আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১১

পশু কোরবানি: মুদ্রার অপর পিঠ


লিখেছেন Critic BD

“দিওনাকো পশু কোরবানি, বিফল হবেরে সবখানি
মনের পশুরে করো জবাই, পশুরাও বাঁচে বাঁচে সবাই”
---- কাজী নজরুল ইসলাম।

শুরুতেই বলে নিই, এটা আমার নিজস্ব কোনো মৌলিক লেখা নয়। মূলত এ লেখায় বিভিন্নজনের ভাবনাকে একত্রিত করেছি মাত্র। বলতে পারেন, আমি এখানে সংগ্রহকারী। আরেকটু খোলাসা করে বলি। এই নোটে কোরানের লম্বা লম্বা সুরা-আয়াত, তর্জমা নিয়ে এসে জিলাপির প্যাঁচ লাগাতে চাই নি। কোরবানি নিয়ে কোরানের বক্তব্য কী, কোন আয়াতে কী আছে, আশা করি আপনারা তা জানেন। (তবু না জানলে বলবেন, বুঝিয়ে দিব ইনশাল্লাহ!) আর আমাদের বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের কোরবানি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিটাও বা কী, সেটাও আপনারা বোঝেন বলেই এ আদমের বিশ্বাস!

ঈদ-উল-আযহা = গরু/উট/দুম্বা কোরবানি = ঈদ আনন্দ, এই হচ্ছে সহজ সমীকরণ। মুদ্রার একটা পিঠ। মুদ্রার অন্য পিঠ দেখতে কেমন, আদৌ অন্য পিঠের কোনো অস্তিত্ব আছে কি না, সেটা পর্যন্ত অনেকেই জানে না!

আমি শুধু এই তালিকায় সেসব ভাবনাকেই ঠাঁই দিয়েছি, যা সমাজের এই প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ভিন্নমত পোষণ করে। প্রথার ঢাকনায় আবদ্ধ সমাজের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়, ধর্মজ্ঞান আর ধর্মীয়-নির্দেশ তো দূরের কথা, স্বাধীন চিন্তা আর মনুষ্যত্বটুকু পর্যন্ত বিলোপ পেয়ে গেছে প্রথার কাছে!

একদিনে লাখ লাখ গরু হত্যা করে পৈচাশিক উল্লাস পালন করে যে মোহবিষ্ট মুসলমানরা, আর অজুহাত দেখায় ধর্মীয় নিদের্শের, ঐশী বাণীর, এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ আর কতদিন চলবে... এমন প্রশ্ন তাড়িত করে নিশ্চয়ই প্রতিটি বিবেকবান মানুষের!! তাই তো এ উদ্যোগ, খুঁজে ফিরে ভাবনাগুলি একত্রে গাঁথুনি দিয়ে আপনার সাথে শেয়ার করা।

(১) আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ’র সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ সাদেক নূরী’র অভিমত : “প্রয়োজনে পশু জবাই করা, এর গোশত খাওয়া খাওয়ানো বৈধ; কিন্তু কোনো বিশেষ দিনে যত্রতত্র ও যথেচ্ছা পশু জবাই করে গোশত খাওয়া উৎসবকে কোরবানি আখ্যা দেয়া কোরআন সম্মত নয়। বস্তুতঃ ‘কোরবানি’ শব্দের সাথে ‘ঈদ’ শব্দের বন্ধন অর্থাৎ ‘কোরবানির ঈদ’ তথা ‘পশু জবাইর আনন্দ’ বাক ধারার প্রচলন কোরবানির উপরে বর্ণিত কোরানিক ধারণা ও শিক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করেছে। কারণ, তর্কের খাতিরে, কোরবানির তুচ্ছতম প্রতীক হিসাবে প্রচলিত পশু জবাইকে আল্লাহর প্রেমে হযরত ইব্রাহীমের সন্তান জবাই করার আর সন্তানের জবাই হওয়ার বিকল্প (?) যদি মেনেও নেয়া হয়, অপরদিকে ‘ঈদ’ সর্বসম্মত অর্থে আনন্দ; তা হলেও কোরবানির ঈদ অর্থ দাঁড়ায় পশু জবাইয়ের আনন্দ। বলা বাহুল্য যে, প্রয়োজনে পশু জবাই বৈধ হলেও আনন্দের জন্য পশু জবাই করা অথবা আনন্দ করে পশু জবাই করা অথবা পশু জবাইর আনন্দ কোরআন তো নয়ই, কোন সুস্থ বিবেকের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়।...মালয়েশিয়াতে মালদারগণ জীবনে একবার হজ্জ করেন এবং একবারই আলোচ্য সামাজিক যৌথ অনুষ্ঠানে পশু জবাইতে অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে ব্রুনাইর বাদশাহ ঐ বিশেষ দিনে সকলের পক্ষ থেকে একটি পশু জবাই দিয়ে থাকেন। আসলে যৌথ সামাজিক আনন্দ অনুষ্ঠান উপলে পশু জবাই করার ঐচ্ছিক বিষয়টি এরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে, এটাকে কোন মতেই কোরবান বলা সংগত নয়।”

(২) নয়া কৃষি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ফরহাদ মজহার বলেছেন : “... প্রাণী হত্যা দেখানো হয়েছে ধর্মের নামে। ইসলামের নামে। এই প্রাণী হত্যার মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করা হয়েছে যে ঠাণ্ডা মাথায় একটি প্রাণী জবাই করাই ইসলামের শিক্ষা। শুধু খেয়াল রাখতে হবে খুন হয়ে যাওয়া প্রাণীটির রক্ত যেন ধুয়ে গর্তে ফেলা হয় এবং ছালের ভাল দাম পাওয়ার জন্য প্রাণীটিকে পানি খাইয়ে ঠিক মতো ছাল ছিলে নেওয়া হয়। একবারও কেউ ব্যাখ্যা করে বলেনি যে কোরবানি ও প্রাণী হত্যা এক কথা নয়। আল্লা মানুষ যেমন পয়দা করেছেন, পশুকেও পয়দা করেছেন। ইসলামের যে আল্লাকে জানি তিনি তাঁর সৃষ্ট জীবকে এইভাবে জবাই হতে দেখবেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। কণ্ঠনালী ফেঁড়ে যাওয়া প্রাণীর কষ্টে তাঁর আর কেঁপে ওঠার কথা। কিন্তু এই আল্লার নামেই জবাই করা হয়, তাঁর সৃষ্ট জীবকে হত্যা করা হয় এবং এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী এই হত্যাকেই ‘কোরবানি’ আখ্যা দেয়। এদের যদি প্রশ্ন করা হয়, জবাই করা আর কোরবানির মধ্যে তফাৎ কি? তার কেউই উত্তর দিতে পারবে না।” (উৎস : দৈনিক ভোরের কাগজ, ৩০-১০-৯৪)

(৩) আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর সত্যের সন্ধানে গ্রন্থের ‘জীবহত্যায় পুণ্য কি’ প্রবন্ধে বলেছেন : “ কোরবানি প্রথার মূল উৎস সন্ধান করিলে মনে কয়েকটি প্রশ্নের উদয় হয়। প্রশ্নগুলো এমন-- (ক) হযরত ইব্রাহীম ‘স্বপ্নাদেশ’ তাঁহার মনের ভগবদ্ভক্তির প্রবণতার ফল হইতে পারে না কি? (খ) খোদাতালা নাকি স্বপ্নে বলিয়াছিলেন, ‘হে ইব্রাহীম, তুমি তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি কর।’ এই ‘প্রিয়বস্তু’ কথাটির অর্থে হযরত ইব্রাহীম তাঁহার পুত্র ইসমাইলকে বুঝিয়াছিলেন এবং তাই তাহাকে কোরবানি করিয়াছিলেন। হযরত ইব্রাহীমের প্রিয়বস্তু তাঁহার ‘পুত্র’ ইসমাইল না হইয়া তাঁহার ‘প্রাণ’ হইতে পারে না কি? ... (গ) কোরবানি কথাটির অর্থ বলিদান না হইয়া উৎসর্গ হইতে পারে কিনা। ঈসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্তান উৎসর্গের নিয়ম আছে। কোন সন্তানকে তাহার পিতামাতা মহাপ্রভুর নামে উৎসর্গ করিতে পারেন। ঐরূপ উৎসর্গ করা সন্তানের কর্তব্য হয়-সর্বস্বত্যাগী হইয়া আজীবন ধর্মকর্ম ও মন্দির-মসজিদের সেবা করা।... (ঘ) যাঁহারা স্বপ্নতত্ত্ব আলোচনা করেন, তাঁহারা জানেন যে, স্বপ্নদ্রষ্টা স্বপ্নে যাহা কিছু দেখে, তাহার মধ্যে অধিকাংশই থাকে ‘রূপক’। হযরত ইব্রাহীমের স্বপ্নের কোরবানির দৃশ্যটি ‘রূপক’ হইতে পারে কিনা? উপরিউক্ত বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করিলে মনে হয় যে, কোরবানি প্রথার ভিত্তিমূল সুদৃঢ় নয়। একটি স্বপ্নের উপর ভিত্তি করিয়া প্রতি বৎসর লক্ষ লক্ষ পশুর জীবন নষ্ট হইতেছে। উপন্যাসকে ইতিহাস বলিয়া গ্রহণ করিলে যেরূপ ভুল করা হয়, স্বপ্নে রূপককে বাস্তব বলিয়া গ্রহণ করি সেইরূপ ভুল হইতে পারে না কি?

(৪) রুহুল আমিন তাঁর ‘বনের পশু নয় মনের পশুর কোরবানি চাই’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, জীবহত্যা নিষিদ্ধ অথবা গরুকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করার মানসে এ লেখার অবতারণা নয়। কেননা, জীব সংহার করেই জীবের অস্তিত্ব টিকে থাকে এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি গরু খাওয়ার মধ্যে মুসলমানিত্ব অথবা গরু ও মুসলমান একাকার করার মানসিকতাও বিভ্রান্তিকর। আরবের মুসলমানরা খাওয়ার জন্য গরু পায় না। সেখানে উট ও দুম্বা। ভারতবর্ষই হলো গরু উৎপাদনের উপযুক্ত স্থান। ভারতীয় মুসলমানরা তাদের জন্মস্থান থেকে গরু খাওয়ার অভ্যাস ধাতস্থ করে। পূর্বপুরুষরা গরু খেত। সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও গো গ্রোসে গরু খেতেন। শুধু গরু নয়, ঘোড়া, মহিষও তাদের খাবার তালিকায় ছিল।... কোরবানি যাতে আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো পশু নিধন অনুষ্ঠানের মহোৎসবে পরিণত না হয় এমন আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ) বা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মতো সাহাবীগণ কখনো পশু কোরবানি দিতেন না। (দ্রষ্টব্য : ইমাম সাফি, কিতাব-উল-ঊম্মা, ভল্যুম-২, পৃষ্ঠা ১৭৯)। সেসময় সাধারণত একটি গোত্রের সকল মানুষের পক্ষ থেকে একটি মাত্র পশু কোরবানি দেয়া হত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও পুরো বনী হাসেম গোত্রের পক্ষ থেকে একটি পশু কোরবানি দিতেন। (দ্রষ্টব্য : নাহেল আল-আউতার, ভল্যুম-৫, পৃষ্ঠা ১৭৭)।” দোহাই : বেনজীন খান সম্পাদিত পশু কোরবানি : একটি বিকল্প প্রস্তাব (সংস্কার আন্দোলন, ১ম সংস্করণ, প্রকাশ ২০০৫)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন