লিখেছেন নাসির আবদুল্লাহ
ক্রিং ক্রিং ক্রিং...
কলিং বেলে টিপ দিয়া হাফিজুল ইসলাম দরজার সামনে দাড়াইয়া আছে।
- কাকে চান? আব্বাজান তো বাইত্তে নাই।
- আসসালামু-আলাইকুম রুকাইয়া বেগম, আমি হাফিজুল ইসলাম তুমারে ঈদের শুভেচ্ছা জানাইতে আসলাম। (তুমার বাপ যে বাইত্তে নাই, সেইটা জাইনাযই ত আমি এমুন টাইমে আসছি)
- ওওহ! ওলাইকুম আসসালাম হাফিজুল ইসলাম ভাই, আপনে একটু খাড়ান, আমি হিজাবটা লাগাইয়া আসি।
ঘটাং করে দরজা খুলে রুকাইয়া বেগম হাফিজুল ইসলামকে ভেতরে আসতে বলল।
- এই নাও এই ব্যাগটা নাও, এইটা তুমার জন্য আনছি আমি।
- কী আছে এই ব্যাগে?
- মাংশ, কুরবানীর মাংশ। সকাল থাইকা গরু-ছাগল-ভেড়া মিলাইয়া ২০০-র বেশি জবাই দিছি, সবাই তো আর ট্যাকা দেয় না, কেউ কেউ শুধু মাংশ দিয়া বিদায় কইরা দ্যায়, তাই অনেক মাংশ হইছে।
- কী যে করছেন আপনি, আব্বা তো সকাল থাইকা মাংশ পাঠাইতে পাঠাইতে বাড়ি ভইরা ফালাইছে নিজেদের ফ্রিজ, আত্মীয়-স্বজনের ফ্রিজ, পাড়া-পড়শি সকলের ফ্রিজ। আমরা মাংশ দিয়া ভইরা ফালাইছি। আম্মাজান একটূ আগে আব্বাজানরে মুবাইল কইরা আর মাংশ পাঠাইতে নিষেধ কইরা দিছে, বাকী যা পাওয়া যাবে তা হোটেল ওয়ালাদের কাছে বিক্রি কইরা দিতে কইছে। আপনি বরং এই মাংশ আপনার লিল্লাহ বোর্ডিং-এ লইয়া যান।
- কী যে বল তুমি, রুকাইয়া বেগম! লিল্লাহ বোর্ডিং-এ মাংশ? ওইখানে তো চরম অবস্থা, বোর্ডিং-এর মেঝেতে, ছাদে, বারান্দায়, খাটের তলায় সব মাংশ দিয়া ভইরা গেছে। তুমি ডরাইও না, রুকাইয়া বেগম, এই ব্যাগের মধ্যে খুব ভাল মাংশ, আমি বাইছা বাইছা বড় বড় খাশির কলিজা, গিলা আর সিনার স্পেশাল মাংশ ভরছি এই ব্যাগে তুমাগো লাইগা।
- ও তাই নাকি? তয় দেন, আম্মাজানরে রান্না করতে বলি। আব্বাজান আবার খাশির কলিজা খুব পছন্দ করে।
- তুমার আব্বাহুজুর এখনো বাইত্তে ফিরে নাই ক্যান?
- ঢং করেন ক্যান, হাফিজুল ইসলাম ভাই? আইজকে তার কত কাজ, গরু কাটলে ২০০ ট্যাকা, ভেড়া-খাশি ১০০, আইজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উনি বিজি থাকবেন। আপনি বেচেলর মানুষ, কাম ফালাইয়া আড্ডা দিতে আসছেন, কিন্তু আব্বাজানের তো ঘর সংসার আছে।
- বিশ্বাস কর, রুকাইয়া বেগম তুমার লাগি আমার দিলের মইদ্যে সব সময় আনচান করে। তাই পয়লা চান্সেই চলে আসলাম তুমার কাছে।
বৈঠকখানায় বসে বসে হাফিজুল ইসলাম মিয়া (দাখিল পাস) নানা চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল, "কাম ফালাইয়া যে আসলাম ক্ষতি উসুল হইব তো? গরু ২০০, খাশি ১০০; ধ্যুত! আইজকা না আইসা অন্য আরেকদিন চান্স লইলে বালা অইত, মেলা ট্যাকা লস খাইয়া গেলাম আইজকা!"
- লন, একটু সেমাই খান। দুপুরের খাওয়া কিন্তু হবে না, আব্বাহুজুর বাসায় না ফিরা আসা পর্যন্ত আম্মাজান কাওকে খাইতে দিবে না।
- না না, তুমি চিন্তা কইর না, এক বাইত্তে সকাল সকালই পোলাও মাইরা দিছি মুরগীর ডবল রান দিয়া।
- টিভি দেখবেন? টিভি চালাইয়া দেই? টিপু সুলতান সিরিয়াল চলতেছে।
"আলহামদুলিল্লাহ" বলে ঢেঁকুর তুলে হাফিজুল ইসলাম সেমাই-এর প্লেটটা রুকাইয়ার দিকে বাড়িয়ে ধরল, রুকাইয়া যেই প্লেট নিতে যাবে, অমনি হাফিজুল মিয়া তাকে জাপটে ধরল।
- তুমার দুই চক্ষুর নেশায় আমি পাগল হইয়া গেছি রুকাইয়া। (হিজাবী নারীর চক্ষু ছাড়া আর ত কিছু দেখনের উপায় নাই)
- ছাড়েন ছাড়েন! করেন কি? আমি আজকে নাপাক আছি, আমার হায়েয চলতেছে।
"নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ" বলে হাফিজুল ইসলাম রুকাইয়া বেগমকে ছেড়ে দিয়ে এক ঝটকায় একটু দূরে সরে গেল।
- তোমার উন্নত বক্ষের জন্য আমার নিদ্রা নাই।
- হাফিজুল ভাই, আইজকে আপনি বড় দুষ্টুমি করতেছেন। আমার বক্ষ যে উন্নত, সেইটা আপনি জানলেন কেমনে? আমি ত বুরকা পইরা থাকি সারাক্ষণ।
- তোমার চক্ষুর মধ্যে দিয়া আমি তোমার সব কিছু দেখতে পাই। (মনে মনে আমি তোমার হিজাব ঝটকা মাইরা কতবার খুলছি)
- আব্বাজানের কাছে শাদী-মোবারকের কথা বলেন না ক্যান?
- আইচ্চা বলুমনে, কিন্তু তোমার আব্বাজান মনে হয় আরেকজনেরে (মমিনুল ইসলাম) আমার থেকে বেশি পছন্দ করে। (আগে তুমারে টেস না কইরা বিয়ার পপোজাল কেমনে দেই, আমারে কি বোকা পাইছ?)
- আব্বা হুজুর ঠিকই করে, মমিন ভাই তো আপনার মত এত ভীতুর ডিম না। হায়েয-এর কথা শুনে সে আপনার মত এমন ডরায় না।
- তুমি আমারে ভীতু কইলা? আমি ভীতু না, আমি শুধু বেয়াদবী পছন্দ করি না, আর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পাক-নাপাক মাইনা চলি। (রুকাইয়া বেগম, তুমি আমারে ভোদাই মনে কর, না? আমি ভোদাই না, তুমারে টেস না কইরা আমি তুমার বাপের কাছে বিয়ার পপোজাল দিতাম না, আর টেস করার পর তুমারে যদি বিয়া করি, তয় আমার দক্ষিণ হস্তের দুই-চারটা চটকনা খাইলে তুমি এমনিতেই ঠাণ্ডা হইয়া যাইবা) আইচ্চা, তাইলে আইজকে আসি, কেমুন?
- চইলা যাইবেন? আরেকটু বসেন, রাগ করছেন? রাগ কইরেন না, আমি আপনার লগে মশকরা করছি মমিনুল ইসলাম ভায়ের কথা বইলা। ইনশাল্লাহ আমি আপনাকে ছাড়া আর কাওকে মহব্বত করি না। আরেক প্লেট সেমাই দেই?
- সেমাই দিবা? আইচ্চা দেও, তয় সেমাইয়ের সাথে শরবত না, এক গেলাস কোকাকোলা দিও। আর একটু তাড়াতাড়ি কর, এখনো টাইম আছে... কাজে লাইগা গেলে এখনো শ দুয়েক গরু-ছাগল জবো করা যাইব। (গরু ২০০ ট্যাকা, ছাগল ১০০, একটা হোন্ডা কিনা দরকার, হোন্ডা বড়ই কামের জিনিস...... পেস্টিজও বাড়ে আবার কামও হয়)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন