আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আদমচরিত ০১৯


লিখেছেন মুখফোড়

১.

স্বর্গে জায়হুন নদীর তীরে বালুকাবেলায় আদম একটি তোয়ালা পাতিয়া বসিয়া অলস নেত্রে বিকিনি পরিহিতা স্বর্গবেবুশ্যেদের অবলোকন করিতেছিলো, আর মনে মনে ভাবিতেছিল, "বেওয়াচ" নামে একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক নির্মাণ করিলে কীরূপ হয়, এমন সময় শয়তান আসিয়া গলা খাঁকারি দিয়া কহিল, "ওহে মৃত্তিকানির্মিত আদম, কুশল কী?"

আদম আড়চোখে শয়তানকে এক পলক দেখিয়া আবার একটি বিশালবক্ষা গুরুনিতম্বিনী বিকিনিবসনার দিকে মনোযোগ স্থাপন করিয়া কহিল, "আরে শয়তান যে! তন্দুরস্তি মন্দুরস্তি ঠিক তো?"

শয়তান মৃদু হাস্যে কহিল, "ঘরে সুন্দরী স্ত্রী ফেলিয়া তুমি এই সুদূর নদীতীরে রশ্মিনির্মিত হাফনেংটু স্বর্গবালাদের দেখিয়া দর্শনকাম চরিতার্থ করিতেছ যে বড়?"

আদম দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিল, "ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকা না থাকা সমান হে শয়তান! নিষিদ্ধ ফলও আয়ত্বে আসে নাই, সেই হতভাগিনীও নাগালে আসে নাই। তাই আমার এই দুই চোখ আর বাম হাতখানিই ভরসা। হ্যাণ্ড-আই কোঅর্ডিনেশন করিয়াই দিনাতিপাত করিতেছি। পঞ্জরের অস্থিখানা পুরাই জলে গেল।"

শয়তান বলিল, "দিনরাত কুচিন্তা করিলে তোমার স্বাস্থ্যক্ষয় হইবে। খেলাধূলা কর না কেন?"

আদম বলিল, "কী খেলিব? সাতচারা না লুডু?"

শয়তান বলিল, "ক্রিকেট খেল না কেন?"

আদম মুখ বিকৃত করিয়া কহিল, "ক্রিকেট? ছোহ!"

শয়তান কহিল, "কেন হে? নন্দন কাননের পিচ তো বড়ই উপাদেয়। ব্যাটিং করিয়াও মজা, বোলিং করিয়াও আরাম।"

আদম কহিল, "গেল বৎসর হইতে ক্রিকেট খেলা পরিত্যাগ করিয়াছি হে শয়তান। ঈশ্বরের ন্যায় চরম বাটপারের বিপরীতে ক্রিকেট খেলিয়া শুধু শুধু ঘাম ঝরাইবার কোন অর্থ হয় না।"

শয়তান মিটিমিটি হাসিয়া চক্ষু মুদিয়া কহিল, "কেন, তিনি কী করিয়াছেন আবার? কোন অপদার্থকে প্রণাম করিতে বাধ্য করিয়াছেন নাকি?"

আদম বলিল, "স্পোর্টসম্যানশিপের বালাই নাই তাঁহার। খেলিতে নামিয়া কহেন, কুন, আর সব কিছু ঘটিয়া যায়। আম্পায়ারের নিকট নালিশ করিয়াছিলাম, এহেন চিট কোড ব্যবহার চলিবে না ভদ্রলোকের ক্রীড়ায়, কহিয়াছিলাম, হাঁ!"

শয়তান বলিল, "তত কিম তত কিম তত কিম?"

আদম ফুঁসিয়া উঠিয়া কহিল, "তাহার পর আর কী! আমরা একশত চুরাশি রান করিয়া অল আউট হইলাম। ঈশ্বর ব্যাট করিতে নামিয়া দেখিলেন সুবিধা করিতে পারিবেন না, তখন বৃষ্টি নামাইয়া দিলেন। আম্পায়ার অলপ্পেয়েটি আসিয়া কহিল, ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে আঁক কষিতে হইবে। হিসাব করিয়া দেখা গেল, বৃষ্টি থামিবার পর ঈশ্বরের দলকে দশ ওভারে দুই রান করিতে হয়।"

শয়তান মিটিমিটি হাসিতে হাসিতে বলিল, "বটে?"

আদম বলিল, "ঈশ্বর বাঁচিয়া থাকিতে আমি আর স্বর্গে ক্রিকেট খেলিতেছি না। তিনি অতিশয় চারশত কুড়ি!"

শয়তান পরমানন্দে চক্ষু বুঁজিয়া কহিল, "কোন দুশ্চিন্তা করিও না। বুদ্ধি শিখাইতেছি তোমাকে, দাঁড়াও।"

শয়তান অতঃপর আদমের কানে কানে একটি মন্ত্রণা দিল, আদমের চোখমুখ উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। তাহা কি মন্ত্রণা শুনিয়া, নাকি অদূরে বাতাসের তোড়ে একটি স্বর্গবালার ঘাগড়া উড়িয়া জঙ্ঘাদেশ উন্মোচিত হইয়া পড়ায়, তাহা বোঝা দায়।

২.

দুইদিন পর স্বর্গে ক্রিকেট মাঠে আদম দাপাইয়া বেড়াইতে লাগিল।

ঈশ্বর মাঠে নামিয়া গিবরিলকে কহিলেন, "ওহে গিবরিল, আদম এত উৎফুল্ল কেন? উহাকে তো আজও দশ উইকেটে হারাইব।"

গিবরিল বলিল, "আদম বলিয়াছে, আপনি ক্যাপ্টেন থাকিলে সে খেলিবে না। আপনি নাকি নয়-ছয় করিয়া থাকেন।"

ঈশ্বর খিলখিল করিয়া হাসিয়া কহিলেন, "ঠিকাছে। আদমকেই বল আমাদের দলের ক্যাপ্টেন বাছাই করিয়া দিতে। পাওয়ার-প্লে কাহাকে বলে, উহাকে রগে রগে সমঝাইয়া দিব।"

গিবরিল গিয়া আদমকে ঈশ্বরের বার্তা পৌঁছাইয়া দিল।

৩.

আদমের নির্বাচিত ক্যাপ্টেনের হাবভাব অদ্ভূত। সে বৌলার নির্বাচনে সবিশেষ মূর্খামির পরিচয় দিল, ফিল্ডিং সাজাইতে গিয়াও লেজেগোবরে করিল, ব্যাটিং করিতে নামিয়া ঈশ্বরকে রান আউট করাইয়া দিয়া নিজে অপরিণামদর্শীর মতো লং অনে ক্যাচ তুলিয়া দিয়া গটগট করিয়া মাঠ ত্যাগ করিল। ঈশ্বর আউট হইবার পর তাঁহার শিবিরে ধ্বস নামিল, সব কয়টি স্বর্গদূত দুই চার রান করিয়া আউট হইয়া গেল গুজরিলের ইয়র্কার আর মুখাইলের স্পিনের তোড়ে। ফলাফল, আদমের দল ১০২ রানে বিজয়ী।

ঈশ্বর ফুঁসিতে ফুঁসিতে আসিয়া গিবরিলকে ধরিলেন, "গিবরিল! এই হতচ্ছাড়া ক্যাপ্টেনটার নামধাম এক টুকরো পাথরে খোদাই করিয়া আমার দফতরে পাঠাও এই দণ্ডে! উহার ডানা ছাঁটিয়া ঘোল ঢালিয়া উটের পিঠে চড়াইয়া যদি গেহেন্নার ময়দানে সাত পাক না ঘুরাইয়াছি, আমার নাম ঈশ্বরই নহে!"

গিবরিল হুকুম তামিল করিল।

পরদিন ঈশ্বর দফতরে গিয়া প্রস্তরখণ্ডটি তুলিয়া দেখিলেন, তাহাতে লেজার মারিয়া মুক্তাক্ষরে খোদাই করা ক্যাপ্টেন স্বর্গদূতটির নাম।

আশরাফিল।

* লেখাটি অনেক পুরনো ও আগে সচলায়তন-এ প্রকাশিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন