লিখেছেন হৃদয়াকাশ
খ্রিষ্টানরা বলে থাকে, যীশুর পুনরুত্থান ঘটবে; আর কোনো কোনো মুসলমান বলে, যীশু অর্থাৎ ঈশা নবী হযরত মুহম্মদের উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হবেন। বিষয়টিকে যেভাবেই নিই না কেন, এর মূল কথা হচ্ছে, পৃথিবীতে আবার যীশুর আগমন ঘটবে। হযরত মুহম্মদের উম্মত হিসেবে যীশুর আগমনের কারণ হিসেবে মুসলমানগণ ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে যে, যীশু নাকি নবুয়ত প্রাপ্তির পর জানতে পারেন যে, তার পরে আর একজন নবীর আবির্ভাব ঘটবে; যিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ। এ কথা জানতে পেরেই নাকি যীশু সেই সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে আবার জন্মগ্রহণের জন্য আল্লার কাছে ফরিয়াদ করেন এবং আল্লা তার প্রার্থনা কবুলও করেন। এই যদি ঘটনা হয়, তাহলে মঞ্জুরিপ্রাপ্ত নবী হিসেবে যীশুর খাঁটিত্বের প্রমাণ মেলে; কারণ, তাঁর ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী একজন নবীর আবির্ভাব ঘটেছে যিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।
কিন্তু ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে যীশুর তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হযরত মুহম্মদের অবস্থানটা কোথায়? তাঁর ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী, ইমাম মাহদী নামে একজনের আবির্ভাব ঘটবে। ভালো কথা। কিন্তু ইমাম মাহদীর আবির্ভাব যে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘটবে বলে ইসলামে বলা হয়েছে, তা পৃথিবীতে আদৌও ঘটবে বলে মনে হয় না। যেমন অনেক কণ্ডিশনের মধ্যে বলা হয়েছে- (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠবে। (২) চাঁদটি দু'টুকরো হয়ে পরস্পর নিকটবর্তী থাকবে। (৩) পূর্ব দিকে একটি নক্ষত্র উঠবে যা চাঁদের মতো জ্বলজ্বলে। (৪) একটি আগুন দেখা যাবে পূর্ব দিকে যা সাতদিন অথবা তিনদিন থাকবে। (দ্রষ্টব্য: কে ইমাম মাহদী ( আঃ) - সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর)
এগুলোর একটু ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। সৌরজগত সম্পর্কে যাদের অল্প কিছু জ্ঞান আছে, তারাও জানে যে, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠা কখনোই সম্ভব নয়। এটা যদি কখনো ঘটে, তাহলে আমাদের এই সৌরজগত ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তারপর ইমাম মাহদীর কাণ্ডকারখানা দেখার জন্য পৃথিবীতে কেউ জীবিত থাকবে না।
চাঁদটি দু'টুকরো হয়ে পরস্পর নিকটবর্তী থাকবে - সৌরজগতের নিয়মানুযায়ী এটাও কখনো সম্ভব নয়। কারণ মহাজাগতিক কোনো কিছুর ধাক্কায় চাঁদ টুকরো টুকরো হতে পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে চাঁদের টুকরোগুলো পুরো সৌরজগত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে পৃথিবীতেও। সুতরাং দু'টুকরো হয়ে চাঁদের কাছাকাছি থাকার এবং তা পৃথিবী থেকে মনোরম দৃশ্য হিসেবে অবলোকন করার কোনো সুযোগ নেই।
পূর্ব দিকে একটি নক্ষত্র উঠবে যা চাঁদের মতো জ্বলজ্বলে - সৌরজগত সম্পর্কে যাদের জ্ঞান কম, একমাত্র তাদের পক্ষেই এরকম হাস্যকর কথা বলা সম্ভব। সূর্যই আমাদের সৌরজগতের একমাত্র নক্ষত্র এবং আমরা জানি, একেকটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করেই একেকটি সৌরজগত গঠিত হয়। পৃথিবীর আকাশে মিটমিট করে জ্বলা তারাসদৃশ যে নক্ষত্রগুলো আমরা দেখতে পাই, সেগুলো পৃথিবী থেকে হাজার হাজার কোটি মাইল দূরে। সেগুলোকে যদি পৃথিবীর আকাশে চাঁদের মতো দেখতে হয় তাহলে সেগুলোকে আমাদের সৌরজগতের অনেক কাছাকাছি আসতে হবে। এটা ঘটলে মহাবিশ্ব ওলটপালট হয়ে যাবে। এতে আমাদের সৌরজগত এবং পৃথিবীও ধ্বংস হয়ে যাবে।
একটি আগুন দেখা যাবে পূর্ব দিকে যা সাতদিন অথবা তিনদিন থাকবে - সাতদিন না তিন দিন থাকবে সেটাই যখন ইসলামী পণ্ডিতরা ঠিক মতো বলতে পারছে না, তখন তাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য হয় কীভাবে? তাছাড়া আগুন দেখা যাবে পূর্ব দিকে, এটা আকাশে না পৃথিবীতে? যদি পৃথিবীতে হয়, তাহলে সেই আগুন কোন দেশে লাগবে? আর যদি আকাশে হয়, তাহলে সেই আগুন লাগবে কীভাবে? কারণ আকাশ তো কোনো বস্তু নয়, আর বস্তু ছাড়া আগুন লাগাও তো সম্ভব নয়।
ইমাম মাহদীর আগমনের নিদর্শন স্বরূপ এরকম অনেক আজগুবি কথা - ‘সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর’ এর লেখা “কে ইমাম মাহদী ( আঃ)” নামক বইটিতে দেওয়া আছে। আমি কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করলাম মাত্র। কৌতূহলী পাঠকগণ চাইলে বইটি দেখে নিতে পারেন। তাহলেই বুঝবেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হিসেবে হযরত মুহম্মদের সফলতা বা গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু ?
অবশ্য "আল্লা সব পারে" - একথা বিশ্বাস করলে অন্য কথা। আসলে আল্লা কিন্তু কিছুই করতে পারে না। যেমন পারে না তার পেয়ারের দেশ সৌদি আরবকে ভারতের মতো সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বানাতে। তেমনি পারে না পৌত্তলিকতার দেশ ভারতকে মরুভূমিময় আরবের মতো বানাতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন