বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১১

আল্লাকে লেখা চিঠির উত্তর


পড়া না থাকলে আগে পড়ে নিন আল্লার কাছে চিঠি। 

লিখেছেন ডাইনোসর 

তারিখ: দশ মহরম,হিজরী ১৪৩৩
বার্তাবিভাগ,আল্লার আরশ
সর্বোচ্চ তলা, সপ্তম আসমান।

জনাব মোহাম্মদ ডাইনোসর ইসলাম,

আপনার চিঠি পেয়েছি। উপরে আপনি কোনো ঠিকানা না দেয়ায় এবং নিচে এমন অদ্ভুত নাম থাকায় ভগবান, ঈশ্বরসহ সবাই তাদের নিজের বলে দাবী করতে শুরু করে। এক-এক জন এক-এক ব্লগকে তাদের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে। কিছু ব্লগে আপনার পোষ্ট এবং কিছু ব্লগে আপনাকে আইপি সহ ব্যান করায় তারা লিংক দিতে ব্যর্থ হয়। এবং তাদের কাছে কোনো প্রিন্ট কপি না থাকায় তারা বাতিল বলে গণ্য হয়। শেষ পর্যন্ত আপনার নামের আগের এবং পরের টাইটেল দেখে আমার দাবী জোরালো হয়।

তবে এই ব্যপারে শুনানির পুনরায় তারিখ এখনো ধার্য হয় নাই। চিঠিটা বাংলা ভাষায় হওয়ায় আমরা উকিল এবং বিচারক সবাইকে বাংলাদেশ থেকে এনেছিলাম। তারা টাকা ছাড়া কোনো ফাইলে হাতই দেয় না। আর উকিল গুলো কিসের লীগ, না দল বলে মিছিল করে, শুনেছি আদালত নাকি বর্জন করার হুমকিও দিচ্ছে। এক চিঠি আমাদের কী বিপদে ফেলসে, বলেন তো?

আপনার চিঠি পেয়েছি, মানুষের সাথে আমাদের অনেক দিন যাবত যোগাযোগ না থাকায় আমারাও হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু চিঠিটা ব্লগে পোষ্ট করায় আমরা ঈশ্বর সমাজ খুব কষ্ট পেয়েছি। অনেক ব্লগার আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে। কোথাও কোথাও উদ্ভট ব্যাখ্যা করে বিরোধী পোষ্টও দেয়া হয়েছে। এতে করে বিশ্বাসীদের কাছে আমাদের ইমেজ আরো খারাপ হওয়ার অবস্থা।

বাংলাদেশে আমার অবস্থান খুবই ভাল। জামাতের মতো একটা ছাগুদের দলও আমার পক্ষে আছে। ঐখানে কৃষ্ণ, যীশু, অন্যরা এমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এইটা একটা শান্তির খবর। কিন্তু আপনার মতো কিছু অবিশ্বাসী যেভাবে আমাদের পেছনে লেগেছেন, তা একটা বড় টেনশানের কারণ হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের কারণে আমাদের ঈশ্বর সমাজে ভাঙ্গনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

আরব রাজ্যগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে গডের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। তবে সোমালিয়ানরা ভাল কাজ করছে। খুব দ্রুতই অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। ব্রিটেনেও আমার সমর্থকরা কলোনি করার চেষ্টা করছে।

দেখুন, আমরা যুগ-যুগ ধরে বিশ্বাসীদের অন্তরে বসবাস করে আসছি। আমাদের যদি একবারে উড়িয়ে দেন, তা হবে অমানবিক। তাই এই ব্যাপারে আপনাদের সাথে একটি চুক্তি করতে ইচ্ছুক। আমি নিজেই পৃথিবীতে দেখা করতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিলাম। কিন্তু আমার উপদেষ্টারা নিষেধ করায় যেতে পারিনি। তাদের ধারণা, অবিশ্বাসীদের সাথে আমি শান্তি চুক্তি করলে আমার অনুসারীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তারা আবার আরবের মতো যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে? তখন কী করবো? এই অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থায় এই ঝুঁকি নিতে রাজি হলাম না।

আমার পরিস্থিতি বিবেচনাকর করেন। আপনাদের নতুন যে মন্ত্রী নিয়োগ পেয়েছে, তার উপর গ্রামীণ ফোনের ইন্টারনেটের অবস্থা জঘন্য রকমের খারাপ, লম্বা চিঠি পাঠানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। উইকিলিসের ঝামেলার কারণে গোপন ব্যপারগুলো চিঠিতে বললাম না। আপনার সাক্ষাতেই বাকিটা বলবো। যদি আপনাদের পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধি পাঠান, তবে আমাদের খুবই উপকার হয়। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি আপনিই একটু সময় করে আমার এখানে পদধুলি দেন।

ইতি

আল্লা মিঞা।

এটাতো সাধারণ কোনো চিঠি নয়। তাই এটি কীভাবে আমার কাছে আসলো, তা নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে।

মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠেই দেখি টেবিলের উপর একটা আলো ঝলমল করছে। দরজা-জানালা বন্ধ। বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ, তবে আলো কোথা থেকে আসে? এবার দেখি আমার টেবিল থেকে। টেবিল ল্যাম্পটা অনেক দিন ধরে নষ্ট। আজ কি হঠাৎ ঠিক হয়ে জ্বলা শুরু করেছে নাকি? না, ল্যাম্প নয়। একটা খাম। সাদা রঙের। তার ভেতর থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে।

খামটাই আসলো কী করে? ঘুমানোর আগে কি তবে লক্ষ্য করি নাই? আগেই বা রাখবে কী করে, আমার রুমের চাবি তো কারো কাছে নেই। দ্রুত লাইট অন করলাম। দেখি, সমস্যাটা কোথায়, ধরতে পারি কি না। খামটা হাতে নিতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। খামটা হাতে নিতেই আলোটা মিলিয়ে গেল।

হঠাৎ এক দৈববাণী শুনতে পেলাম।

হে ডাইনোসর, থাম। তুইন ইতা হরতে হারবি ন।

কী বিষয়, নোয়াখালী ভাষার কথা শুনলাম মনে হচ্ছে? আমি কৌতূহলে জানতে চাইলাম। আঁন্নে কেডা, আঁন্নে নখাইল্লানি?

গ্যাব্রিয়েল: চুপকর বেয়াদব। আঁই আল্লাতন আইছি। আঁর নাম গ্যাবরিয়েল। আন্নে নখালি থাহেন, এরলাই আল্লা প্যাক আঁরে নখালি ভাষা শিখাই হাডাইছে। কিন্তু আন্নে নখালি নাই। সিলটে থাহেন। আঁই সিলটে আই বহুত ঝামেলায় হচ্চি। আল্লা প্যাক আঁরে সিলটি ভাষাটা শিখাই দেওন দরকার আছিল। হালায় এই হিয়ন হোস্টে আর চাকরি কইত্তে হাত্তাম না।

সবকিছু অন্ধকার, আমি হাতরাচ্ছি একটা দিয়াশলাই পাই কি না। ঠিক আছে, দেয়াশলাই নিয়ে মোম জ্বালিয়ে পড়ি?

গ্যাব্রিয়েল: ইতা মোমের আলোয়ও হরন যাইতো ন।

ঠিক আছে, ম্যাসের কাঠি জ্বালাই।

গ্যাব্রিয়েল: না, এটা ম্যাসের কাঠির আগুনেও হরন যাইতো ন।

ম্যাসের কাঠিতে একটা হারিকেন ধরিয়ে পড়বো।

গ্যাব্রিয়েল: না ইতা হারিকেনের আলোতেও হরন যাইতো ন।

ঠিক আছে, বাইরে যাই দেখি, পৌরসভার বিদ্যুত বাতি জ্বলে কি না?

গ্যাব্রিয়েল: ইতা বিদ্যুতের আলোতেও হরন যাইতো ন।

আমি মহাবিরক্তি। তবে কি চিতার আগুনে পড়তে হবে?

গ্যাব্রিয়েল: আঁন্নের হগল কতার উত্তর দিতাম কিল্লাই?

আমি কিছু বলতে চাইছিলাম। আবার কিছুটা ভয়ও করছে।

তবু জানতে চাইলাম তবে পড়বো কী করে?

গ্যাব্রিয়েল: বিশ্বাসের আলো জ্বালাই হরতে হয়। ইডা আললা হাকের হুকুম।

বিশ্বাসের আবার আলো হয় কী করে। বিশ্বাস মানেই তো অন্ধকার।

গ্যাব্রিয়েল: চুপ। একদম চুপ। আল্লা আল্লা যাই কইছে হেতাই করতে হইবো। কোন চুদুরবুদুর চলতো ন।

চুপ করলে কি বিশ্বাসের আলো জ্বলবে?

গ্যাব্রিয়েল:না। ইলাইগ্গা আন্নের ছিনার ভিতরে বাতাস ভরতে অইবো।

আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমার সিনা। মানে বুক ছিদ্র করে বাতাস ভরবে? আমি কি তাহলে বাচুম? হালায় হাগল নাকি? আর একটু সাহস সঞ্চয় করে বললাম, আমি তো নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাস নেই, ভেতরে তো বাতাস ঢুকে। আর মানুষতো বাতাস ছাড়া...

গ্যাব্রিয়েল: ইতা বাতাস অইত ন। পিতিবির বাতাস নষ্ট অইগেছে।

আমার কি এখন চান্দে যাইতে অইবে? পৃথিবীর কাছাকাছি একমাত্র ঐখানেই মানুষ গেছে। চান্দে যে বাতাস নাই আমি তারে কমু না। আগে চান্দে নিয়ে যাক।

গ্যাব্রিয়েল: আন্নে হুইতা থাহেন। আঁই ব্যবস্তা করতাছি। এই হেতের চাইপা ধর।

আমি চিল্লা চিল্ল করার আগেই আমার হাত মুখ গলা সবাই মিলে ধরেফেলে। হালায় যে একলা আসে নাই এইডা আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল।

তার পর কিছু কইতে পারি না। অনেক পরে উঠে বসলাম। তখনো অন্ধকার। গ্যাব্রিয়েল হালায় সামনে দাঁড়িয়ে হাসে।

গ্যাবরিয়েল: আঁন্নের কাম শ্যাষ, আন্নে এহন হত্তে হারবেন। আঁর লগেলগে শুরো করেন "পরম করুনাময়(লা) আল্লা হাকের নামে শুরু কচ্ছি...." বলেই চিঠি খানা পড়ে শোনালেন। ঘুম থেকে যখন জেগে উঠলাম তখন সকাল। টেবিলে কোনো চিঠি নাই।

চিঠিটা থাকলে স্ক্যান করে দিতে পারতাম। এতে আপনাদের ঈমান আরো মজবুত হইতো। কী আর করা! আমার স্মরণ শক্তি থেকে যেটুকু পেরেছি তুলে দিয়েছি। পুরা উত্তরটাই ছিল পুরান ঢাকা, চাটগাইয়া, ময়মনসিং এবং সিলেটি ভাষার সংমিশ্রিত। আমি সহজ বাংলায় স্মৃতি থেকে মূল বক্তব্যটা তুলে দিচ্ছি। ভুল-ভ্রান্তির জন্য আল্লা দায়ী নয়।

সকালে উঠে বিদ্যুৎ অফিসে খবর নিতে গেলাম রাতে কেন বিদ্যুৎ গেল? তারা বলে না রাতে কোন লোডশেডিং ছিল না। তার পর পাশের বাসায় খবর নিলাম। তারাও লোডশেডিং পায় নাই। তখন পাশের রুমে খবর নিলাম। সে বলল, আমি সারারাত কম্পিউটারে গেমস খেলতেছিলাম। কোনো বিদ্যুৎ যায় নাই। কী বলেন এই সব?

আমি এতক্ষণে বুঝতে পারলাম। এই সব অলৌকিকভাবে ঘটেছে। এসব গ্যাব্রিয়ালের কাণ্ড। কেউ যদি আমার ঘটনাকে অবিশ্বাস করেন, তবে প্রমাণ করেন বিদ্যুত কেন গেল? প্রমান করেন চিঠি কোথায় গেল?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন