প্রথম আলোয় প্রকাশিত।
মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মাহে রমজান উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও তাঁর প্রতিশ্রুত বেহেশত লাভের সওগাত। ‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা তথা রোজাব্রত পালনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ণ জীবন যাপন করে এবং ষড়িরপুকে দমন করে () মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় () বলে এই মহিমান্বিত মাসের নাম রমজান। অসাধারণ ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাহে রমজানে সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের ঈমানি চেতনা সুদৃঢ় হয়, তাকওয়া বা আল্লাহভীতির নিদর্শন প্রকাশ পায় এবং অত্যন্ত গভীরভাবে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি সঞ্চারিত হয়।
...
বস্তুত, মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মোবারক, রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এই মহান মাসে পবিত্র কোরআন মজিদ নাজিল হয়েছে ()। রমজান মাসের সম্মানজনক মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগত হয় তখন আকাশ বা বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা বন্ধ করা হয় না, আর দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা খোলা হয় না, আর শয়তানকে জিঞ্জিরে বন্দী করা হয়।’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজা)
...
শাবান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতিমূলক মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাবান মাসের সমাপনান্তে মাহে রমজানের এক ফালি রুপালি চাঁদ পশ্চিম আকাশে উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন একজন মুমিন মুসলমান মনে ইস্পাতকঠিন ঈমান ও ব্যাপক উৎসাহ-আগ্রহভরে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে নিয়ত করে ফেলেন ও রোজা আদায়ে মশগুল হয়ে যান, তখনই তিনি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতের চাদর দ্বারা আবৃত () হয়ে পড়েন। ফলে ইহজগতের শান্তি ও পারলৌকিক কল্যাণ ও মুক্তির সনদ তাঁর জন্য ঘোষণা করা হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি ভালো কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে দেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন: কিন্তু রোজার ব্যাপারে এর ব্যতিক্রম হবে। কেননা বান্দা আমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য রোজা রেখেছে এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। সে তো আমার জন্যই কামনা-বাসনা ও খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।’ (মুসলিম)
মাহে রমজান এমন এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন এবং এ মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম) অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মত যদি মাহে রমজানের গুরুত্ব বুঝত, তাহলে সারা বছর রমজান কামনা করত।’ () সুতরাং এ শ্রেষ্ঠতম মাসে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপানে ধাবিত হওয়ার প্রচেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য।
...
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন