আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১

সনাতনী কামিনী - ০৪

(হিন্দুধর্মে নারীর স্থান বিষয়ক তথ্যবহুল এই সিরিজের এটাই সর্বশেষ পর্ব। পুরো লেখাটিকে ই-বুক আকারে প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে। বাস্তবায়নে আছেন কোনও কামেল ভাই?)

লিখেছেন নিলয় নীল

সনাতনী কামিনী - ০১সনাতনী কামিনী - ০২, সনাতনী কামিনী - ০৩

শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী--
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
...
লজ্জা দিয়ে, সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ,
তোমারে দুর্লভ করি করেছে গোপন।
পড়েছে তোমার 'পরে প্রদীপ্ত বাসনা--
অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীর কাব্যিক সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে। তিনি পারেননি হিন্দু পিতৃতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে। হিন্দু পিতৃতন্ত্র পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল পিতৃতন্ত্র। এতোটাই সফল যে, তা নারীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, স্বামীর মৃত্যুর পর তার সাথে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিজেকে পোড়ালে স্বর্গলাভ হয়! হিন্দু পিতৃতন্ত্র এতো বেশি সফল যে, রবীন্দ্রনাথের মতো বহুমুখী প্রতিভারাও এই পিতৃতন্ত্রের জয়গান গেয়েছেন। সেই পিতৃতন্ত্রের রাজত্ব এখনও ভালোভাবেই বহাল আছে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটা কথা বলেছিলেন, "যাঁরা দাবি করেন, সনাতন ধর্মের নির্ভুল বিধি-ব্যবস্থার জন্যই তা এতো হাজার বছর ধরে তা টিকে আছে, তাঁদেরকে বলতে চাই: টিকিয়া থাকাটাই চরম সার্থকতা নয়। অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে , কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।" 

এবার আসা যাক শ্রী ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী গীতাতে। 

পঞ্চপাণ্ডবের শ্রেষ্ঠ বীর শ্রীমান অর্জুনের মুখে আমরা শুনতে পাই: “অধর্মাভিভাবাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রিয়ঃ/স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্করঃ॥” (গীতা, ১:৪০). বাংলা অর্থ: হে কৃষ্ণ, অধর্মের আবির্ভাব হলে কুলস্ত্রী ব্যভিচারিণী হয়। আর ব্যভিচারিণী হলে  বর্ণসংকরের সৃষ্টি হয়।

বর্ণসংকর হলে কী হয়? - “সঙ্করো নরকায়ৈব কুলঘানাং কুলস্য চ/পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ॥” (গীতা, ১:৪১). বাংলা অর্থ: বর্ণসঙ্কর, কুলনাশকারীদের এবং কুলের নরকের কারণ হয়। শ্রাদ্ধ-তর্পণাদি ক্রিয়ার লোপ হওয়াতে ইহাদের পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয়।

যুক্তি দেখানো যেতে পারে যে, এটা অর্জুনের কথা, ভগবানের নয়। তবে ভগবান কিন্তু অর্জুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এবার ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী শোনা যাক: “মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহ্যপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ/স্ত্রিয়ো ব শ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেপি যান্তি পরাং গতিম্॥” (গীতা, ৯:৩২). বাংলা অর্থ: আমাকে আশ্রয় করে স্ত্রী, বৈশ্য, শূদ্র এসব পাপযোনিরাও পরম গতি লাভ করে থাকে। (ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন, নারীর সঙ্গে বৈশ্য, শূদ্ররাও পাপযোনির আওতায় পড়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়রা পড়েনি। তবে ভগবানের কাছে নারীর কোনও জাত নেই। ব্রাহ্মণের সন্তান হলেও নারী পাপযোনি হবে। নারীর যোনি সব সময়ই সকল পাপের উৎস।)

ইসলামী স্বর্গে যেমন প্রতি মুসলিম পুরুষের জন্য ৭২ টি হুরের বন্দোবস্ত আছে, হিন্দু উপাখ্যানগুলোতেও যুদ্ধকালে বীরের মতো মারা গেলে পরকালে নারীপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়া আছে। যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো যুদ্ধ করে মারা গেলে স্বর্গে পাওয়া যাবে অসংখ্য সুন্দরী নারী। দেখুন : বনপর্ব ১৮৬-১৮৭, কর্ণপর্ব ৪৯/৭৬-৭৮, শান্তিপর্ব ৬৪/১৭, ৩০; ৯৬/১৮, ১৯, ৮৩, ৮৫, ৮৬, ৮৮, ১০৬; রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ড ৭১/২২, ২৫, ২৬, সুন্দরকাণ্ড ২০/১৩। (সূত্র : প্রাচীন ভারত সমাজ ও সাহিত্য, পৃষ্ঠা ৬৩). (তবে শহীদ হতে উন্মুখ ও হুরস্বপ্নবিভোর মুসলিমদের মতো হিন্দু বর্তমান জগতে আর দেখা যায় না)  

দেবী দুর্গাকে শক্তির দেবী বলে পুজা করে অনেক হিন্দু হয়তো হিন্দুধর্মে নারীবাদের দেখা পান। তবে দেবী দুর্গার আবির্ভাব জানা থাকলে অমন চিন্তা মাথাতেও আসবে না। এই দেবীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বিভিন্নন পুরুষ দেবতার জ্যোতি থেকে। মহিষাশুর বর পেয়েছিলেন যে, মানব, দেবতা বা দানব কারো হাতেই তাঁর মৃত্যু হবে না। যখন মহিষাশুর দেবতাদের বিতাড়িত কররেন স্বর্গ থেকে, তখন তারা একজোট হয়ে তাদের জ্যোতি দিয়ে তৈরি করলেন দেবী দুর্গাকে। পুরুষের প্রয়োজন মেটাতেই দেবী দুর্গার জন্ম।

হিন্দুধর্মের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রথা হলো সতীদাহ প্রথা। এই বাংলাতে ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত মাত্র তেরো বছরে পুণ্যলাভের আশাতে ৮১৩৫ জন নারীকে আগুনে পুড়িয়ে সতী বানানো হয়েছিল। ওই সময়ে জিন্দু নারীদের বিয়ে হতো ১০-১২ বছরের মধ্যে। এবং এই প্রথার বলিদের অধিকাংশের বয়স ২০-রও কম। একবার কল্পনা করে দেখুন তো: একটা বালিকাকে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আগুনের দিকে। নিশ্চিত মৃত্যু আঁচ করে বালিকা সবার হাতে-পায়ে ধরছে বাঁচার জন্য। সেই বালিকার বাবা-মাও আছে সেখানে। তারা তাদের মেয়ের নিশ্চিত ৩৫,০০০,০০০ বছরের স্বর্গপ্রাপ্তির কথা ভেবে বাধা দিতেও পারছে না। বালিকাটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আগুনের দিকে, আর বাবা-মা বলছে, "বল হরি হরিবোল, বল হরি হরিবোল..."

ঋগ বেদের দশম মণ্ডলের ১৮ নম্বর সূক্তের ৭ নম্বরে পরিষ্কারভাবে বলা আছে: 
इमा नारीरविधवाः सुपत्नीराञ्जनेन सर्पिषा संविशन्तु |
अनश्रवो.अनमीवाः सुरत्ना आ रोहन्तु जनयोयोनिमग्रे || (RV 10.18.7)

....Let these women, whose husbands are worthy and are living, enter the house with ghee (applied) as collyrium (to their eyes). Let these wives first step into the pyre, tearless without any affliction and well adorned.

অথর্ব বেদে বলা আছে: আমরা মৃতের বধু হবার জন্য জীবিত নারীকে নীত হতে দেখেছি। (১৮/৩/১,৩)

পরাশর সংহিতায় বলা আছে: মানুষের শরীরে সাড়ে তিন কোটি লোম থাকে, যে নারী মৃত্যুতেও তার স্বামীকে অনুগমন করে, সে স্বামীর সাথে ৩৫,০০০,০০০ বৎসরই স্বর্গবাস করে। (৪:২৮)

ব্রহ্মপুরাণে বলা আছে: যদি স্বামীর প্রবাসেও মৃত্যু হয়, তবে স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর পাদুকা বুকে ধারন করে অগ্নীতে প্রবেশ করা।

সনাতন ধর্মের মতো প্রতিটি ধর্মেই রয়েছে নারীবিদ্বেষী পুরুষালি বিধান। তবু গড়পড়তাভাবে নারীরাই বেশি ধর্মপ্রবণ কেন? তাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসতে হবে ধর্ম নামের অনাবশ্যক ও ক্ষতিকর এই জঞ্জাল থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন