে না?
টিকা-২: ইহা মোটেও আল্যা বা নবী মোস্তফার প্রতি কটাক্ষ বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে না, কারন আল্যাতালা বা নবী মোস্তফা কেউই লুঙ্গি পরিধান করিতেন, এমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। অতএব আসিফ কিছুতেই অবাস্তব এবং অদৃশ্য লুঙ্গি টানাহেচড়া করিতে পারেন না।
টিকা-৩: আমার মাটির গাছে লাউ ধইরাছে ভিডিও দ্রষ্টব্য।
(আরও আসিতেছে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন