বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বাঙালি মুসলমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট: একটি গবেষণা


লিখেছেন শুভজিৎ ভৌমিক (ভৌমিক দা) 

আসিফ মহিউদ্দীন ভাইয়ের এই পোস্টে অমিয় উজ্জ্বল একটি মন্তব্য করেছিলেন, মন্তব্যটা পরে ধর্মকারী ব্লগে আলাদা পোস্ট হিসেবে দেয়া হয়। সেখানে আমরা দেখেছিলাম:

আসলে বাঙালি মুসলমানের মন বড় অদ্ভুত। সে একই সাথে অনেক কিছু চায়। 
  • সে লিবারেলিজম চায়, আবার ইসলামও চায়। 
  • সে ইংরেজি চায়, আবার মাদ্রাসাও চায়। 
  • নারী চায়, হেজাবও চায়। 
  • সুদ চায়, আবার ইসলামিক ব্যাংকিং চায়।
  • ঘুষ চায়, হজ্ব চায়। 
  • গীতবিতান, আমপারা, কোরান শরীফ, হারমোনিয়াম সবই তার ড্রইংরুমে চায়। 
  • তরুণী-মুখো পাখাওয়ালা বোরাক, কাবাঘর, তীরবিদ্ধ দুলদুল, শাহরুখ, মাধুরী, সালমান শাহ সব ছবিরই তার কাছে সমান কদর। 
  • মক্কা চায়, মুম্বাইও চায়। 
  • পিস টিভি চায়, স্টার প্লাস চায়, এইচবিও-ও চায়। 
  • লাদেনকে বাহবা দেয়, গাদ্দাফিকে বাঘের বাচ্চা বলে, তবে পাত্র খোঁজে আমেরিকান গ্রীনকার্ডধারী। 
  • “দেশি মডেল” “হটি জোকস” পেইজে লাইক দেয় আবার “ইসলামিক লাইফ” পেইজেও লাইক দেয়। 
  • ১৮ প্লাস পোস্ট এবং নবীজির স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহের ছবি সম্বলিত পোস্ট দুটোতেই সমান হুমড়ি খায়। 
তো এই পোস্টের মতই ফেসবুকে আরও কিছু পোস্ট এসেছে। বাঙালি মুসলমানের মন বিশ্লেষণ করতে গেলে আসলে খুব বেশি কিছুর দরকার পড়বে না আপনার, শুধু নিচের পোস্টগুলো একটু সময় নিয়ে পড়তে হবে। 


ধর্মকারীর পোস্টটিতে পাঠকদের কাছ থেকে আরও কিছু উদাহরণ আহবান করা হয়েছিলো। সেখানে অবর্ণন রাইমস বলেছিলেন:
শোকেসে কোরান উন্মুক্ত, আর বালিশের নিচে রসময় গুপ্ত। 
এই লেখার সূচনা এই লাইনটা থেকেই হচ্ছে। 

আমি ফেসবুকে কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টই ইগনোর করি না। আজকে সকালে কোনও কাজ না থাকায় ভাবতেছিলাম, ফ্রেন্ডলিস্টে কারা কারা ছাগু আছেন, বাংলাদেশ ইসলামিক আন্দোলনের সেইসব কাণ্ডারিদের নিয়ে আরেকবার গবেষণা করা যাক। গবেষণা করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে রীতিমত গডজিলা পায়া গেলাম। গবেষণা হয়েছে নিম্নরূপ:

প্রথমেই আমি গেলাম ফেসবুকে গোলাম আজমের ফ্যান পেইজে। দেখা গেলো, আমার তিনজন ফ্রেন্ড পেইজটা লাইক করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন: 

১. শামসুল আলম সাজিদী উদাসকবি (আলহামদুলিল্লাহ! নাম বটে একখান! ইনি নিঃসন্দেহে জামাত-শিবির কর্মী। প্রোফাইল ঘুরলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের দুর্নাম করা আর ইসলাম প্রচারই মূলত অনলাইন ছাগুদের কাজ। এর চেয়েও বড় প্রমাণ, সাম্প্রতিক ফেসবুকে খুবই তৎপর চিহ্নিত জামাত-শিবির কর্মী Tomsom Bagom এর প্রোফাইলের ছবিগুলোতে তার লাইক ও কমেন্ট।) 

২. মুন্না হক (এনার প্রোফাইল ঘুরে বুঝতে পারলাম ইনি ছাগু নন সম্ভবত, গোলাম আজমের পেইজে মন্তব্য করার জন্যই লাইক করেছিলেন।) 


স্ক্রিনশটে তৃতীয়জনের নাম দেখা যাচ্ছে, আবু জাফারি। এই আবু জাফারি যে জামাত-শিবিরের লোক, সেটা শিওর হওয়া গেলো আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফেসবুক ফ্যান পেইজে গিয়ে, সেখানেও তার লাইক: 


শুরু করলাম আবু জাফারির প্রোফাইল বিশ্লেষণ। তার ওয়াল ফটোজ অ্যালবামে দেখা গেলো, তিনি মনে করেন ইভ-টিজিং পর্দা ব্যতীত রোধ করা সম্ভব নয়। খুবই ভালো কথা। কিন্তু বোনাস হিসেবে একই অ্যালবামে তিনি যেসব পর্দানশীল নারী দেখালেন, তাতে করে আমার ঈমান তো আর জায়গায় থাকলো না ! 

এনিওয়ে, শয়তানের ওয়াছ-ওয়াছায় পইড়া এই আবু জাফারির প্রোফাইলের পর্দানশীল নারীদের ছবি দেখা শুরু করলাম। 


ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হট অ্যান্ড সেক্সি রিলেশনশিপের জন্য তিনি অলটাইম রেডি আছেন। ওয়াও! খুবই সুখবর! আরেকজন ভাইকে দেখা যাচ্ছে, তিনিও একই ধরনের সম্পর্কের জন্য রেডি আছেন। ভাইজানের নাম আরাফাত উল্লাহ। 

গেলাম আরাফাত উল্লাহ সাহেবের প্রোফাইলে। গিয়া যা পাওয়া গেলো, তার স্ক্রিনশটগুলো নিম্নরূপ:



সম্প্রতি ফেসবুকে একজন জামাত-শিবির কর্মী খুবই তৎপর হয়েছেন, অনেকেই দেখে থাকবেন। তার নাম Tomsom Bagom। গেলাম তমসম বেগম সাহেবার প্রোফাইলে। হঠাৎ খেয়াল করলাম তার ই-মেইল আইডিটা:


ই-মেইল আইডি হচ্ছে কারিতাস মনিকা নামের এক মেয়ের! মারহাবা! কেয়াব্বাৎ! পাঠক, দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারছেন কি ? 

যারা আমার ফেসবুকীয় হুরপরীগণ ও ছাগুদের স্তন্যপ্রীতি লেখাটা পড়েছিলেন, তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়, মুক্তমনাদের প্রোফাইলে ছাগু সমাজের প্রবেশের প্রসেসটা। তারা বিভিন্ন মেয়েদের খোলামেলা ছবি দিয়ে প্রোফাইল খুলে মুক্তমনাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। এক্সেপ্ট করলেই তারা নাম পালটে হয়ে যায় ইসলামের একেকজন কান্ডারি ! 

যাই হোক, এই তমসম বেগমের একটা পোস্টে দেখতে পেলাম বেশ কিছু মোমিন ভাই কমেন্ট করেছেন। তাদের কয়েকজনের আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর ধ্বনি আমার হৃদয়কেও ছুঁয়ে গেলো। দেখা শুরু করলাম ভাইদের প্রোফাইল।

১. নাসির লস্কর নামে একজন মোমিন ভাইয়ের সাবস্ক্রিপশন লিস্ট:


২. আব্দুর রাহিম নামে একজন জিহাদি ভাইয়ের সাবস্ক্রিপশন লিস্ট। সাবস্ক্রিপশন লিস্ট দেখার পাশাপাশি প্রোফাইলে গিয়ে তার চেহারাটা দেইখা আসা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এক্কারে খাঁটি নূরানী চেহারা। নূর বায়া বায়া পড়তাছে। 


৩। আতা খান নামের একজন নব্য ধার্মিকের সাবস্ক্রিপশন লিস্ট:


৪. আব্দু রাহমান নামক একজন চৌদি আজব প্রবাসী মোমিন ভাইয়ের প্রোফাইল: 


তার সাবস্ক্রিপশন লিস্ট:


কি পাঠক? টায়ার্ড হয়ে গেলেন নাকি? নারীলোভেরও মাত্রা থাকে, কিন্তু মোমিন ভাই এবং জামাত-শিবির ছাগু সমাজের নারীলোভ মাত্রাহীন। কারণ, তাদের ঈমানি দণ্ড সর্বদাই খাড়া হয়ে থাকার দৃপ্ত প্রত্যয়ে নিয়োজিত। 

সত্যের সেনানীরা নেবে নাকো বিশ্রাম, 
তাদের জিহাদ চলবেই অবিরাম ! 

আসুন আমরা জামাত-শিবিরের ঈমানি দণ্ড আগামীতেও একইরকমভাবে খাড়া রাখিবার নিয়তে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মোনাজাত ধরি। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন