রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১১

ঘটমান ভয়াবহ বর্তমান


বাংলাদেশের এক পরিবারে ঘটমান ভয়াবহ এক ঘটনার কথা জানাচ্ছেন নিলয় নীল

ভালো মানুষ করে ভালো কাজ, খারাপ মানুষ করে খারাপ কাজ। কিন্তু ভালো মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নিতে প্রয়োজন হয় ধর্মের। 

Steven Weinberg-এর বলা এই অপ্রিয় কথাটির বাস্তবায়ন আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। আজ এর একটি উদাহরণ দেবো। 

একজন পিতা কি তার সন্তানের জীবনে হমকির কারণ হতে পারে? 
একজন ভাই কি তার ভাইয়ের ওপর বর্বর শারীরিক অত্যাচার করতে পারে? 
হ্যাঁ, পারে। পারে অনেকেই। ধর্মের কারণে। 

শাফাউল ইবনে মাসুদ (নিকনেম - ব্রাত্য সাজ) নামের এই ছেলেটির অপরাধ হলো, সে প্রচলিত চিন্তাধারার বাইরে চিন্তা করে। সে প্রশ্ন করে। উত্তর চায়। যখন পায় না, তখন হতাশ হয়। আস্তে আস্তে তার মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসার ঘটে। তার পরিবার এটা সহ্য করতে পারছে না। তাকে জোর করে ধর্মবিশ্বাসী বানাতে চায় তার বাবা-মা। 

তারা ছেলেকে বন্দী করে জোর করে বাধ্য করে নামাজ পড়তে, প্রতিদিন কোরান শরীফ পড়তে। কিন্তু ব্রাত্য সাজের ব্যক্তিগত দর্শন হলো: সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়, সবকিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা যায় না। 

যখন তাকে কোনোভাবেই ইসলামের পথে আনা গেল না, তখন তার ওপরে নেমে এলো নির্যাতন। আর এই নির্যাতনের আসল নায়ক সাজ-এর খালাতো ভাই। সাজ-এর বাবা-মাকে তিনিই সকল প্রকার ইসলামী বুদ্ধি প্রদান করেন। এখন তাদের সকল প্রচেষ্টা, কীভাবে তাদের ছেলেকে ইসলামের পথে নিয়ে আসা যায়। 

তার বাবার ধারণা, ছেলে নাস্তিকদের নিষিদ্ধ দলের মধ্যে ঢুকে গেছে। এই দলটি ভয়ানক খারাপ। জেএমবি বা আল-কায়েদার চেয়েও। এই দলে ঢোকানোর অন্যতম হোতা - সাজ-এর প্রাইভেট টিউটর রঞ্জন। সব দোষই তার। সে-ই তার ছেলেকে নাস্তিক বানিয়েছে! সাজ-এর আরেকটা অপরাধ আছে। সে একটা নাস্তিক মেয়েকে ভালোবাসে। ওই মেয়ের সঙ্গে রিলেশন চলতে থাকলে তার ছেলে নষ্ট হয়ে যাবে। 

ইসলাম ধর্মমতে, ইসলাম ত্যাগকারীদের হত্যা করা উচিত। একজন প্রকৃত ইসলামপ্রেমিক হত্যাই করে। এখন প্রশ্ন জাগে, সাজ-এর পরিবার তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হত্যা করবে? একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে দু'ভাবে: ১. শারীরিকভাবে, ২. মানসিকভাবে। সাজ-এর পরিবার সাজকে শারীরিকভাবে হত্যা না করলেও তাকে মানসিকভাবে ঠিকই হত্যা করে চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে তার মানসিক মৃত্যু অনিবার্য। মানুষ কি আসলেই স্বাধীন? ধর্ম আর কতোদিন মানুষকে পরাধীন করে রাখবে?

পুনশ্চ. আমার লেখায় হয়তো আবেগের প্রাবল্য আছে, কারণ আমি এটা লিখেছি ঘোরের মধ্যে। আবেগটুকু বাদ দিয়েও পাঠকেরা মূল বক্তব্যটির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারবেন বলে আশা করি। সাজ আজকে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। সে পালিয়ে বের হয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে। পরে বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু শর্তসাপেক্ষে বাসায় ফিরেছে। তার সমস্ত ঘটনা আমি তার নিজের মুখ থেকে শুনেছি। 

আপডেট ১: সাজ-এর বান্ধবী আমাকে ফোন করেছিল। সাজ-এর পরিবার, বিশেষ করে তার খালাতো ভাই, তাকে অমানুষিকভাবে মেরেছে। সাজ বলেছে, তার হাত ভেঙে গেছে। মারের কারণ ছিলো, সে বাসা থেকে পালিয়ে বান্ধবী ও আমাদের সঙ্গে দেখা করেছে। খালাতো ভাইটি সাজ-এর বান্ধবীকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। 

আপডেট ২: আজকে (২৩ এপ্রিল) প্রিন্স প্রিজম নামে সাজ-এর এক বন্ধু সাজ-এর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল তার খালার বাসায়। সেখানেই সে এখন বন্দী হয়ে আছে। প্রিন্স ছিলো একা। সাজ-এর কয়েক খালা, মামা ও খালাতো ভাই তার সঙ্গে প্রথমে খারাপ ব্যবহার করে। তবে প্রিন্স মাথা ঠাণ্ডা রেখে ব্যাপারটা হ্যান্ডল করেছে। সাজ-এর খালার পরিবার বলেছে, বান্ধবীর সঙ্গে সাজের সম্পর্ক তারা প্রথমে মেনে নিয়েছিল, তবে যখন জানতে পারে, মেয়েটি নাস্তিক, তখন তারা এতে ঘোর আপত্তি জানায়। 

এখন সাজকে গৃহবন্দী রাখা হবে। মোবাইল, কম্পিউটার কিছুই দেয়া হবে না। তারা এভাবে তাকে রাখবে এক বছর। তাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। এবং তারা আশা করছে, ধীরে ধীরে সাজ-এর মধ্যে ধর্মভাব এসে যাবে (না এলে ওষুধ হিসেবে মার প্রয়োগ করা হবে)। তার পরিবারের ধারণা, এক বছরের মধ্যে তাকে তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। 

এক্ষেত্রে বলে রাখা উচিত, সাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। তাই পড়াশোনায় ছেদ পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তর দেয়া হয়, পড়াশোনায় এক বছর বিরতি দিলে কোনো সমস্যা হবে না। নাস্তিকগোষ্ঠী বা তাদের সংগঠনের সঙ্গে সাজ-এর যোগাযোগের সমস্ত ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে তারা এবং এ-ও বলেছে, কোনো বা কয়েকজন নাস্তিক সাজকে শয়তানি বুদ্ধি দিলে বা সাহায্য প্রদান করলে তাকে বা তাদেরকে হত্যা করতে তারা পিছপা হবে না।

তার পরিবারের বক্তব্যের কতোটা সত্য বা কতোটা অতিরঞ্জন, তা নির্ধারণ করার উপায় আছে কি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন