আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১১

অপচয়


লিখেছেন থাবা বাবা 

এক নাস্তিকের সমাধিলিপি পোস্টটা পড়ে আমার নিজের একটা লেখার কথা মনে পড়ে গেল। প্রায় বছরখানেক আগের লেখা। 

ছোটবেলার একটা কথা দিয়ে শুরু করি! আমি তখন বেশ ছোট। মা'র চাকরির সুবাদে সারাদিন বাসায় দাদীর কাছে থাকতাম। দাদীই জোর করে ধরে-বেঁধে খাওয়াতেন। এক একটা লোকমা বানিয়ে এটা হাঁসের ডিম ওটা বকের ডিম ইত্যাদি বলে বলে খাওয়ানোর কথা এখনো মনে আছে। আমার পিচ্চি ভাগ্নিকে যখন তার দাদী এখন সেভবেই খাওয়ায় আমার নিজের দাদীর কথা মনে পড়ে যায়। সে কথা থাক!

একটু বড় হয়ে যখন নিজের হাতে খেতে শিখলাম, আমাকে তখন থালায় করে নিজের হাতে খেতে দেয়া শুরু হলো তখন খেতে বসে থালা থেকে ভাত মুখে যাবার থেকে মেঝেতে বা টেবিলেই বেশী ছড়াতো। সেটা দেখে দাদী কী করতেন মনে নেই। তবে আরো একটু বড় হবার পর মানে আমার মধ্যে খানিকটা ধর্মীয় সংস্কার ইনজেক্ট করার পর এরকম ভাত পড়লে দাদীর কাছে যে বকুনিটা শুনতে হতো সেটা হলো ভাত নষ্ট করতে হয় না। ভাত নষ্ট করলে প্রতিটা ভাতের দানার জন্য দোজকে সত্তুরটা সাপ এসে আমাকে কামড়াবে। প্রশ্ন করতাম "কেন"? দাদী খুব ধৈর্যের সাথে উত্তর দিতেন "দানা নষ্ট করতে হয় না। দানা আল্লার দান, তাই দানা নষ্ট করলে আল্লার গুনাহ দেন", গুনাহ শব্দের অর্থ তখন মোটামুটি বুঝতে শিখেছি। আর দাদীর কাছে কাসাসুল আম্বিয়ায়ার দোজকের গল্প শুনে ভয় ভালই হতো। তাই চেষ্টা করতাম কতো কম সাপের কামড় খাওয়া যায়। 

মোটামুটি ৭০টা সাপের কামড়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর আমার মাথায় প্রশ্ন আসা শুরু করলো। আচ্ছা, রুটি নষ্ট করলে কয়টা সাপে কামড়াবে? রুটি হয় আটা থেকে, আটা যে গম থেকে হয় আর গম যে "দানা" সেটা আমার জানা ছিল না তখন। তাই দাদীকে জ্বালাতাম যে, এক টুকরা রুটি নষ্ট করলে কয়টা সাপে কামড়াবে বলে। দাদী উত্তর দিতে পারতেন না। শুধু রুটি না দুধ, কলা, সুজি, ইত্যাদি যে সব জিনিস দানা না সেগুলো নষ্ট করলে কতোগুলো সাপে কামড়াবে! দাদী প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে দাদী রেগে যেতেন এতো প্রশ্ন করতাম বলে! যে কথা বলে আমার অন্যান্য ভাই-বোনদের ঠাণ্ডা করতে পারতেন সেটা বলে আমাকে ঠান্ডা করা যাচ্ছে না দেখে শেষে বিরক্ত হয়ে আসল কথাটা বলতেন যে খাবার নষ্ট করা গুনাহর কাজ, অন্যায়! তবে বড় হতে হতে এই শিক্ষাটা দাদীর কাছে পেয়েছি যে, অপচয় করা অন্যায়!

অপচয়কারীকে ইসলামে শয়তানের ভাই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই কারণ আমরা কোনো জিনিস নষ্ট করি না। এমনকি আমাদের গৃহপালিত ভক্ষ্য পশু-পাখিগুলোও অপচয় রোধের হাত থেকে রেহাই পায় না। আমাদের বাড়িতেই একটা বুড়ো গরু ছিল। এক দিন শুনলাম সেটাকে জবাই করা হবে। কারণ সেটা বুড়ো হয়ে গিয়েছে, কদিন পরে সে এমনিতেই মরে যাবে। তাই তাকে মেরে খেয়ে ফেলা হবে। একটা গৃহপালিত গরুও স্বাভাবিকভাবে মরতে পারে না! কারণ মরা গরু খাওয়া হারাম! আর সেটা খুব বড় একটা অপচয়!

আমরা অপচয় রোধে কী না করি! ইদানীং বিদ্যুৎ ঘাটতির দিনে সরকার পর্যন্ত বিদ্যুৎ অপচয় রোধে অনুরোধ জারি করেছে যে, আমরা যেন সন্ধ্যা ছ'টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত এয়ার-কন্ডিশান না চালাই। তাতে বিদ্যুৎ অপচয় হয়! এরকম অপচয়রোধক অনেক পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি, নিচ্ছি, নিতেই থাকবো। আর সেটা যে কোনো ধর্মীয় দিক দিয়েও শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের সমাজ-সংসার-ধর্ম প্রতিনিয়ত আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে যে, আমরা যাতে অপচয় না করি।

কিন্তু এত্তো এত্তো শিক্ষা পাবার পরেও আমাদের অপচয়ের হাত খাট হচ্ছে না। সবচেয়ে মিতব্যায়ী মানুষটাও তার মৃত্যুর পর অপচয়ের মচ্ছবে লেগে যান।

মানুষের মৃত্যুর পর তার দেহটা নষ্ট করে ফেলা হয়। কেউ মাটি চাপা দেয়, কেউ আগুনে পোড়ায়। কিন্তু মোদ্দা কথা হলো দেহটা নষ্ট হয়ে যায়। পার্শিয়ান অগ্নি উপাসকদের সম্পর্কে যখন প্রথম পড়ি তখন জেনেছিলাম যে তারা মৃত্যুর পর দেহ কবরেও দেয় না অথবা আগুনেও পোড়ায় না। তারা একটা উঁচু জায়গায় মৃতদেহটা রেখে দিয়ে আসে। যাতে দেহটা শকুনে খেয়ে ফেলতে পারে! একটা কাজে তো লাগে, কিছু প্রাণী খাদ্য পায়!

এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নত। মানুষে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা কোনো ব্যাপারই না, যেটা কয়েক দশক আগেও কঠিন ছিল। এখন অহরহই শুনি চক্ষুদান, কিডনীদানের ঘটনা। জীবিত মানুষের থেকে তো সেটা নেয়াই যায়, এখন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কল্যাণে মৃত মানুষের শরীর থেকেও অঙ্গ নেয়া যায় সহজেই।

পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত মানুষ রোগে-শোকে ভুগে মরে যাচ্ছে। তাদের একটা বড় অংশ আছে, যাদের শরীরে একজন সুস্থ মানুষের সুস্থ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করলেই বেঁচে যেতে পারে। অনেক দৃষ্টিহীন আছেন যাদের চোখে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করলেই দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতেন। কিডনী ফেইল করে ভুগছে মানুষ। একটা সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করলে হয়তো বেঁচে যেতে পারে। সেভাবে হার্ট, লিভারও প্রতিস্থাপন করা যায়, চিন্তা করা যায় কতোজন মানুষ আবার সুস্থ হয়ে বেঁচে যেতে পারে শুধু একটি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে?

মানুষের ইনার অর্গান ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব না। তাই ইনার অর্গান ফেইল করলে বা সেটা ঠিক মতো না চললে মানুষে মৃত্যু প্রায় অবধারিত। তখনই সেই অর্গান বা অঙ্গের প্রতিস্থাপনের প্রশ্নটা আসে। কিন্তু যার কাছ থেকে সেই অঙ্গটা নেয়া হবে তার কী হবে? সে মানুষটা তো তার দান করে দেয়া অঙ্গটার অভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হবে! তাই একজন মানুষ তার একমাত্র অঙ্গ দান করতে পারে না তার নিজের বেঁচে থাকার জন্য। কিডনী দান করা যায়, বা চক্ষু দান করা যায় কারণ একটা দান করলেও আরেকটা তো থাকে।

জীবিত মানুষের কাছ থেকে অঙ্গ নেয়া যায় না কারণ মানুষটির তো বেঁচে থাকার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গটির প্রয়োজন। কিন্তু একজন মৃত মানুষ? তার তো আর শরীরের দরকার নেই, অঙ্গের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তার জন্য! তার কাছ থেকে তো সহজেই অর্গান নিয়ে একজন অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ সুস্থ হয়ে উঠে বেঁচে থাকতে পারে, এবং আজকের দিনে সেটা সম্ভব।

তাই মৃত্যুর পর দেহটাকে মাটি চাপা দিয়ে বা আগুনে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করে দেয়া একটা বিশাল অপচয়। দেহটাকে ধ্বংস না করে সেটাকে মানবকল্যানে ব্যবহার করা যায়। দেহটাকে ধ্বংস করে না দিয়ে তার অঙ্গগুলো দান করে দিলে আরো কয়েকজন মানুষ সুস্থ হয়ে বেঁচে উঠতে পারে!

আমরা আজকাল রিসাইক্লিং এর কথা বলি। কিন্তু নিজেকে রিসাইকল করার কথা বলি না। সারাটা জীবন অপচয় রোধে আন্দোলন করে মৃত্যুর মাধ্যমে সবচেয়ে বড় অপচয়টা করি! আমরা একবারও ভাবি না আমার মৃতদেহ দাহ না করে বা কবর না দিয়ে দেহটা মানবকল্যানে দান করে দিলে কমপক্ষে একটা মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেয়া যেত! ভুলে যাই "জীবে দয়া করে যেই জন/সেই জন সেবিছে ঈশ্বর (!!!!!!)"!

আমরা আসলেই শয়তানের ভাই! নইলে সুযোগ থাকতেও অসংখ্য মানুষের জীবন না বাঁচিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেই!!!

* থাবা বাবার লেখাটির জন্য উপযুক্ত ছবি খুঁজতে গিয়ে কিছু চমৎকার পোস্টার পাওয়া গেল নানান আকারের। সেসব জুড়ে দিচ্ছি। 









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন