লিখেছেন শুভাশিস হাওলাদার
বিবাহের আসরে দেখতে পাই, প্রথমে বরকে চেয়ারে বসিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে ভূত সাজানো হয়। পুরোহিতরা দাবী করেন, এটা নাকি শাস্ত্রে আছে। পূর্বপুরুষরা করে এসেছে, তাই করা প্রয়োজন। লক্ষণীয় যে, পঞ্চাশ বছর আগে এই ভূত সাজানো হত পিঁড়িতে বসিয়ে। আজকাল চেয়ারে বসানো হচ্ছে। অথচ কোনো শাস্ত্রে চেয়ারের নাম পর্যন্ত উল্লেখ নাই। আজকালকার শিক্ষিত বররাও এই মূর্খ সংস্কারের হাত থেকে রেহাই পায় না। তাদেরকেও ভূত সাজতে হয়।
পুরাণে এর কারণ হিসেবে যা উল্লেখ আছে তা এরকম:
দক্ষরাজার পুত্রেষ্টি যজ্ঞে কন্যা উমা ও জামাতা মহেশ্বর নিমন্ত্রন পাননি। উমা পিতার কাছে এর কারন জানতে চাইলে দক্ষরাজ তার কন্যাকে বলেন আমার এ যজ্ঞে সব ভদ্রলোকদের আগমন হবে। সেখানে একজন সাপুরে ভাংখোড় উন্মাদকে নিমন্ত্রণ করে সভার অমর্যাদা করতে চাই না।
মহেশ্বরী পিতার মুখে পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে পিতার সম্মুখে ক্রোধে ও দুঃখে প্রানত্যাগ করেন। মহেশ্বরী পরে হিমালয়ের কন্যা পার্বতী নামে আবার জন্মগ্রহন করলে নারদমুনি মহেশ্বরের সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে। নারদমুনি হিমালয়কে জানান বিবাহের পূর্বে বিবাহ আসরে কন্যাকে ৭ বার বর প্রদক্ষিন করে প্রতিবার নমস্কার করতে হয়। একে তো পার্বতী ৮ বছরের নাবালিকা কন্যা আর মহেশ্বরের যা চেহারা বৃদ্ধ মাথায় জটা ব্যাঘ্র চর্ম পরিহিত গলায় ও কোমরে সাপ জড়ানো হাতে ত্রিশূল শিঙ্গা ও ডমরু। এই বিদঘুটে বিটকেল চেহারা দেখে সপ্ত প্রদক্ষিনকালে পার্বতী যাতে ভীতা না হয়, তজ্জন্য মহেশ্বরকে বস্ত্র দ্বারা ঢেকে রাখো। তাই মহেশ্বরকে ভূত সাজানো হয়েছিল।
অথচ আজকাল কোন শিক্ষিত বা অশিক্ষিত বরের চেহারা এমন থাকে না অথবা ছোট্ট নাবালিকার সাথে স্বর্গের টিকিট কাটা বৃদ্ধের বিবাহও হয় না। তাহলে অযথা এই উদ্ভট অনুষ্ঠান শিক্ষিত সমাজে ধরে রাখাটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা অবশ্যই বিবেচনার বিষয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন