লিখেছেন নাসির আবদুল্লাহ
- আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, দোস্ত নোমানুল্লাহ, তোমার মনটা বিচলিত মনে হচ্ছে?
- ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া বারাকাতুহু দোস্ত শামসুল্লাহ, না ভাই, এই জীবন আর ভালো লাগে না। সুপারিন্টেন্ডেন্ট বলছে আমাকে এই লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বাইর কইরা দিবে।
- কেন, কী এমন হয়েছে?
- বেশ কিছুদিন যাবত বোর্ডিং কর্তৃপক্ষ আমাকে ফেসবুকে ইসলাম প্রচার করার দায়িত্ব দিছে। কিন্তু এই কাজ বড়ই কষ্টের, সাধারন মাইনষের কুনু আগ্রহ নাই, আর নাস্তিকগো লগে পাইরা উঠি না।
- ও আচ্ছা বুঝেছি, তা সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেবের দোষ কী বল? কাজ না দেখালে ত সব ডোনেশন বন্ধ হয়ে যাবে, তুমি ত নিজে থাইক্কা কম্পিউটর ওস্তাদ বইলা এই কাম নিছ।
- তুমি ঠিকই বলেছ, ভাই, কিন্তু এই নাস্তিকগুলা যে এমন ঘাগুর ঘাগু, তা তো আগে জানতাম না, আমি সুরার নাম কওয়ার আগেই তারা আয়াত কইয়া ফালায়। বাংলা কোরান অনলাইনে দিয়া আমাদের সব ভাত মাইরা দিছে, একটা লাইনও মনগড়া বলার ঊপায় নাই।
- আচ্ছা, ওসমান যে কোরানের সব গরমিল কপি পুরাইয়া ফেলছিল আমরা পারি না বাংলা কোরান সব গায়েব কইরা দিতে?
- ভালো কথা বলছ, তোমার প্রস্তাবটা সৌদিতে পাঠাইতে হবে... সারা দুনিয়া থেকে সব অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করে নিলে সমস্যা অনেক কমে যাবে, তখন মানুষকে ধুনফুন বুঝানো যাবে।
- শালার নাস্তিকগুলা এত পড়াশুনা কেমনে করে? কোরান পড়া ত আমাদের পেশা, কিন্তু ওরা বিজ্ঞান পড়ার পর শখ করে কোরান পড়ে, তার পরেও ওদের সাথে পারি না।
- দোস্ত, কোরানের মধ্যে এত মিছা কথা লেখা ক্যান? তোমার মনে সন্দেহ জাগে না? নাস্তিকগুলা তো আমারে আধা নাস্তিক বানাইয়া দিছে। ওগো কিছু কিছু কথা তো সত্য রে ভাই। এই যেমন ধর মুহম্মদে (সঃ) পোলার বউয়ের সাথে সহবত করার জন্য পোলারে যুদ্ধে পাঠাইয়া দিল... ভাবল পোলা যুদ্ধে শহীদ আর সে ঘরের মইদ্দ্যে গাজী। কিন্তু পোলা ফিরা আইল যুদ্ধ থিকা, তখন মুহম্মদ আয়াত নাযিল কইরা তার বউরে নিয়া নিল।
- নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ, দোস্ত নোমানুল্লাহ... তোমার ঈমান ঢিলা হইয়া গেছে।
(পরের দিন সুপারিন্টেন্ডেন্টের ঘরে নোমানের ডাক পড়ল)
- কী, নোমান মিয়া, ধর্ম প্রচার করতে গিয়া নিজের ঈমান ঢিলা কইরা ফালাইলা?
- না, হুজুর, এই দেখেন আমি আপনার কথামত নাস্তিকগো বাপ-মা বইন তুইলা কেমনে গালি দিয়া তামা-তামা কইরা দিছি। এই যে স্ক্রীপ্ট প্রিন্ট কইরা আনছি।
- আইচ্চা আইচ্চা বেশ, তবে তোমারে কিন্তু ঈমানের পরীক্ষা দিতে হবে, বাবা। আল্লাহ তার বান্দাকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন, ঈমানে জোর থাকলে তুমি পরীক্ষায় পাশ কইরা যাইবা, চিন্তার কিছু নাই। তিনবার সুরা ইয়াসিন, পাঁচবার সুরা ইখলাস আর তিনবার ফাতেহা পড়ে বুকে ফু দিয়া রেডি হইয়া যাও। ঈমানে ফাটল ধরছে তা অবশ্যই ঝালাই করা দরকার। আল্লাহ অসীম দয়ালু, ফাটল ধরা ঈমানে ঝালাই করার ব্যবস্থা রাখছেন তিনি। মোকসেদুল্লাহ, অ মোকসেদুল্লাহ, এইদিকে আইস ত একবার বাবা।
- জ্বী হুজুর, বলেন, কী করতে হবে আমাকে? (মোকসেদুল্লাহ পাশে এসে দাঁড়াল)
- নোমানুল্লাহর ঈমান পরীক্ষা হবে, গত মাসে আসাম থাইকা যে লাইফ জ্যাকেটের চালান আইছে, তার মইদ্যে থাইকা একটা লইয়া নোমানউল্লাহরে পিন্দাইয়া দাও।
- নোমানুল্লাহ, তুমি এই জ্যাকেট পিন্দা রজব আলীর বাইত্তে যাইবা। অর মাইয়া কুলসুমটা বড়ই বেহায়া চলাফেরা করে, মহল্লার পোলা-পাইনগুলা সব শেষ হইয়া গেল অর লাইগ্যা। আমি কাইলকা ওরে মা-সোনা বইলা যেই পিঠে হাত দিয়া বুঝাইতে লাগছি, অমনি সে আমার তলপেটে কইষা একটা লাত্থি দিছে... আল্লাহর বান্দার গায়ে একটা বেহায়া মাগী হাত তুলছে, এইটা কি আল্লাহ সহ্য করব? নাহ, করব না। তুমি রজব আলীরে ধইরা লইয়া আসবা। ঈমানে জোর আন... আল্লাহর কামে ডরাইতে নাই।
- মোকসেদ তুইও যা লগে। (বাকি অংশ ফিস ফিস করে মোকসেদের কানে কানে) রিমোটটা লইছস তো সাথে? কুলসুম দরজা খুলনের সাথে সাথে দূরের থাইক্কা রিমোটে চাপ দিবি, একসাথে য্যান দুইটায় মরে। সুইসাইড লাইফ-জ্যাকেটের অনেক দাম, একটা জ্যাকেট দিয়া দুইটা কাম সারতে হইব। বুঝছস নি?
- হ, হুজুর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন