প্রথম আলোয় প্রকাশিত।
মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ধর্মভীরু মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মাহে রমজানের রোজার ভূমিকা অপরিসীম। রোজাদার ব্যক্তি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ভয়ে পাপাচার, অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, পরচর্চা, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহসহ সব ধরনের মন্দ কাজ পরিহার করে আত্মশুদ্ধি লাভ করেন। (ভালো হইতে চাইলে ইচ্ছা আর বিবেক দরকার। আল্লাহর ভয়ে ভালো হওয়াটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছু না। এইগুলারে কওয়া যায় - ভয়ে চরিত্রবান।) রোজা অবস্থায় কেউ যদি রোজাদার ব্যক্তিকে গালিগালাজ, ঝগড়া-বিবাদ, অশুভ ও ক্ষতিকর দুষ্কর্মে প্ররোচিত করে, তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী তিনি যেন বলে দেন, ‘আমি রোজাদার।’
...
রোজাদার ব্যক্তি রোজা অবস্থায় কখনো মিথ্যা কথা, পাপকাজ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, জবরদখল, সন্ত্রাস, বোমাবাজি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারসহ সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, ধূমপান, মাদকদ্রব্য ও জুয়াখেলা—এসব অনৈতিক ও অপকর্মে লিপ্ত হন না। রোজা রেখে কোনো কিছু খাওয়া বা কোনো ধরনের বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ কাজকর্ম করা যাবে না। (অর্থাৎ রমজান ছাড়া বাকি এগারো মাস এসব অনৈতিক ও অপকর্ম করলে অসুবিধা নাই? যা খারাপ, তা সব সময়ই খারাপ। একটা মাসে তা বিশেষ খারাপ হইতে পারে না।) কারণ, অন্য কেউ না দেখলেও আল্লাহ মানুষের সব কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এখানেই রোজার সঙ্গে অন্যান্য ইবাদতের পার্থক্য রয়েছে। (পার্থক্যটা বুঝি নাই। নাকি অন্যান্য ইবাদতের সময় আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করে না?)
...
পারিবারিক জীবনে মাহে রমজানের রোজার গুরুত্ব ও অপরিসীম প্রভাব রয়েছে। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসন্ততি—সবাই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। রোজাদার ব্যক্তি পরিবারের ছোট-বড় কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন না, সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন। মাহে রমজানে রোজা রেখে পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যদি অসদাচরণ করা হয় এবং তাদের প্রতি কটুবাক্য, জুলুম, নির্যাতন, গালিগালাজ করা হয়, তাহলে রোজাদারদের পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহ লেগে থাকতে পারে। (আবারও ওই একই কথা জিগাইতে হয়: বাকি মাসগুলায় এইসব করলে ক্ষতি নাই?) এতে পরিবারে যেমন অশান্তি দেখা দিতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলাও অসন্তুষ্ট হন।
রমজান মাসে পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে সেহির খাওয়ার পরম আনন্দ () রোজার অনন্য বৈশিষ্ট্য। মাহে রমজানে পাড়া-মহল্লায় গভীর রাতে যখন সেহির খাওয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ লোকেরা সপরিবারে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, তখন মুসলমানরা পরস্পর সমাজের সমমানের রোজাদার গোষ্ঠী বলে ভাবতে সুযোগ পান। ভোরের স্নিগ্ধতার নির্জন পরিবেশে ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের ছোট-বড় সব রোজাদার ব্যক্তির জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় (সব রোজাদার মানে? মেয়েরাও যায় নাকি? ওহ, আমারই ভুল। মেয়েরা তো ধর্তব্য নয়। কারণ ইসলামে মেয়েদেরকে দয়া করে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসেবে গণ্য করে মহানুভবতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। ভুলে গিয়েছিলাম।) এই রমজানুল মোবারকে।
...
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন