মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১১

কার্টুন নিয়ে দু'কথা: বাক-স্বাধীনতার প্রতি ইসলামি আক্রোশ!


লিখেছেন Critic BD



ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের সেই অমৃতবাণীর কথা মনে আছে তো? "I may disagree with what you have to say, but I shall defend, to the death, your right to say it." আজকে যদি ভলতেয়ার বেঁচে থাকতেন, তো আমার বিশ্বাস তাঁর বাণীতে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনতেন, ‘এক্সসেপ্ট মুহাম্মদীয়া’ শব্দদ্বয় জোড়া লাগাতেন!!

গত মঙ্গলবারে ফ্রান্সের শার্লি হেব্দো নামের একটি রম্য পত্রিকা কার্যালয়ে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ হচ্ছে, ঐ পত্রিকাটি তিউনিসিয়ায় সাম্প্রতিক ইলেকশনে ইসলামি পার্টির বিজয়ের পর ‘আরব বসন্ত’ নিয়ে একটি বিশেষ সংস্করণ ছেপেছে। সে সংস্করণে হজরত মুহাম্মদকে ‘অতিথি সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মুহাম্মদের একাধিক ব্যঙ্গচিত্র ছাপানোও হয়েছে। যেমন প্রচ্ছদ চিত্রে দেখানো হয়েছে মুহাম্মদ বলছেন, ‘না হাসলে ১০০ চাবুক মারা হবে।’


ভিতরে আরেকটা একটা কার্টুনে রয়েছে মুহাম্মদের নাকে কাউনের লাল রঙের আলগা নাক লাগানো! এ ধরনের ব্যঙ্গচিত্র দেখে খেঁপে গেছে তৌহিদী জনতা। হামলে পড়েছে তাই! হায় রে কমজোর ঈমান! কাঠপেন্সিলের এক ঘষায় ধ্বসে যায় তোর ধর্মবর্ম!!

কার্টুন একটি জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যম। কার্টুন পছন্দ করে না এমন ব্যক্তি বোধহয় কমই আছে আপনার আমার চারপাশে। অনেক দশক ধরেই বিশ্বজুড়ে প্রচলিত রয়েছে কার্টুন, ক্যারিক্যাচারের মাধ্যমে ভিন্নমত বা মতভিন্নতা ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা। সেটা হতে পারে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, হতে পারে সামাজিক কোনো কিছু নিয়ে। চলমান ঘটনাবলী ফুটে ওঠে কার্টুনে। চূড়ান্ত স্যাটায়ারও হয় কার্টুনের মাধ্যমে। বাকস্বাধীনতার প্রকাশ হিসেবে কার্টুন/ক্যারিক্যাচারকে অনেক কাল আগে থেকেই গণ্য করা হয়। এটি ফ্রিডম অব প্রেসেরও অন্তর্ভুক্ত। তো প্রশ্ন করি, ধর্ম কি সমাজ জীবনের বাইরে? বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কুংস্কার নিয়ে যদি ক্যারিক্যাচার করা যায় তবে ধর্ম নিয়ে কেন করা যাবে না? পবিত্রতা-টবিত্রতা, সংস্কার-টংস্কারের ঘোরাটোপে ধর্মকে আর কতদিন শেল্টার দেয়া হবে?

আগে একবার বলেছিলাম কোথাও আমি, মুমিন মোম্মদীয়াদের চমৎকার কৌশলী স্বভাব হচ্ছে, তারা সবসময় প্রচার করে তারা নাকি নির্যাতিত, নিপীড়িত!! তারা স্রেফ নির্দোষ! যত দোষ নন্দ ঘোষ!! তাদের ননীর মত নরম ‘ঈমান’ প্রতি মুহূর্তেই থল থল করে উঠে পত্রিকার পাতায় কার্টুন ছবি দেখে!!


এই তো কয়দিন আগের ঘটনা। ২০০৫ সালে ডেনিশ পত্রিকা জিল্যান্ড পোস্টেনে ছাপানো ১২টি কার্টুন মোহাম্মদীয়াদের ধর্মবর্ম সব ছিন্নভিন্ন করে দেয়! তৌহিদী তেজে কেপে উঠে মুসলিম বিশ্ব!! এদের আগুনে হল্কা বাংলাদেশ তো বটেই, ইউরোপ-আমেরিকার মত দেশেও পৌছায়!! কার্টুন নিয়ে আমাদের দেশেও হাঙ্গামার ইতিহাস আছে। প্রথম আলোর রম্য ম্যাগাজিন আলপিন নিষিদ্ধ হয়ে গেল আরিফের ‘মুহাম্মদ বিড়াল’ কার্টুনটি নিয়ে। মোল্লাদের হৈচৈ আর জ্বালাও পোড়াও দেখে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও বেশ ভড়কে গিয়েছিল! জেলে যেতে হল আরিফকে! আর এই তো কিছুদিন আগে ধর্মকারী থেকে প্রকাশিত কুফরী কিতাব ‘হজরত মহাউন্মাদ ও কোরান-হাদিস রঙ্গ’ নিয়েও মর্দে মুমিনদের ভিতরে ভিতরে গুড়গুড় শুরু হয়ে গিয়েছিল!! ইনকিলাব, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত পত্রিকায় এদের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ সীমিত হলেও টের পাওয়া গেছে!!

আচ্ছা, মুমিন মোহাম্মদীয়ারা যদি কার্টুন একদমই পছন্দ না করে, তবে কি দরকার তাদেরকে এত খোঁচানো? কোনো মানে হয় বেচারাদেরকে বারে বারে কষ্ট দেয়ার? এটা ঠিক নয়! মোটেও না....

তয় নিচের কয়টা ছবি দেখি:


১. ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখে সৌদি পত্রিকা ‘Al-Yawm’ এ ছাপানো কার্টুন! আহা! এ ছবিতে কোনো রেসিজম নেই! জিঘাংসা নেই! হুঁঙ্কার নেই! জাতিবিদ্বেষ নেই!! ইসলামের মতই পূতপবিত্র এই কার্টুন, তাই না!!


২. ২০০৬ সালের ২৫ মে প্যালেস্টাইনি রাজনৈতিক দল হামাসের প্রকাশনা ‘আল-রিসালা’য় ছাপানো কার্টুন! আচ্ছা, মনে করুন এই ছবিটা যদি এমন হত, কাবা ঘরের সামনে একটা পিচ্ছি হিশু করে দিচ্ছে, তাইলে কি প্রতিক্রিয়া হত? মুহাম্মদীয়ারা খুব সাধু! তারা কিচ্ছু করে না!! শুধু শুধুই পশ্চিমারা মুহাম্মদীয়াদের সাথে ইয়ার্কি মারে!! তাই না!


৩. জর্ডানের ‘Ar-Rai’ -এ ছাপানো কার্টুন। ৫ নভেম্বর, ২০০৫।


৪. সিরিয়ার ‘Tishrin’ পত্রিকা। ২১ এপ্রিল ২০০২।


৫. মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন! এক ইহুদি বুশরূপ পাখিটারে বলছে, বল আমি আরব ঘৃণা করি, পাখিটাও তখন বলছে আমি আরব ঘৃণা করি! আমি আরব ঘৃণা করি!


৬. আপেলের মত সুস্বাদু আরব দেশগুলোকে খেয়ে নিয়ে নিচ্ছে আমেরিকা এবং ইজরায়েলি শয়তানেরা!! ছাপা হয়েছে ২০০৩ সালের ১৩ মে। কাতারের ‘Al-Watan’ পত্রিকায়।


৬. Al-Watan, February 3, 2004 (Oman). Translation: On left - Feast of the Immolation /On right - The Islamic World's Attitude?


৮. ৬ ফেব্র“য়ারি, ২০০৬; ইরানের পত্রিকা ‘Al-Wifaq’। এখানে ইসরাইলি বা ইহুদি এক শয়তান লিখতেছে : “I don't admit the limits of freedom of speech except the Holocaust."

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন