আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী: মুহাম্মদ ও ওমিক্রনিক রূপান্তর


লিখেছেন হিমালয় গাঙ্গুলী 

মুহা! মুহা!

মুহা ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল। তার নিও পলিমারের পোশাক ঘামে ভিজে গেছে। চারিদিকে শুনশান। কিন্তু একটু আগেও মনে হচ্ছিল কেউ তাকে ডাকছে। সে পকেট থেকে ক্রিস্টাল রিডারটি বের করল। অ্যা লির সাথে যোগাযোগ করা দরকার। মুহা ক্রিস্টাল রিডারে গোপন সংখ্যা প্রবেশ করাল।

একটু পরে হলগ্রাফিক স্ক্রীনে অ্যা লির চেহারা ভেসে উঠল। অ্যা লি অভিবাদন করে বলল, "সুপ্রভাত মহামান্য মুহা। বিজ্ঞান কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।"

মুহার মন খারাপ হয়ে গেল। অ্যা লি একটি পি ৩৯ প্রজাতির রোবট। মানুষের সঙ্গে তার আচরণগত কোনো পার্থক্য নেই। তবুও কোনো দরকারে আগে রোবটের দারস্থ হতে ভাল লাগে না।

মুহা বিড়বিড় করে বলল, "প্রতিদিন দুঃস্বপ্ন দেখছি, অ্যা লি। কী করা যায় বলতো?"

অ্যা লি ধাতব কণ্ঠে বলল, "ক্ষমা করবেন, মহামান্য মুহা। স্বপ্ন একটা নিতান্তই অর্থহীন মানবিক ব্যাপার। আপনি জেনে থাকবেন খ্রিষ্টপূর্ব একবিংশ শতাব্দীতে মহামান্য প্রফেসর ইব্রার কুরবানি বিষয়ক স্বপ্ন-পরীক্ষা বিখ্যাত 'আইস মাইল সমীকরণ' ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।"

আইস মাইল সমীকরণের কথা শুনে মুহার মনটা নস্টালজিক হয়ে গেল। প্রথম শৈশবে মায়ের হাতে রান্না করা দুম্বার মাংশ। কী অসাধারণ ছিল সেই স্বাদ। এখন মানুষেরা খাওয়া-দাওয়ার পিছনে আর সময় নষ্ট করে না। ওহি৪২০ যন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কে অষ্টম মাত্রার বিদ্যুৎপ্রবাহ চালালে মনে আসতেই সব চাওয়া পূর্ণ হয়ে যায়। 

"মহামান্য মুহা!" অ্যা লির ধাতব কণ্ঠের ডাকে মুহার চিন্তায় ছেদ পড়ল।

সে যথেষ্ট বিরক্ত হল। কিন্তু রোবটের উপর রাগ দেখান অর্থহীন। মুহা যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবে বলল, "ঠিক আছে, অ্যা লি। তুমি এখন যেতে পার।"

অ্যা লি বলল, "কিন্তু আপনি তো আমাকে কেন ডেকেছেন, তা বলেন নি।"

"আর বলার প্রয়োজন নেই তুমি এখন যাও।"

"মহামান্য মুহা আমার উপর কিছুটা বিরক্ত মনে হচ্ছে। আপনার চোখের মণিতে অবলোহিত রশ্মির বিকিরণ এখন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ। এর মানে আপনি এখন রাগ নামক এক অর্থহীন মানবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।"

"মানুষের সব কিছুই কি তোমার কাছে অর্থহীন মনে হয়?

"আপনি বিজ্ঞান কাউন্সিলের সর্বশেষ সভাপতি। আপনার পরে আর কেউ আসবে না। আপনার সাথে আমার এটা নিয়ে তর্ক করার যোগ্যতা নেই সম্মনিত মুহা।"

তবে আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। আপনার আশে পাশের বাতাসে হিউমুলিনের পরিমান এখন ২৯ শতাংশ। এইরকম আর ১০ মিনিট থাকলে আপনার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা শতকরা ৮৩ দশমিক চার ভাগ।

মুহা হিছু বলল না।

বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতিরা মানব সমাজের ঊর্ধ্বে। তারা যা খুশি করতে পারে। মুহা মাঝে মাঝে তার এই ক্ষমতার অপব্যবহারও করে। মুহার মোট ১৩ জন পত্নী এবং অসংখ্য উপপত্নী। জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন নিয়ম রয়েছে। বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতিদের জন্য মহামান্য ক্রুগো কম্পিউটার সব শিথিল করে দিয়েছেন। ক্রুগো কম্পিউটারের সংবিধান "কুর-গান" এর কিউ ৭৮৬ ধারায় বলা আছে, সাধারণ মানুষ এক গিগা র‍্যাম বিশিষ্ট কম্পিউটারে ৪ টার বেশি ফান অ্যাপ্লিকেশন চালাতে পারবে না। মুহার কম্পিউটারে র‍্যাম ৩০ গিগা। সে ইচ্ছামত ফান অ্যাপ্লিকেশন চালাতে পারবে।

অ্যা লি তখনও যান্ত্রিক গলায় বলে চলেছে, "ক্রুগো কম্পিউটারের সংবিধান কুর-গানে আপনাকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, মহাবিজ্ঞানি মুহা। পৃথিবীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণকারী ক্রুগো কম্পিউটারের মেসেঞ্জার হিসেবে আপনিই সফলতম।"

মুহা স্বয়ংক্রিয় রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে হলগ্রাফিক স্ক্রীনটি অফ করে দিল। এসব শুনতে তার ভাল লাগে না। কারণ এগুলো তার নিজেরই বানানো কথা। ক্রুগো কম্পিউটার বলে আসলে কোনো জিনিস নেই। পৃথিবীর সব মানুষের উপর কর্তৃত্ব করার জন্য তার ক্রুগো আর কুর-গান নামের কাল্পনিক দু'টি জিনিস তৈরি করা লেগেছে। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল মুশ্যল-ম্যান নামে এক প্রজাতির বায়োবট তৈরি করা। যাদের মাথায় মগজের বদলে থাকবে কাউডাং৬৬৬ আইসোটোপ নির্মিত কপোট্রন। ক্রুগো আর কুর-গানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে এমন কোন সফটঅয়ার সেই কপোট্রনে রাখা হবে না।

শরীরটা আবারও খারাপ লাগছে। মুহা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। পাশে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে আছে তার স্ত্রী অ্যাশ। আধুনিক বিজ্ঞান দিয়ে বয়সকে জয় করা গেছে। মুহার বয়স যখন ৫৪ তখন সে ৬ বছরের অ্যাশকে বিয়ে করে। রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইম দিয়ে সামান্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে এখন বয়স ইচ্ছা মত নির্ধারণ করা যায়। ইচ্ছা হলেই মুহা অ্যাশ কে ৯ বছরের বানিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করে।

শরীরটা যথেষ্টই খারাপ। মুহার মাথা ঝিম ঝিম করছে। মনে হচ্ছে ডাঃ জিব্রার সাথে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হবে । 

বর্ষীয়াণ প্রফেসর ডাঃ জিব্রা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিউরোকারডিওলজিস্ট। প্রাচীন কাল থেকে মুখে মুখে প্রচলিত আছে যে,  আদমের পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়াকে বানানোর শ্রমসাধ্য অপারেশনটি ক্রুগোর নির্দেশে তিনিই করেছিলেন। ডাঃ জিব্রা অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, "মহামান্য মুহা, আপনার হার্টে ছোট একটা সার্জারি লাগবে।"

মুহা আবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "মাথায় সমস্যা আমার, আর সার্জারি করবেন হার্টে, মহামান্য প্রফেসর?"

ডাঃ জিব্রা সংক্ষেপে মুহাকে মূল ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিলেন, হার্টের তৃতীয় কক্ষে ব্লাক লেভেল জাতীয় পানীয় ঢেলে দেওয়া হবে। তাতে মস্তিস্কের করপাস ক্যালোসামে ডোপামিন আর এসিটাইল কোলিনের যে অসামঞ্জস্য আছে, তা জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। মুহা কিছুই বুঝল না। কিন্তু খুব বুঝেছে এমন একটা মুখ ভঙ্গি করল। 

অপারেশনের টেবিলে হুয়ে মুহা বেশ ভীত বোধ করছে। প্রফেসর জিব্রা হাসিমুখে বললেন, "কোনো দুশ্চিন্তা নেই, মহাবিজ্ঞানী মুহা, আপনি সুখের কোন কথা ভাবতে থাকুন। আমি আপনার ধমনীতে খানিকটা জিলুইন মিশিয়ে দেব। তারপর আর ব্যথাবোধ থাকবে না।"

মুহা সুখের কথা ভাবতে চেষ্টা করছে।

বায়োবট মুশ্যল-ম্যানগুলোর কপোট্রনের ডিজাইনটা ভাল হয়েছে। কাউডাং৬৬৬ আইসোটোপে যৌক্তিক বিশ্লেষণের চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রাবল্য অনেক কম কম। প্রশ্ন মাথায় আসলেই জিটা নটের মান পরম শূন্যের কাছাকাছি চলে গিয়ে সার্কিটে জ্যাম লেগে যাবে এবং তারা উদ্ভট আচরন শুরু করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বায়োবটগুলোর প্রজনন ক্ষমতা হবে সাধারন মানুষের তুলনায় বেশি। মুশ্যল-ম্যান দের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে পরকাল নামক এক অতীত ধারণা থেকে জন্ম নেবে ক্রুগো কম্পিউটারের ডিজিটাল জগৎ। সেই জগতে নিয়ম করে বসন্ত ছাড়া আর সব ঋতু নিষিদ্ধ করা হবে। ক্রুগো কম্পিউটারের জগতে প্রবেশ করতে হলে প্রাচীন কালে পুলছিরাত নামে একটা নদী পার হতে হত। এখন মৃত্যুর পর ব্যাপারটা ওমিক্রনিক রূপান্তরের মাধ্যমে করা হবে। ওমিক্রনিক রূপান্তরের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিকে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রামে রূপান্তরিত করা হবে। একটা কম্পিউটার গেম-এর চরিত্রের মত। যাদের কাজ হবে শুধু ৭২ টা এফ ৬৯ জাতীয় মহিলা রোবটের সাথে যৌনক্রিয়া করা। প্রোগ্রামে একটা ছোট্ট ভুল হয়ে গেছে। ওমিক্রনিক রূপান্তরের পরবর্তী জগতে নারীদের জন্য কোনো পুরুষ রোবটের ব্যবস্থা করা হয় নি।

নিজের বানানো কাহিনীতে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায় মুহা। তার মনে হয়, ক্রুগোর কাল্পনিক জগৎটা সত্য হলে মন্দ হত না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন