শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১১

অবর্ণিত পংক্তিমালা - ০৪


লিখেছেন অবর্ণন রাইমস

১০. 
একদা মফিজ কহিয়াছিল, সূর্য পৃথিবীর চারিপাশে ঘুরে। আমরা গম্ভীরমুখে তাহাকে কহিলাম, না বৎস, সূর্যের চারিপাশে পৃথিবী ঘুরে। মফিজ আমাদিগের কতকের গলা কাটিল, কতককে আগুনে পোড়াইল, কতককে ফাটকে পুরিল। তবে শেষরক্ষা হইল না। মফিজ স্বীকার করিল যে, সূর্যের চারিপাশে পৃথিবী ঘুরে। তবে একইসাথে যোগ করিল, সে বিশ্বাস করে পৃথিবীর চারিপাশে সূর্য ঘুরে। বিশ্বাসের উপর তো কোনো কথা নাই, তাই না?

কয়দিন আগে মফিজ বলিয়াছে, বিবর্তনবাদ ...ঠিকাসে, তবে সে বিশ্বাস করে আদম-হাওয়া হইতে মানুষ আসিয়াছে। বিশ্বাসের উপর তো কোন কথা নাই, তাই না? 

মফিজ কহিল, চৌদিআষভ দেশে গমন করিলে ঐদেশের আইন মানিয়া মুণ্ডুচ্ছেদ প্রথা মানিয়া লইতে হইবে। এর বিপক্ষে কোনো আন্দোলন করা চলিবে না। তবে তার বিশ্বাসমতে, ফ্রান্সে গেলে সেই দেশের আইনের বিপক্ষে আন্দোলন করিয়া শরিয়া আইন কামনা করা যায়েয আছে।

মফিজের "বিশ্বাস" বড়ই আজব এক বস্তু।

১১. 
মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম মানবতা। সেই স্বাভাবিক ধর্মের কোনো বই নেই, মোল্লা-পুরুত-যাজক নেই, কোনো অযাচিত চোখ রাঙানি নেই। মানবতা শেখায় মানুষের মতো আচরণ। যে অস্বাভাবিক ধর্ম মানুষকে অন্য মানুষের হাত কেটে ফেলতে বলে, সে দেখে না ক্ষুধার জ্বালায় সেই মানুষটি চুরি করতে গিয়েছিলো কি না। যে ধর্ম সংশোধনের বদলে প্রতিশোধ নিতে শেখায়, মানবিকতার বদলে হিংস্রতা শেখায়, সে পিশাচের ধর্ম হতেও পারে, মানুষের ধর্ম কখনোই নয়।

১২. 
আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে। একশটা লোকের মাথায় প্রশ্ন আসে। সত্তুরজন ধর্মে বিশ্বাস হারানোর ভয়ে প্রশ্নটাকে মনের গহীনে ডুবিয়ে দেয়। আরো ত্রিশজন প্রশ্নটা পাশের মানুষের কাছে জানায়। পাশের জনের চোখ রাঙানি খেয়ে বিশজনের প্রশ্নই চাপা পড়ে যায়। বাকি দশটা মানুষ নিজেই উত্তর খুঁজতে থাকে। এবং আশার কথা, উত্তর তারা খুঁজে পায়। মানুষের বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন আর সঙ্গীত, প্রতিদিন আরো বেশি মানুষের মনে প্রশ্নের বুদবুদগুলোর জন্ম দিচ্ছে। কাল্পনিক ঈশ্বরের রূপকথার দিন আর খুব বেশি সময়ের নয়।

পৃথিবীর ১.১ বিলিয়ন মানুষ আজ ধর্মের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসেছে। মানুষ আরো প্রশ্ন করতে শিখুক, চাওয়া এই একটাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন