ইসলাম যথারীতি আবারও স্বমহিমায়। এবারে তার শিকার ১৪ বছরের বালিকা। বালিকার "অপরাধ" - সে ধর্ষিতা হয়েছিল। ইসলামী ন্যায় বিচারে শাস্তি হিসেবে তার "প্রাপ্য" ছিলো ১০০ দোররা। পুরো শাস্তিভোগ করতে তাকে হয়নি। তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে এবং পরে তার মৃত্যু হয়।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ থেকে কিয়দংশ:
১৪ বছরের কিশোরী হেনা ৭০-৮০টি দোররার আঘাতের পর মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তার আগে ছোট্ট এই মেয়েটি সয়েছে ধর্ষণের ভয়ংকর শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা। মৃত্যু তাকে হয়তো সব যন্ত্রণা আর এই কুৎসিত সমাজ থেকে মুক্তি দিয়েছে।
হেনার ফুফাতো বোনসহ আত্মীয়রা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের দরিদ্র কৃষক দরবেশ খাঁর মেয়ে হেনা। গত রোববার দিবাগত রাতে মেয়েটি প্রাকৃতিক কাজে ঘরের বাইরে যায়। এ সময় তার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই মাহাবুব (৪০) তার মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে পাশে তার পরিত্যক্ত একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। মেয়েটির চিৎকারে প্রথমে মাহাবুবের স্ত্রী ও ভাই বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁরা মেয়েটিকে উল্টো মারধর করেন। একপর্যায়ে হেনার বাবা-মা, ভাই-বোনসহ বাড়ির লোকজন বের হয় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে। হেনাদের ঘর থেকে মাহাবুবের ঘরের দূরত্ব ২০-২৫ গজ হবে বলে জানিয়েছে স্বজনেরা।
নড়িয়া থানা ও এলাকার সূত্র জানায়, ঘটনা জানাজানি হলে পরের দিন সোমবার চামটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইদ্রিস ফকিরের নেতৃত্বে সালিস বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিসে উপস্থিত হন চামটা আবুল বাশার মাদ্রাসার শিক্ষক সাইফুল ও গ্রামের মসজিদের ইমাম মফিজ উদ্দিন। ইদ্রিস ফকির, লতিফ মীরমালত, আক্কাস, ইয়াসিন ও জয়নাল মীরমালতের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের বিচারক বোর্ড গঠন করা হয়। তাঁরা ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে ধর্ষণকারী ও ধর্ষণের শিকার কিশোরী উভয়কেই দোররা মারার রায় দেন। মাহাবুবকে ২০০ দোররা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আর কিশোরী হেনাকে ১০০ দোররা মারার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ধর্ষকের শাস্তি অর্ধেক কমিয়ে তাৎক্ষণিক সালিসকারীরা তাঁকে ১০০ দোররা মারেন। হেনাকে ৭০-৮০টি দোররা মারার পর সে অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে হেনা মারা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে জানান, সোমবার রাতে জরুরি বিভাগে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরই হেনা মারা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন