শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

মহাকবিরাজ মহানবী – ০৫


অবর্ণন রাইমস বর্তমান সিরিজের ভারপ্রাপ্ত হয়ে আমাকে ভারমুক্ত করেছেন। আল্যাফাক তার হায়াত দারাজ করুক।

নিশ্চয়ই ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান এবং মহানবী নিশ্চয়ই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সর্ব বিষয়ে সার্বিকভাবে জ্ঞানান্বিত ব্যক্তি। আর তাই ইসলামী চিকিৎসাবিজ্ঞানও চির-আধুনিক ও সর্বজনীন। বুঝে পাই না, মুসলিমরা কেন নবী বর্ণিত নানাবিধ চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহার করে সুন্নত পালনে অনীহ। 

মোমিন বান্দাদেরকে যাতে আর অনৈসলামিক চিকিৎসার পেছনে অনর্থক অর্থব্যয় করতে না হয়, সেই লক্ষ্যে শুরু করা হয়েছে এই সিরিজ। 

চিকিৎসাপদ্ধতি ৫.

বিল্লাল একজন পরহেজগার মানুষ। তাবলিগ করে, মানুষের সাথে মিষ্টি করে কথা বলে, ছহীহ এসলামি তরিকায় জীবনযাপন করে। বিল্লালকে পছন্দ না করে উপায় নাই।

আমাদের কাহিনী বিল্লালকে নিয়ে না, তার ভাগিনাকে নিয়ে। একমাত্র ভাগিনাকে বিল্লাল বড়ই স্নেহ করে। তাকে সে ছহীহ এসলামি কায়দায় জীবনযাপনের তালিম দিচ্ছে। ফলাফল বেশ প্রমিজিং। এগারো বছর বয়স ভাগিনার। সেও মামা-অন্ত প্রাণ। মায়ের ধমক তো নিত্তনৈমিত্তিক, ভাগিনার সব আবদার তার মামার কাছে। সেই মামার বাসায় দুদিন থাকার প্রোগ্রাম তার কাছে তাই ভিখিরির সামনে পোলাওভর্তি প্লেট! আজ সকালেই ভাগিনা পৌঁচেছে মামার বাসায়। বাসা বলতে খুপরি একটা রুম, আর সাথে লাগোয়া বারান্দাটা রান্নাঘর হিসাবে ব্যবহার করা। কোই বাত নেহি! মামা-ভাগিনা যেখানে, আর কী লাগে সেখানে?!

সারাদিন অনেক ভালো গেলো। টিভিতে একসাথে দুজনে জোকার বিনায়কের কমেডি সিরিয়াল দেখলো ওরা, পাকিস্তানে ফেসবুক বন্ধের খবরে খুশি হয়ে গেলো, পল্টনে মুমিনদের শান্তিপূর্ণ হামলায় পড়ে পুলিশের প্রতিশোধমূলক গ্রেফতার অভিযান দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। সারাদিনের পরে, রাতের দশটায় ভাগিনার মাথায় খেয়াল চাপলো তার এখন আইসক্রিম খেতে হবে। মামার বাড়ির আবদার বলে কথা। বিল্লাল তখন তখনই বেরিয়ে পড়ে পাড়ার দোকান বন্ধ হবার আগমূহূর্তে এক লিটার আইসক্রিম পেয়েও গেলো। বাসায় আনার পরে দুজনে মিলে মজা করে সাঁটালো পুরোটা।

গোল বাধলো তার পরে।

এতোখানি আইসক্রিম! গলা দিয়ে নামার প্রতিশোধ নিলো টনসিলের ওপর। ভাগিনার টনসিল ফুলে ঢোল। ঢোক গেলা যাচ্ছে না, ব্যথায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সারারাত ঘুম হল না ভাগিনার। দরদী মামাও বিছানার পাশে জেগে বসে রইলো সারারাত। সকাল হতে না হতে অবস্থা আরও খারাপ। ভাগিনার পুরানো প্লুরিসি-র (জ্ঞানীরা পড়েন- ফুসফুসঝিল্লির প্রদাহ) ব্যথা জাগান দিয়ে উঠলো। বিল্লালের মামার মন। চোখে পানি এসে গেলো। একমাত্র ভাগিনা ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে, কিছুই কি করার নাই?

অবশ্যই করার আছে! বিল্লালের মনে পড়ে গেলো কী করতে হবে। বাসায় যত আগরবাতি ছিলো সব এনে ফেললো সে সামনে। তারপর তার অর্ধেকটা নিয়ে কুচিকুচি করে কাটলো।
'ভাগিনা, ওষুধ পেয়ে গেছি!'
ভাগিনা ক্লান্ত চোখে মামার দিকে দেখলো।
'হাঁ করো তো দেখি।'
ভাগিনার হাঁ করা মুখে আগরবাতি গুঁজে দিলো বিল্লাল। মুখে আগরবাতির বিস্বাদ লাগতেই তড়াক করে উঠে পড়লো ভাগিনা।
'এইটা কি দিলেন মামা!'
'টনসিল আর প্লুরিসির এই তো নিদান ভাগিনা।'
'আপনারে বলসে!'
'খামোশ! পেয়ারা প্রফেট (পিউবিক হেয়ার, থুক্কু PBUH) মুখে আগরবাতি গুঁজে রাখার এই নিদান দিয়া গেছেন। নবীজীরে তুমি মিথ্যা বলতে চাও??'

(সূত্র: বুখারি ৭.৭১.৫৯৬, ৬১১, ৬১৩, ৬১৬)

অনুপ্রেরণা: আনাস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন