শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

এতো অমানবিক আর যুক্তিহীন হওয়া একমাত্র ধার্মিকদের পক্ষেই সম্ভব


লিখেছেন মৌনতা

খবরটি পড়ে মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেলো। কিশোরী হেনা মৃতদেহের ছবিটি কি শুধু আমাদের একটু সহানুভুতি কড়াবে? হেনার মৃত্যু কি আমাদের থেকে এরচেয়ে বেশী আশা কিছু করে না? আমাদের কি কিছুই করার নেই???

খবরের সারসংক্ষেপ: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের দরিদ্র কৃষক দরবেশ খাঁর মেয়ে ১৪ বছরের কিশোরী হেনা ধর্ষণের ভয়ংকর শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা সইবার পর ৭০-৮০টি দোররার আঘাতের পর সে অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে হেনা মারা যায়।  (ছবি ও সংবাদ: প্রথম আলো)


হেনার মৃত্যুর পিছনে দায়ী:

১। ধর্ষক: হেনার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই মাহাবুব।

২। সালিসের ইসলামী জ্ঞানদাতাঃ চামটা আবুল বাশার মাদ্রাসার শিক্ষক সাইফুল ও গ্রামের মসজিদের ইমাম মফিজ উদ্দিন। 

৩। পাঁচ সদস্যের বিচারক বোর্ডঃ চামটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইদ্রিস ফকির, লতিফ মীরমালত, আক্কাস, ইয়াসিন ও জয়নাল মীরমালত। 

৪। ধর্ম।

বিচারকরা ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে ধর্ষণকারী ও ধর্ষণের শিকার কিশোরী উভয়কেই দোররা মারার রায় দেন। মাহাবুবকে ২০০ দোররা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আর কিশোরী হেনাকে ১০০ দোররা মারার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ধর্ষকের শাস্তি অর্ধেক কমিয়ে তাৎক্ষণিক সালিসকারীরা তাঁকে ১০০ দোররা মারেন। হেনা ৭০-৮০টি দোররার আঘাতের পর সে অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যায় এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায়।

কিশোরী হেনা মৃত্যুর আগে নিজেকে কি কারণে দূষেছিলো? দরিদ্র পিতার কন্যা সন্তান হিসেবে জন্ম নেয়ায়, নাকি তৃতীয় উন্নয়নশীল দেশে জন্ম নেয়ায় নাকি মুসলিম হিসেবে জন্ম নেবার হতাশায়!!! 

এবার ধর্ষণ বিষয়ে ইসলামের বক্তব্য শুনুন।


সুরা আননূর অনুসারে জেনাকারীদের শাস্তি:

ধরলাম যে আমরা না হয় দোযখে যাবো -- ধর্ম মানিনা। কিন্তু যারা ইসলাম ধর্ম পালন করে তারা কিভাবে এই অনাচারকে মেনে নেয়। আমি প্রথমেই খুঁজলাম ইসলামে এই নিয়ে কি বলেছে? 

Zina in Islam is extramarital sex and premarital sex. Islamic law prescribes punishments for Muslim men and women for the act of Zina. Punishment for adultery according to the Qur'an is noted in Surah 24 (An-Núr), Verse 2: ‘The woman and the man guilty of adultery or fornication,- flog each of them with a hundred stripes: Let not compassion move you in their case, in a matter prescribed by Allah, if ye believe in Allah and the Last Day: and let a party of the Believers witness their punishment.’

তারমানে দাঁড়ালো যে জেনার (বিবাহপূর্ব এবং বিবাহ বহিভুর্ত যৌন সম্পর্ক ) জন্য কুরানে এবং ইসলাম দোররা মারা নির্দেশ দিয়েছে। যদিও মানবতাবাদী দৃষ্টিভংগীতে এই শাস্তিরও কোনো মানে হয় না। তারপরো তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম, এই শাস্তি দেবার বিধান সমাজের শৃংখলা বজায় রাখতে তৎকালীন সময়ে দরকার ছিলো।

ধর্ষণ কিভাবে জেনার সমতূল্য হয়??? 

ধর্ষণের ব্যাপারে কি কিছুই বলা নেই আমাদের পূর্নাংগ জীবন বিধান কুরানে? সত্যি কথা হলো--- কুরানে নখ কাটার নিয়ম বলা আছে কিন্তু ধর্ষণ সম্পর্কে কিছুই বলা নাই। এই ব্যাপারে শুধু একটি হাদীস আছে। "Narrated Wa'il ibn Hujr: When a woman went out in the time of the Prophet (peace be upon him) for prayer, a man attacked her and overpowered (raped) her. …..he said: Stone him to death"। যাক নবীজীর জীবন ইতিহাসের কিছু ভালো উদাহরণের মাঝে এটি গণ্য হবে। 

কিন্তু শরীয়া বা ইসলামিক আইন ধর্ষণের ব্যাপারে মোটামুটি ভেল্কি দেখিয়েছে। শরীয়া আইন হলো কুরান বা হাদীসে যেসব বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা নেই সেইসব বিষয়ে ইসলামিক আলেমদের বানানো ইসলামিক আইন।

ইসলামী শরীয়া আইনে পারলে ধর্ষিতা প্রমান করে দেখাক:

শরীয়া আইনমতে, ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে তবে শুধুমাত্র কয়েকটি ক্ষেত্রে: 

১। ধর্ষক নিজে দোষ স্বীকার করলে।

২। চার জন সাবালক পুরুষের সামনে ধর্ষণ হলে।

আচ্ছা, তাহলে ইসলামী আইনে কিভাবে একজন ধর্ষিতা ন্যায়বিচার পাবে? এক্ষেত্রে এমনকি ডি.এন.এ. টেষ্টের ফলও শরীয়া আইন গ্রহণ করেনা। তাই প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই ধর্ষকের কোনো রকম শাস্তি হয় না। 

শরীয়া আইনমতে, ধর্ষণ (Zina Bil-Jabr) হলো জেনার (Zina) সমতুল্য !!!!

ধর্ষিতা যদি তার উপর করা নির্যাতনের বিচার চায় –উলটো তাকে জেনা করার দায়ে ইসলামী শরীয়া আইন অনুসারে তাকে দোররা মারার অথবা পাথর ছুড়ে মারার নির্দেশ দেয়া আছে। যদি ধর্ষিতা অন্তঃসত্তা হয়, তবে বাচ্চা হবার পর শাস্তি প্রযোজ্য হবে। আচ্ছা!!!!! কিভাবে ধর্ষণ জেনায় পরিনত হলো জানেন?? কারণ মেয়েটি বিবাহপূর্ব এবং বিবাহ বহিভুর্ত যৌন সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে কিন্তু ধর্ষিত হয়েছে তা শরীয়া আইন মতে প্রমান করতে পারেনি। তাই তাকে জেনা করার সমতুল্য শাস্তি পেতে হবে। কি অদ্ভুত যুক্তি!!!!

ইসলামী আইন সংশোধন 

বাংলাদেশে একসময় এসিড নিক্ষেপের ক্রেজ ছিলো। কঠোর আইন করে এটি এখন বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায়। এই দোররা মারা বা পাথর নিক্ষেপের প্রথাটিকে কি সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে না? ইসলামী আইন সংশোধনের কিছু প্রাসঙ্গিক উদাহরণঃ

১। কুরানের কোনো সংশোধন হয়নি কথাটি ভুল। হযরত উসমানের আমলে মহানবী মারা যাবার ৩০ বছর পর এর সংকলন হয়েছিলো। ৬০০ আলেম এবং আরো অনেকেই এর সং কলনের সাথে জড়িত। তারপরো মানুষ বিশ্বাস করে এটি আল্লাহর গ্রন্থ হিসেবে। মুসা নবী মহা চালাক ছিলেন। উনি ১০টি নীতি শুধু ঈশ্বর প্রদত্ত দাবী করেছেন। তাই এইরাতেই তা পাথরে খোদিত করতে পেরেছিলেন।

২। হযরত আলী সম্পত্তি বিষয়ক একটি গাণিতিক ভুল কুরান থেকে সংশোধন করেছেন। এটি কুরানের একমাত্র সংশোধন হসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বাস হয় না--- ইস্লামী আইনে দেখুন। গৃহকর্তা মারা যাবার পর সম্পত্তি বন্টনের কুরানের হিসেবে যোগ করলে লব হরের চেয়ে বেশী মানের ( লব> হর মানে একের চেয়ে বেশী) হয়ে যায়। যা পরে সংশোধন করা হয়।

৩। হিল্যা বিবাহ প্রথা পেসিডেন্ট আইয়ুব খান রদ করেন মুসলিম পারিবারিক আইন থেকে। ১৯৬১ সণে করা এই সংশোধনী বাংলাদেশে এখনো স্বীকৃত আইন।

Surat Al-Baqarah

Quran-2:230: And if he has divorced her [for the third time], then she is not lawful to him afterward until [after] she marries a husband other than him. And if the latter husband divorces her [or dies], there is no blame upon the woman and her former husband for returning to each other if they think that they can keep [within] the limits of Allah . These are the limits of Allah , which He makes clear to a people who know 

Sahi Bukhari: #564: Syed ibne ukair..Aisha (ra) narrated that wife of Rifakurzi told to the apostle of God that (because) my husband Rifa has divorced me I married another man named Abdur rahman ibne kurzi but I want to go back to my former husband. Then Prophet Muhammad (pbuh) told—if you want to go back to your former husband you must have sex with Abdur Rahman and then if he divorce you then you can go to your former husband, otherwise it can not happen. 

তথ্যসূত্র:

১। স্মরণবাবা
২। গুগুলাল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন