লিখেছেন মুখফোড়
আদম ক্রোধান্ধ হুহুঙ্কার ছাড়িতে ছাড়িতে ঈশ্বরের দরবারে প্রবেশ করিলো।
দ্বারপথে জনৈক স্বর্গদূত তাহার আইডেন্টিটি কার্ড দেখিতে চাহিয়াছিলো। কহিয়াছিলো, "ডান্ডি কার্ড হায় কেয়া?"
আদমের মেজাজ অদ্য দুরস্ত নাই, সে দন্ত খিঁচাইয়া কহিলো, "কদ্দিন আগেই না সেজদা দিয়ে পায়ের গোদে চুমাচাট্টি খাইলি? ভুলে গেলি এর মধ্যেই? আমার আবার ডান্ডি কার্ড কিসের র্যা?" এই বলিয়া সে প্রহরী স্বর্গদূতের হাতের লাঠি কাড়িয়া লইয়া এক অনর্থ কর্ম করিলো। তারপর হনহন করিয়া গিয়া হাজির হইলো আরশে আসীন ঈশ্বর বাহাদুরের সামনে।
ঈশ্বরের কোন ভাবান্তর নাই, তিনি নির্বিকার মুখে বসিয়া রহিলেন।
আদম কুর্ণিশ করিয়া কহিলো, "হে পিতা ঈশ্বর, ঈভ মাগীকে অতি সত্বর শায়েস্তা করতে হবে। মাগী রোজ আমাকে ঘ্যাম যৌন নির্যাতন করে চলছে মাইরি।"
ঈশ্বর স্মিতমুখে বসিয়া শুনিতে লাগিলেন, কোনরূপ উত্তর করিলেন না।
আদম কহিলো, "বহুকষ্টে মাগীকে সেদিন রাজি করিয়েছি ইয়ে করার জন্য। তার সেই এক গোঁ, আমাকে নিষিদ্ধ ফল গিলতে হবে, তারপর রীতিমতো উত্থান নিয়ে তার কাছে যেতে হবে। যতই বলি এইসব কেমিক্যাল খাওয়া স্বর্গে নিষিদ্ধ, ঈশ্বর নিজে নিষেধ করেছেন, বলেছেন কখনো খেতে দেখলে পোঁদে লাথি মেরে বার করে দেবেন, সে ততই বলে, তাহলে যাও, এইসব ইয়ে তোমার ঈশ্বরের সাথে গিয়ে করো! আমার কাছো আসো কেন? মাগীর আস্পদ্দা চিন্তা করে দেখুন! আর কী অশ্লীল সব কথাবার্তা! বলে কি না ... যা-ই হোক!"
ঈশ্বর প্রশান্ত মুখে বসে রইলেন।
আদম বকিয়া চলিলো, "মাগীর উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে সেদিন গিবরিলকে ঘুষ দিলাম, একটি স্বর্গবেশ্যাদের সচিত্র পত্রিকা, মাসিক কামরশ্মির অক্টোবর সংখ্যাটি, বস আপনি দেখেছেন কি না জানি না, প্রচ্ছদেই সেরকম রগরগে সব ছবি, গিবরিল আমাকে কড়ার করলো সে আমাকে একটা নিষিদ্ধ ফল সেদিন সন্ধ্যায়ই যোগাড় করে দেবে। ... আমি জানি, আপনি শুনলে রাগ করবেন, কিন্তু মা কসম ঠাকুর, সত্যি কথা বলছি!"
ঈশ্বর বাধা দিলেন না আদমকে, শুনিয়া যাইতে লাগিলেন।
আদম কহিলো, "সন্ধ্যাবেলা গিবরিল এসে হাজির, হাতের পোঁটলায় ফল। আমি তো তখনই ঘরে সুগন্ধি ধূপ জ্বেলে, একটা পরিষ্কার হাফপ্যান্ট পড়ে, চুল আঁচড়ে, ঈভের দরজায় টোকা দিয়ে দাঁড়ালাম ফল হাতে করে। মাগী দরজা খুলে প্রথমেই ছোঁ মেরে ফলটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে শুঁকে দেখলো, তারপর এক কামড় খেয়ে বলে কী শুনবেন? বলে, এটা আসল নিষিদ্ধ ফল না। এটা রেপ্লিকা। যাও ভাগো!"
ঈশ্বর কিছু কহিলেন না।
আদম ফুঁসিতে লাগিলো, "ভেবে দেখুন গিবরিলের হারামিপনাটা! আস্ত একটা ন্যাংটা কাগজ দিলাম, আর সে কি না আমাকে একটা নকল ফল এনে দিলো! কোন মানে হয়? ইস, কত কষ্ট হয়েছে হাফপ্যান্টটা পরার সময়!"
ঈশ্বর নিরুত্তর শুনিতে লাগিলেন প্রসন্ন বদনে।
আদম কহিলো, "তারপর মাগীর কান্ডটা শুনুন! শুনলে আপনারও গায়ের পশম খাড়া হয়ে যাবে! আমার মুখের ওপর দরজাটা গদাম করে লাগিয়ে দিলো! বলে কি না, আগে দাঁড়া করাও তারপরে এসো! ... আপনিই বলুন, এ অপমান সহ্য হয়? আমি যত বলি আরে দরজা খোলো, আসো একটু রোমান্স করি, একটু জাবড়াজাবড়ি চুমাচুমি করলে আর নিষিদ্ধ ফল লাগবে না, বাৎস্যায়নশাস্ত্র থেকে কোট করলাম, দরজার ওপাশ থেকে বলে কি, তাহলে বাৎস্যায়নের সাথে গিয়ে এইসব করো, আমার সাথে কী?"
ঈশ্বর চুপচাপ শুনিয়া যাইতে লাগিলেন।
আদম দন্ত কিড়মিড় করিয়া কহিলো, "আমি কিছুক্ষণ ছটফট করলাম, মাসিক কামরশ্মির নভেম্বর সংখ্যাটি উল্টেপাল্টে দেখলাম, কিন্তু লাভ হলো না। আবার গিয়ে ঈভের দরজায় টোকা দিলাম, কোন সাড়া নাই। তখন মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে, বললাম, তবে রে মাগী, এইভাবে এই ফাল্গুন মাসটা নষ্ট করবি? দাঁড়া দেখাচ্ছি! ... বলে লাথি মেরে ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি, ঈভ বিছানার ওপর শোয়া, পরনে শুধু একটা ফিনফিনে কাঁচুলি আর একটা একরত্তি জাঙ্গিয়া! দু'টোই গোলাপি রঙের! আমার তো দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো, ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর ওপর!"
ঈশ্বর কোন মন্তব্য করিলেন না।
আদম রোষতপ্ত কণ্ঠে কহিলো, "মিনিট পনেরো বাদে হুঁশ হতে খেয়াল করে দেখি কী শুনবেন? ওটা ঈভ ছিলো না, ছিলো ঈভের রেপ্লিকা! মাগী নিজের একটা রেপ্লিকা বানিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে! ... কেমন লাগে বলুন? এমন একটা বউ দিলেন পাঁজরের একটা হাড্ডি খরচা করে, যে কিনা কোন কাজেই আসে না, খালি পেরেশানি দেওয়া ছাড়া! আর মাথায় খালি নিষিদ্ধ ফল, নিষিদ্ধ ফল! আর কোন চিন্তাই নাই তার মাথায়! কত আদর করে ডাকি, সোনা মানিক বলে, বলি আয় একটু হয়ে যাক, মাগী এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দেয়! আরে, এই তল্লাটে আর কোন মরদ আছে নাকি ওর জন্য যে এতো বাছাবাছি করে, য়্যাঁ?"
ঈশ্বর কোন উত্তর দিলেন না।
আদমের এইবার একটু সন্দেহ হয়, সে বলে, "বস? আপনি শুনছেন তো আমার কথা?"
ঈশ্বর নিরুত্তর রহিলেন।
আদম আগাইয়া গিয়া দেখিলো, সমস্যা গুরুতর। কে বা কাহারা যেন আরশের উপর ঈশ্বরের একটি রেপ্লিকা গড়িয়া রাখিয়া দিয়া গেছে ...।