আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১২

ধর্মগুরু হইবার রেসিপি


লিখেছেন জুপিটার জয়প্রকাশ 

আপনি কি ধর্মীয় জগতে বিপ্লব করে একজন ধর্মপ্রণেতা হতে চান? তাহলে এই রেসিপি আপনার জন্য। কিন্তু এই রেসিপি সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য আগে হিউম্যন সাইকোলজি নামক একটি মজার বিষয়ে কিছু জ্ঞান লাগবে। আসুন তবে, জ্ঞান দেওয়া শুরু করি।

প্রত্যেক মানুষের সাধারণ স্বভাব হল: 

১. তারা এখন এখন যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে ভাল অবস্থায় থাকতে চায়।

২. তারা শর্টকাট ভালবাসে। কম পরিশ্রমে বেশি ফল পেতে চায়। অন্য কেউ তার কাজ করে দিলে আরো খুশি হয়।

৩. তারা প্রশংসা পছন্দ করে। নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করে।

৪. তারা বাড়িয়ে গল্প বলতে ভালোবাসে।

৫. অজানা জিনিষের প্রতি তাদের মনে ভয় এবং কৌতূহল দুইই থাকে। তারা নিজে নিরাপদে থেকে জ্ঞান চায়।

এইবারে আসুন দেখি কিভাবে এই মানবিক ধর্মগুলোকে কাজে লাগিয়ে তাদের কাছে ভাল হবেন: 

১. প্রথমেই আপনাকে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। তবেই তারা আপনার কাছে জড়ো হবে। মনোযোগ আকর্ষণের একটা পথ হল, কোনো প্রচলিত বিশ্বাসের উপরে প্রশ্ন তোলা। যেমন “মূর্তিপূজা করে কী হয়?” ইত্যাদি। বা জ্ঞানগর্ভ কথা, কিম্বা মানুষের উপকার করা এইসব। সাহিত্য, গান, ইত্যাদিও চলবে। দেখবেন, কিছু কিছু করে মানুষ আপনার দিকে মনযোগ দেবে।

২. এবারে প্রচার করতে হবে যে, মানুষের বড় দুঃখ। আপনি সেই দুঃখ দূর করার উপায় তালাশ করছেন। যেহেতু সব মানুষই নিজের বর্তমান অবস্থাকে আরো ভাল করতে চায় কাজেই তারা আপনাকে ভালবেসে ফেলবে।

৩. কিছু কিছু মানুষ আপনার কাছে আসবে। আপনাকে তাদের দুঃখে গলে যেতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, তারা না জেনে ভুল করে এসেছে বলেই তাদের এত দুঃখ।

৪. আপনি যখনই তাদের বলবেন যে, ঈশ্বরকে ভক্তি করে ডাকলে তিনি তাদের দুঃখ দূর করবেন, তখনই কথাটা তাদের দারুণ পছন্দ হবে। (কারণ তারা শর্টকাট ভালবাসে। অন্য কেউ কাজটা করে দিলে খুশি হয়।)

৫. চুরি, ঘুষ, মাতলামি ইত্যাদি কাজ, যেগুলো সবাই খারাপ বলে জানে, সেগুলোর ব্যাপক নিন্দা করতে হবে। এতে আপনার খ্যাতি আম পাব্লিকের মধ্যে ছড়াবে। সকলেই আপনাকে একজন সৎ মানুষ বলে জানবে।

৬. আপনি তাদের প্রশংসা করলে তারা সহজে আপনার নিন্দা করবে না।

৭. তারা যখন আপনাকে পছন্দ করবে তখন অন্যের কাছে বাড়িয়ে গল্প করবেই। (কারণ এতে সে নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করার সুযোগ পাবে) । এতে আপনার প্রচার হবে।

৮. এই সময়ে সকলের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। অন্য ধর্মকে খারাপ বলা চলবে না। বললে ইঁটের জবাবে পাটকেল খাবেন। 

দ্বিতীয় ধাপ হল যে, তারা আপনার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করবে। 

১. আপনাকে সোজা কথাকে একটু ঘুরিয়ে বলতে হবে। এমন কথা বলতে হবে যেটা সকলেই জানে। কিন্তু এমন ভাবে বলতে হবে যাতে প্রথমে শুনে নতুন কিছু মনে হয়। এতে লোকে আপনাকে জ্ঞানী ব্যক্তি বলে মনে করবে।

২. এই পর্যায়ে আপনার কিছু চামচা দরকার হবে। যারা আপনাকে ঘিরে বসে আপনার পছন্দমত প্রশ্ন করবে। আপনি তার উত্তর দেবেন। তারা জয়দ্ধ্বনি করবে। তারা যে আপনার কথা নির্বিচারে বিশ্বাস করে দারুণ লাভবান হয়েছে এই কথা প্রচার করবে।

৩. আপনার সাথে যে ঈশ্বরের যোগাযোগ আছে, সেই কথা এই সময়ে ইশারায় জানাতে হবে। কোনো প্রশ্ন শুনে মাঝে মাঝে চোখ বুঁজে বসে থাকবেন, কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলে উত্তর দেবেন। কখনো অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে। কখনো বা “প্রভু হে... সকলই তোমারই ইচ্ছা’ বলে স্লোগান দিতে হবে।

৪. লুকিয়ে কিছু পড়াশুনা করা লাগবে। কিছু লোক লাগিয়ে খবর যোগাড় করতে হবে। পরে আপনার জানা (অন্যের অজানা) কথাগুলো এমন কায়দা (আগেরটা দেখুন) করে বলতে হবে যাতে আম লোকের মনে হয় সেগুলো সোজা ঈশ্বরের কাছে থেকে পেলেন।

৫. কিছু ভাড়াটে লোক রাখতে হবে যারা এসে আপনাকে চ্যালেঞ্জ করবে। আগে থেকে শিখিয়ে রাখা অদ্ভুত প্রশ্ন করবে (যেমন বলতে পারে যে, আমার কয়টা পোলা? কিম্বা আমার পকেটে কয় টাকা আছে?) আপনি তার উত্তর দিয়ে সবাইকে চমকে দেবেন।

৬. গোটা কয় লোককে কানা খোঁড়া সাজিয়ে নিয়ে আসতে হবে। আপনার বিশেষ চেলা বাহিনী বেছে বেছে তাদের আপনার কাছে আনবে। যাতে কোনো আসল কানা-খোঁড়া না এসে যায়। তার পরেও যদি কেউ এসেই পড়ে তাদের ইমান যে অতি দুর্বল তাতে সন্দেহ করা চলবে না। খুব বেশি ঠেকায় পড়লে অজ্ঞান হয়ে ঈশ্বরের সাথে মিটিং শুরু করে দিন।

৭. বড় করে সভা করুন। আপনার ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে লেকচার দিন। সব যে আপনার নিজের অভিজ্ঞতা সেই কথা জোর গলায় প্রচার করুন।

৮. আপনার অলৌকিক ক্ষমতার কথা বাজারে ছড়াতে হবে। কিছু লোক রাখুন যারা নিজের চোখে এইসব দেখেছে বলে দাবী করবে। বাস্তবে এই ঘটনা ঘটানোর কোনো দরকার নাই। কেবল কয়েকজন সাক্ষী আর ব্যাপক প্রচার চাই। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, দর্শকদের ঘড়ির সময় বদলে দেওয়ার ম্যাজিকের গল্প অনেকেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু বাস্তবে এমন ম্যাজিক কেউ কখনোই দেখান নাই।

৯. কোনো ঘটনা ঘটার পরে প্রচার করতে হবে যে আপনি সেই বিষয়ে অভ্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এই অভ্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী প্রমাণ করার জন্য আপনার ‘হয়রাণ ভাই’ বা ‘মাহফুজ ভাই’ বা ‘ইয়াজিদ সিকান্দার ভাই’ এর মত কিছু ভক্ত লাগবে। এছাড়া জনাদশেক সাধারণ চামচা লাগবে যারা তাদের জীবনে আপনার কথা এক্কেবারে মিলে যাবার কথা বলে বেড়াবে।

১০. নিজেই ভবিষ্যদ্বাণী  করা শুরু করুন। তার জন্য আগে নস্ট্রাডামুস মশাইয়ের লেখাগুলো পড়তে পারেন। এই বিষয়ে অনেক সাইট আছে।

উপরের সব কাজগুলি সঠিক ভাবে করতে পারলে আপনার সম্পর্কে মানুষের ধারণা হবেই যে, আপনি কারো খারাপ চাইতেই পারেন না। আপনি কখনো ভুল বলতেই পারেন না। আপনার সঙ্গে ঈশ্বরের সরাসরি যোগাযোগ আছে বলেও অনেকে মনে করবে।

তৃতীয় ধাপ হল কিছু ধর্মীয় বিধান চালু করা: 

১. আপনি যা করেন বা বলেন তা সবই ঈশ্বরের নির্দেশে, আপনার কথা শুনে যারা চলে তাদের যে বেহেস্ত নিশ্চিত এই কথা সরাসরি বলে ফেলুন।

২. যারা আপনার মতের বিরুদ্ধে যায় তারা যে ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই বেকুবি করে সেটাও বলে ফেলুন। তবে সেটা করার আগে তাদের ক্ষমতার মাপ নিতে হবে। পাটকেল খাবার ভয় থাকলে বলুন যে, তাদের ঈশ্বর আর আপনার ঈশ্বর আসলে একই। কিন্তু তার পরেও ইশারায় জানান যে আপনারটা বেশি সহজ।

৩. যেভাবে ছেলেপিলের নাম দেয় সেভাবেই আপনার ঈশ্বরের একটা নাম ঠিক করুন, যেটা ইউনিক হবে (পরম দয়াল, সর্বশক্তিমান ইত্যাদি)।

৪. একটি উপাসনা পদ্ধতি বানান। ইউনিক না হলেও চলবে। আপনার অনুগামীদের নেচার বুঝে সেটা বানাতে হবে।

৫. আপনার বিধানগুলো যে মানুষের ভালোর জন্য, এগুলো না মানলে যে মহা সর্বনাশ নিশ্চিত, সেই কথা পরিষ্কার করে বলুন। যারা মেনে চলবে তাদের জন্য দারুণ পুরষ্কার এবং বাকিদের জন্য বেদম শাস্তি অপেক্ষা করছে, এই কথাও বলে দিন।

আপনার ধর্মীয় বিধানগুলো কেমন হবে? 

১. প্রথমেই দিন একটা লম্বা লিস্ট, চুরি, ডাকাতি, খুন, মিথ্যাকথা, নেশা আরো কী কী কাজ খারাপ। আর একটা লিস্ট দিন ভালো কাজের, এতে সততা, পরোপকার, জ্ঞান অর্জন, অন্যকে সম্মান, হিংসা না করা ইত্যাদি ভালো জিনিস দিন। এতে আপনি ভালো লোকেদের দলে পাবেন।

২. নারীজাতির অধিকার, সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে কিছু বুলি ছাড়ুন। এতে ভদ্রলোকেরা এবং মেয়েরা আপনার দলে এসে যাবে।

৩. বলুন ‘আপনার ধর্মে ধনী-গরিব সমান।' এতে গরিবেরা আপনার দলে এসে যাবে। গরিবদের না হলে যেহেতু ধনীদের চলেনা, তারাও নিজেরাই এসে যাবে।

৪. এবারে বলুন যে, সত্যকে রক্ষার জন্য সংগ্রামে রক্ত ঝরাতে ভয় পাওয়া উচিত না। এই বুলি শুনে সংগ্রামী বীরের দল আপনার দলে এসে যাবে।

৫. বলুন ক্ষমাই পরম ধর্ম। এতে যারা দায়ে পড়ে অপরাধী তারা আপনার দলে এসে যাবে।

৬. বলুন অসাধুর সঙ্গে (মানে যারা আপনার দলে নয়) যুদ্ধ করা ভাল কাজ। এতে লড়াইবাজ লুটেরার দল আপনার দলে এসে যাবে।

৭. বলুন আপনার ধর্মে পাপীদের পাপ দূর করে তাদের বেহেস্তে পাঠাবার ব্যবস্থা আছে। এতে দলে দলে বদলোক আপনার দলে এসে যাবে।

এইভাবে এমন একটা ধর্ম বানান, যাতে সকলের সুবিধা হয়। দল ভারি হওয়ার পর আপনি সেই দলের মেজাজ বুঝে দেখুন যে, কাদের মন জোগালে আপনার লাভ। যদি দেখেন লড়াইবাজ লোকের দাম বেশি তবে জেহাদ লাগান। যদি মর্দ জোয়ানের দাম মেয়েদের চেয়ে বেশি বোঝেন তবে বৌ পিটানোর বিধান দিন। দুবলারা ঝামেলায় জিততে না পেরে মাথা নামিয়ে মেনে নেবে।

কিন্তু যতদিন দল ভারি না করতে পারেন, ততদিন শান্তির বুলি ছাড়া অন্য কিছু মুখে আনবেন না। অবশ্য মুখে শান্তির বুলি সারা জীবনই চালাতে হবে।

এইভাবেই আপনি হয়ে যাবেন একটি নতুন ধর্মের প্রবর্তক। যাতে বিজ্ঞানী থেকে অজ্ঞানী সবার জন্য সস্তায় পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা থাকবে।

আপাততঃ এই পর্যন্তই থাক। আশা করি কারো বুঝতে অসুবিধা হলে জানাবেন। তাঁর জন্য আরো ডিটেলে দেওয়া যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন