লিখেছেন: ঠোঁট কাটা বন্ধু
মহিষাসুর কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করে বর পেলো যে, এই জগতের কোন পুরুষের হাতে তার মৃ্ত্যু হবে না। বর পাওয়ার পর সে অত্যন্ত অত্যাচারী হয়ে উঠল। এক পর্যায়ে সে স্বর্গ আক্রমণ করে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করল। দেবতারা তখন সবাই মিলে ব্রহ্মার কাছে গেল। ব্রহ্মা তখন সকলকে নিয়ে প্রলয়ের দেবতা শিবের কাছে গেল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের মিলিত শক্তি থেকে দুর্গার সৃষ্টি হল। দেবতারা প্রত্যেকে তখন দুর্গাকে একটি করে অস্ত্র দিলেন। হিমালয় দুর্গাকে বাহন হিসেবে দিল একটা সিংহ। সেই সিংহের পিঠে চড়ে দুর্গা মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করতে এলেন এবং মহিষাসুরকে বধ করলেন।
এ কাহিনী পাঠের পর নিম্নোক্ত কিছু প্রশ্ন আমার মনে জাগে।
১) এক সামান্য অসুরকে দমন করতে ঈশ্বরের এত পরিশ্রম হল কেন?
২) সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সদিচ্ছা থাকলে তো তিনি এক তুড়িতেই মহিষাসুরের "রাম নাম সত্য" করে দিতে পারতেন।
৩) সর্বজ্ঞ ঈশ্বর তো নিশ্চয় জানতেন যে, মহিষাসুর ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। তাহলে তাকে সৃষ্টিই বা কেন করা হল, ক্ষমতাই বা কেন দেয়া হল, আবার এত কাহিনী করে হত্যাই বা কেন করা হল? একই কথা আল্লা ও ইবলিশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৪) দুর্গা সিংহের পিঠে চড়ে যুদ্ধে আসলেন কেন? তিনি তো ঐশ্বরিক শক্তির বলে কোন বাহন ছাড়াই চলাফেরা করতে পারতেন।
৫) দুর্গার দুই ছেলে: কার্তিক ও গণেশ। কার্তিক হল সুপুরুষের উপমা (মেয়েদের মধ্যে যেমন ঐশ্বরিয়া)। সেই সুপুরুষ বিয়ে করল কলাগাছকে। কেন? এত বড় সৃষ্টিজগতে তার জন্য যোগ্য মেয়ে পাওয়া গেল না?
৬) গণেশের বিশাল বপু। কিন্তু তার বাহন হল ইঁদুর। কেন বাবা? গণেশের বিশাল দেহের সাথে মিল রেখে তার বাহন হতে পারত গণ্ডার কিংবা জলহস্তী। খামাখা ঐ পুঁচকে ইঁদুরটাকে কষ্ট দেয়া কেন?
৭) দুর্গার দুই মেয়ে। লক্ষ্মী (অর্থ সম্পদের দেবী) ও সরস্বতী (বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী)। লক্ষ্মীর বাহন হল প্যাঁচা। দুনিয়াতে এত সুন্দর সুন্দর পাখি থাকতে প্যাঁচার মত কুৎসিতদর্শন একটা পাখি কেন লক্ষ্মীর বাহন হল? লক্ষ্মীর রুচি এত খারাপ কেন?
৮) প্রলয়ের দেবতা হল শিব বা মহাদেব। সে নিজেই ভাং খেয়ে নেশা করে। বাঘের ছাল পরে থাকে। একজন দেবতা যদি নেশা করার মত গর্হিত কাজ (ধর্মগ্রন্থের মতে) করে তাহলে মানুষ নেশা করলে দোষ হবে কেন?
আসলে এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর পাওয়া যাবে না। প্রতিটি ধর্মই আজগুবি সব গল্পে ভরপুর। কোন ধারাবাহিকতা নেই। কখনও কখনও গল্পগুলো পরস্পর সাংঘর্ষিক। কিন্তু কেউই এসবের উত্তর খুঁজতে যায় না? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব পুরুত-পাদ্রী-মোল্লাদের হাতে অর্পণ করে তারা শুধু নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। ভাবটা এমন, প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে ভাল। না পেলেও সমস্যা নেই। ভগবানেশ্বরাল্লা বলে কেউ থাকলে, বিশ্বাসী হবার কারণে আমি স্বর্গ পাব। আর না থাকলেও সমস্যা নেই। দুনিয়াতে কত কাজেই তো সময়ের অপচয় করি, প্রার্থনাটাও না হয় অপচয়ের খাতাতেই জমা হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন