লিখেছেন থাবা বাবা
(একটা অতি পুরোন ঘটনা... আমি শুধু নাম-ধাম বদলে সাজিয়ে লিখে ফেলেছি। পাত্র-পাত্রী আমার মামা ও মামাতো ভাই, কাল ২০ বছর অতীতে!)
হাবিব সাহেব বাজারে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হলো তার দুই বছরের ছেলে ইমরু। ইমরু দেখলেই তার পিছু পিছু দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে। তাই তিনি খুব সাবধানে ছেলেকে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হলেন। ঘন্টাদেড়েক পর হাবিব সাহেব যখন বাজারের থলে হাতে বাসায় ফিরিলেন, তার স্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন, “ইমরুকে কোথায় রেখে এলে?”
হাবিব সাহেব প্রথমে বুঝলেন না, জিজ্ঞেস করলেন “কোথায় রেখে আসবো মানে, ওকে তো বাসায় রেখে গেলাম।"
যেটা হয়েছে, সেটা হলো হাবিব সাহেব বেরিয়ে যাবার পর ইমরু দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তাঁর স্ত্রী রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলেন বলে দেখেননি, হাবিব সাহেব একা গেছেন, নাকি ছেলেকে নিয়ে। তিনি ঘরে ফিরে দেখলেন ইমরু নেই, ভাবলেন ছেলে বাপের সাথেই গিয়েছে।
প্রথমে কিছুক্ষণ ঘরেই খোঁজাখুঁজি চললো, তারপর ইমরু ঘরে নেই বুঝে হাবিব সাহেব বেরিয়ে পড়লেন বাইরে খুঁজতে। ছেলে হারাবে - সেই চিন্তা খুব একটা নেই তাঁর। থাকেন সরকারী কলোনীতে। বিশাল দেয়াল ঘেরা কম্পাউন্ড। মানুষজনও সবাই মোটামুটি চেনা, কেউ না কেউ দিয়ে যাবেই। কিন্তু আধাঘন্টা ধরে খুঁজেও ইমরুকে পাওয়া গেল না। আশেপাশে সব পরিচিত বাসা, দোকান, সব দেখা শেষ। কিন্তু ইমরু কোথাও যায়নি। একটু দিশেহারা বোধ করলেন তিনি হঠাৎ করে। কোথাও খুঁজে না পেয়ে ভাবছেন থানায় যাবেন, নাকি একটা মাইক ভাড়া করে এলাকায় মাইকিং করবেন, এমন সময় একজন পরিচিত মুখ তাকে সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় হঠাৎ বললেন “আপনার ছেলেটা তো খুব ডানপিটে ভাই...”
“কেন?”
“এই তো ঘন্টা খানেক আগে দেখলাম কলোনীর গেট দিয়ে বেরিয়ে ঐ মসজিদের সামনের রাস্তায় খেলছে। এতো ছোট বাচ্চা, বাসায় একটু দেখে রাখবেন না ভাই?”
হাবিব সাহেব একটু শুকনো হেসে তার সাথে দু এক কথায় হেঁ হেঁ করে ছুটলেন কলোনীর বাইরের মসজিদের দিকে। বেশ বড় মসজিদ, সামনের চত্বরটাই বিশাল। মসজিদে ঢুকেই দেখেন, শান বাঁধানো চত্বরের এক কোনায় একটা খুঁটির পাশে ইমরুকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে মসজিদের ঈমাম সাহেব। ইমরুর একটু ঠাণ্ডার ধাত আছে, একটু গরম বা ঠাণ্ডাতেই সর্দি লেগে যায়। আর এই লোকটা তাকে এই ঠা-ঠা রোদ্দুর মাথায় নিয়ে খালি পায়ে এই আগুন গরম সিমেন্টের চত্বরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে! হুট করেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল হাবিব সাহেবের। এই লোকটার পেছনে নামাজ পরার সময় তার যে নুরানী চেহারা দেখা যায়, তার ছিটেফোঁটাও দেখলেন না এখন। কেমন একটা নিষ্ঠুর চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে, একটা কুৎসিত প্রাণীর দিকে তাকিয়ে আছে। হাবিব সাহেব কাছে এগিয়ে যেতেই ঈমাম সাহেব খেঁকিয়ে উঠলেন... “এই হোঁলা আইন্নের?”
“জ্বী হুজুর, আমারই ছেলে।”
“হেঁত্তি মসসিদের মইদ্দ্যে আঁই মুতি দিছে।”
হাবিব সাহেব বুঝলেন ইমরু মসজিদে এসে বাথরুম করে দিয়েছে বলে তাকে এই রোদে আটকে রাখা হয়েছে। বললেন, “হুজুর এখন তাহলে কি করবো?"
“কাফফারা দেওন লাইগবো।”
“কতো দিতে হবে হুজুর?”
“হইনছাইশ টিঁয়া’।
হাবিব সাহেব পকেট হাতড়ে দেখেন পঞ্চাশ টাকা নেই তার কাছে। শেষে একটা নতুন চকচকে একশ টাকার নোট হুজুরের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন। হুজুর টাকাটা নিয়ে পকেটে ভরে নিলেন। তার পর শুরু হল তার নর্তন-কুর্দন। ক্ষণে এ পকেট হাতড়ান, তো ক্ষণে ও পকেট খোঁজেন... বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুজির পর চোখ মুখ শক্ত করে বললেন:
“হোঁলারে আবার হাঁডায় দিয়েন!”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন