লাইভ জার্নালের এক ব্লগারের একটি লেখা অনুবাদ করে দিয়েছেন শয়তানের চ্যালা।
বিবিসির প্রশ্ন: তোমার কাছে ধর্মীয় মতবাদের অর্থ কী?
আমি এভাবে আমার মতামত জানালাম।
আমার কাছে ধর্মীয় মতবাদের অর্থ কী? এর অর্থ কুসংস্কার, সহজেই বিশ্বাসপ্রবণতা এবং মুক্তচিন্তাকে বেঁধে রাখা।
ধর্মীয় মতবাদ এর অর্থ এমন কিছুতে বিশ্বাস করা, যার কোনো প্রমাণই নেই। এর অর্থ প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলোকে অস্বীকার করা। এর অর্থ জীবনকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে ঘিরে সাজানো, যা কখনোই পূরণ হবে না। এর অর্থ কাউকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা, তার কথামত জীবনযাপন করা, এমনকি যখন তার কথাগুলো নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে যায়, তখনও। এর অর্থ কিছু পুরনো রূপকথার বইয়ের ওপর ভিত্তি করে নিজের মতো করে থাকার স্বাধীনতাটুকু হারানো।
ধর্মীয় মতবাদ আসলেই ভয়ানক একটা জিনিস। বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, এটা না থাকলে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হত।
এই পৃথিবী বাস্তব। আমরা যা দেখি, যা অনুভব করি, এই যে চারপাশের অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ, সব মিলিয়ে এই পৃথিবীর বাস্তবতা। এর মাঝেও কিছু কায়েমী স্বার্থের মানুষ আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ধর্মীয় মতবাদ এমন একটা কিছু, যা আমরা দেখি না, শুনি না, যে কোনো তথ্যসূত্রমতে যার কোনো প্রমাণই পাওয়া যায় না এবং মাত্র একটি শব্দ দ্বারাই পুরো ব্যাপারটা ব্যাখা করা যায়: "মিথ্যা"। কারণ যখন কেউ তোমাকে সত্য বলে কিছু বুঝিয়ে দিল যেটার সত্যতার সামান্যতম প্রমাণ তোমার, তাদের বা কারো কাছেই নেই, তার অর্থ একটাই হতে পারে - তারা নিজেরাও তার সত্যতা সম্পর্কে কিছু জানে না। এবং যখন তুমি কিছু বলছ যা সত্য কি না নিজেই জান না, তার মানে তুমি যা করছ তা অসৎ।
আমাদের জীবন একটাই। যখন মারা যাব তখন আমরা কোথাও যাচ্ছি না, শুধুমাত্র আমাদের অস্ত্বিত্বটা শেষ হয়ে গেল। পুরো জগৎ এই অমোঘ নিয়ম মেনে চলে। যদি এটা সত্য না হয় তবে ঈশ্বর মিথ্যা বলছে। কারণ প্রকৃতি অজস্র প্রমাণে ভরপুর, যা ওপরের সত্যকে প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। (এটা কোন প্রমাণহীন মতবাদ না। যদি কেউ সামান্য প্রমাণও দিতে পারে যে এই নিয়মের ব্যতিক্রম আছে, তবে আমি তাকে স্বাগত জানাব এবং আমার সকল ধারণা পালটে ফেলব। যেমনটা নির্ধর্মীদের প্রবাদে আছে, অসাধারণ একটা দাবির জন্য দরকার অসাধারণ সাক্ষ্য-প্রমান)।
কোনো এক ব্যাক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান যখন আমাদের ধর্মের রীতিনীতিগুলো বোঝাতে আসে, ব্যাপারটা এমন হয়, তারা যেন আমাদের কাছে কিছু বিক্রির জন্য এসেছে। সাধারণত এই বিদ্বানরা (?) আমাদের দিয়ে কিছু উদ্ভট কাজ করাতে চায়, যার বিনিময়ে আমরা পরকালে ভাল কিছু পাব। এভাবেই সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ তাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় করছে, জীবনকে ধ্বংস করে ফেলছে, টাকা পয়সা জ্ঞানবুদ্ধি সবকিছুর অপব্যয় করছে, কিসের আশায়? ঘোড়ার ডিমের আশায়। কেন ঘোড়ার ডিম? কারণ এসব ধর্মের সামান্যতম অংশও যদি প্রমাণযোগ্য হত, তবে আর এসব মতবাদের প্রচার করার দরকার হত না।
এটা পিরামিড ক্রমবিন্যাসের মত। জীবনকে অযথাই নষ্ট করে দেয়, যা ঘৃণ্যতম অপরাধ।
আমি একজন নির্ধর্মী। আমি কোনো ধর্ম-ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। কোথাও কোনো ঈশ্বর নেই, ছিল না, থাকবেও না। ধর্মগুলো যেসব রীতিনীতিকে ঈশ্বরপ্রদত্ত বা কাউকে ঈশ্বর প্রেরিত পবিত্র মানুষ বলে দাবী করে, সব দাবীই মিথ্যা। মানুষদের ভুল পথে পরিচালনার লক্ষ্য তাদের হয়তো ছিলো না, তবে তারা নিজেরাই ভুলপথে পরিচালিত হয়েছে।
যারা ঈশ্বরের সাথে কথা হয়েছে বলে দাবী করে, তাদের মানসিক চিকিৎসা করা দরকার। যখন তুমি ঈশ্বরকে কিছু বলছ, সেটা প্রার্থনা। কিন্তু তুমি যখন ঈশ্বরের কথা শুনতে পারছ, সেটা সিজোফ্রেনিয়া ছাড়া আর কিছু না।
নাস্তিকতা কোনো বিশ্বাস না। এর মানে বিশ্বাসের অনুপস্থিতি। বিশ্বাস নয়, বরং ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অস্বীকার এবং প্রত্যাখান করাই এর ভিত্তি। এই জগৎকে পর্যবেক্ষণ এবং যুক্তির মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বুঝতে হলে এবং বিচার বোধবুদ্ধিসম্পন্ন যা হতে হয়, তা-ই নাস্তিকতা। বোধবুদ্ধিসম্পন্নের উল্টোটাই হল ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাস করা। বুদ্ধিহীনের মত ধর্মের বিভিন্ন মুখরোচক গাঁজাখুরী গল্পগুলো বিশ্বাস করা, যখন নিজের কাছেই এসব অবাস্তব লাগে।
এবং এটা চরম পাগলামী।
আমরা যদি এই পৃথিবী ধর্মের ছোবল থেকে মুক্ত করতে পারি, তবে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হবে, থাকবে না কোন হানাহানি, ভেদাভেদ, কুসংস্কার, উদ্ভট রীতিনীতি এবং ধর্মের নামে যেসব অজস্র সম্পদের অপচয়/অপব্যবহার করা হচ্ছে তারও সদ্বব্যহার করতে পারব।
আর ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাস? যেমনটা ক্যাথলিক প্রিস্ট ফাদার টেড বলেছেন, 'উচ্ছন্নে যাও ওসব নিয়ে।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন