রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১১

বর্ণবাদী হিন্দুধর্ম


হিন্দুধর্মে প্রচলিত কুৎসিত বর্ণপ্রথা প্রাসঙ্গিক একটি খবর। "সংবাদ"-এ প্রকাশিত।

কেউ বলে মুচি, কেউ বলে চামার, কেউবা বলে চর্মকার, আবার অনেকেই বলে ঋিশি। নানা নামের আড়ালে মনুষ্যত্বের অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই ঋিশি সম্প্রদায় বিভিন্ন হস্তশিল্প যেমন_ চামড়া, বাঁশ ও বেতের এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ করে বাঙালির ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে নিজ সংস্কৃতিতে। এই ঋিশিরা হিন্দু সমপ্রদায়ের তথাকথিত সবচেয়ে নিচু বর্ণের মানুষ! তাই, তাদের সঙ্গে কথিত উচ্চবর্ণের কেউ মিশতে চায় না। তাদের ছোঁয়াও যেন পাপ!


উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, এক সময় ঋিশি সমপ্রদায়কে দু'শ্রেণীতে বিভক্ত করা হতো। এর একটা বড় বেগী অন্যটা ছোট বেগী। যারা পরিচ্ছন্নভাবে পেশা পরিচালনা করত তাদের বলা হতো বড় বেগী আর যারা মরা গরুর চামড়া ছেলা বা ভক্ষণ করত তাদের বলা হতো ছোট বেগী। উপজেলার জাতপুর রিশি পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত গৃহবধূ কল্পনা রানী। ঝুড়ি, ডালা, কুলা, খারায়সহ বাঁশ দিয়ে তৈরি করে দৈনিক তার আয় হয় ৮০-১০০ টাকা। জানা যায়, সংস্কৃতিচর্চায় ঋিশিরা এগিয়ে থাকলেও হিন্দুদের পূজা এবং বিয়েতে এখন পর্যন্ত ঋিশিদের পূজাম-প বা বিয়ের আসর স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। এ জনগোষ্ঠী এখনো সামাজিকভাবে নিগৃহীত। এদের নিয়ে সমাজে অনেক কটুক্তিকর ভাষার চর্চা রয়েছে। জানা গেছে, ঋিশিদের মাঝে বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা প্রকট। সর্বক্ষেত্রে নারী ও শিশুরা বেশি অবহেলিত। এরা স্বাস্থ্যসেবা পায় না বললেই চলে, শিক্ষার হার খুবই কম। ভূমিহীনের সংখ্যাও বেশি। আর্থিক উন্নতির দিক থেকে এখনো পিছিয়ে আছে এ সম্প্রদায়। এরা এখনো অস্পৃশ্যতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। দিনের আলোতে ঋিশিরা উঁচু বর্ণের গ্রামে ঢুকতে পারে না, এমনকি হাটবাজার দোকানগুলোসহ শ্মশানে প্রবেশ করতে পারে না। বর্তমান ডিজিটাল যুগেও হস্তশিল্পের কাজে যাদের অবদান অনেক বেশি সেই ঋিশি সম্প্রদায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে। এদের মানোন্নয়নের জন্য দাতা সংস্থার সহযোগিতায় তালাস্থ বেসরকারি সংস্থা ভূমিজ ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন