লিখেছেন নাসির আবদুল্লাহ
'নাসির ভাই, ও নাসির ভাইইইই' ডাক শুনে চমকে গেলাম। অপরিচিত কন্ঠস্বর, উপরন্তু কেমন যেন নাকি নাকি সুর।
(গভীর রাত্রে একটা চেয়ারে একা বসে আছি বন্ধুর বাড়ির বাগানে। বন্ধু আমার সবজান্তা, সে আস্তিকও না আবার নাস্তিকও না, সে তর্কবাগিশ। তার স্বভাব হচ্ছে তর্ক করা, নাস্তিকদের টেবিলে সে আস্তিকের পক্ষে কথা বলে আবার অস্তিকেদের টেবিলে সে বিশাল নাস্তিক। সর্ব বিষয়ে তার অফুরন্ত জ্ঞান, ছাগু-মার্কা জ্ঞান না, সত্যিকার পড়াশুনা করা জ্ঞান। সন্ধ্যার অধিবেশন একটু কড়া হয়ে যাওয়াতে সে ঘুমিয়ে পড়েছে, বউরা! কেউ বাসায় নেই। হ্যা, তার চার চারটি বউ! একটি সুইডিস (গির্জার সিস্টার), একটি মেক্সিকান (মাঝারি কাতারের গায়িকা), একটি পার্শ্ববর্তী দেশের (অসম্ভব সুন্দরী) আরেকটি বাংলাদেশী (ভূগোলবিদ), চার বউয়ের ছয় সন্তান সবাই মিলে এই একই বাড়িতে থাকে। আমার জানা সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম আমার এই বন্ধু। যাহোক বন্ধুর গল্প আরেকদিন বলব।)
- কে?
- নাসির ভাই, আমি ইবলিশ।
এই আজিব রসিকতায় ভড়কে গেলেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কী চাও?'
- আপনের সাথে কিছু আলাপ আছিল, নাসির ভাই।
- বলে ফেল।
- আপনে আদাজল খাইয়া আমার পিছনে লাগছেন ক্যান?
- বাহ রে, বল কী তুমি! আস্তিকরা বলে, আমি নাকি ওদের পিছনে লাগছি। আবার তুমিও বলছ যে, আমি তোমার পিছনে লাগছি, আমার কি দুই কুলই গেল নাকি?
- নাহ! কথা সেইডা না, আপনেরে আমি খুব ডরাই।
- কেন?
- ওই যে আপনার মাথার মইদ্দে সব সময় সম্ভাবনা উকি দেয়, আপনি অংকে কাঁচা কিন্তু সম্ভাবনাগুলা বেশির ভাগই ঠিক।
- ঝেড়ে কাশ ত বাপু, বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।
- নাসির ভাই, আপনের সব পুকুরের মাছ আমি ডবল কইরা দিমু, ট্রিপল কইরা দিমু যদি আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখেন।
- বলতে থাক।
- আপনি মুহম্মদের পিছু ছাইড়া দেন।
- কেন?
- মুহম্মদ যে আমার সাধনার ফসল, এইটা আপনি বুঝেন না?
- কীভাবে?
- প্রায় ১৩শ কোটি বছর আগে যখন কেন্দ্রীভূত অসীম বল বিস্ফোরিত হয়ে গেল, তখন চাপ কমে যাওয়াতে প্রায় সমস্ত শক্তিই বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়, কিন্তু কিছু বোসন কণা আর ফোটন কণা হিগস ফিল্ডের প্রভাবে ভরহীন হয়ে থেকে যায়।
- তুমি কী? ফোটন না বোসন?
- আমরা শয়তানরা বোসন, ফোটন হচ্ছে মুহম্মদের আল্লাহ।
- আমি তো বিজ্ঞানী না, তুমি আমাকে এসব বলছ কেন?
- এর মধ্যে বিজ্ঞানের কিছু নাই, আপনার শোনা দরকার।
- বলতে থাক যদি কিছু বুঝতে পারি।
- মহাবিশ্ব যদি এক্সপ্যান্ড হতেই থাকে, তবে একদিন সমস্ত নক্ষত্র নিভে যাবে, ফোটন হারাবে তার আলো, নিউট্রনের কেন্দ্রীয় বল কমে যাবে তখন সমস্ত বোসন কনারা (আমরা সমস্ত ফেরেস্তারা) মুক্ত হয়ে যাব, কিন্তু আল্লাহ তা চায় না, সে চায় মহাবিশ্ব সংকুচিত হোক, আবার বিগব্যাং হোক, যাতে করে সমস্ত বস্তু আবার শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে এবং ইলেকট্রন প্রোটন বোসন সব ভেঙ্গে শুধু মাত্র ফোটনের অস্তিত্ব টিকে থাকে। কিন্তু আমরা তা চাই না, আমরা চাই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে প্রসারিত হোক, ফোটনের মৃত্যু হোক।
- তাতে তোমাদের লাভ কী?
- ফোটনের মৃত্যু হলে আমরা বোসনেরা আপনাদের জন্য আলো ছড়াবো, আমরা সংখ্যায় অসীম। অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন আপনারা এবং আমরাও।
- বাহ বেশ! আমি কী করতে পারি?
- আপনি শুধু মুহম্মদের পিছা ছাইড়া দেন, ইসলামরে একটু জলদি প্রসার হইতে দেন।
- ইসলামের প্রসার হলে তোমার লাভ কী?
- নাসির ভাই, আপনি বুইঝাও না বুঝার ভান করেন ক্যান? ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মগুলার যত প্রসার হবে, মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে ততই দূরে চলে যাবে, মানুষ কিছু বুঝে উঠবার আগেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
- পৃথিবী ধ্বংস হলে তোমার কী লাভ?
- মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করলে একদিন বুঝে যাবে যে, মহাবিশ্ব নিখুঁত নয়, আপনারা হেলফিন গ্রহের বাসিন্দাদের খুঁজে পেয়ে যাবেন, তারপর একসাথে মিলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করবেন।
- তুমি ভাবলা কীভাবে যে, আমি মানুষের ক্ষতি করতে রাজি হব? আরো বললা যে, ফোটন মইরা গেলে তোমারা মানুষদেরকে আলো দিবা? আসলে কী চাও?
- নাসির ভাই, আসলে ত মানুষ বইলা কিছু নাই, সবই কণা আর কণার যোগফল/কম্বিনেশন। আপনি কী চান? যেভাবে চলতেছে সেইভাবেই চলুক নাকি আবার বিগব্যাং আবার নতুন এক্সপেরিমেন্ট?
- আবার বিগব্যাং হলে তোমাদের অসুবিধা কোথায়?
- অসুবিধা আছে। নেক্সট বিগব্যাং-এ কোনো গ্যারান্টি নাই যে কণাদের অবস্থা কী হবে বা কেমন হবে, আমরা সবাই অস্তিত্ব হারাতে পারি।
- হুম, তাহলে আল্লাহ কেন চায় আবার বিগব্যাং হোক?
- সে হইতেছে বড় প্লেয়ার নাসির ভাই। তার এমনিতেও কিছু নাই ওমনিতেও কিছু নাই। সে থাইকাও নাই, তাই সে রিস্ক নেয়ার পক্ষপাতী।
- আচ্ছা, বুঝছি, যাও, নতুন বিগব্যাং আর হবে না, কিন্তু তাতে তোমার কিছু লাভ দেখি না।| ফোটনও মরবে আর তোমরা বোসনেরাও মরবা, মানুষ বেঁচে থাকবে চিরকাল। আমরা অন্ধকারে বেঁচে থাকা শিখে যাব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই, হেলফিন গ্রহের তথ্য দেবার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
- নাসির ভাই এল্লাইগায় ত আপনারে আমি ডরাই। কিছুদিন আগে আপনি যখন আল্লারে স্বপনে দেখলেন, হেই বেডাও ডরে আপনারে সব কথা খুইলা কয় নাই। আপনার সব পুকুরের সব মাছ আমি একশো গুণ কইরা দিব, আসেন সবাই একসাথে বাঁচি। আমি এই ব্যাপারেআল্লার সাথে বৈঠক কর....
নাসির, নাসির! ওই বেটা উল্লুক, এত রাইতে তুই ঠাণ্ডায় বরফের মইদ্দে একলা একলা বইসা কী করস? ভাবীরে ফোন দেস নাই কেন আইজকে? যা ব্যাটা, কথা ক গিয়া তার সাথে।
ঘোর কাটেনি তখনও, হাতে ফোন নিতেই ওপাশ থেকে দাদির চিত্কার, "ওই হারামজাদা, কই থাকস রে রাইতের বেলা? মিলি নাকি তুরে ৩ বার মোবাইল মাইরা পায় নাই?
দাদী, শয়তান... ওই বদমাইশ, তুই আমারে শয়তান কস?" ঘচ করে লাইন কেটে গেল।
দেখি, ঘোর কাটলে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন