সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১২

দে মা আমায় তবিলদারি – ০২

লিখেছেন অশোভন

এই সিরিজের প্রথম পর্বে যারা বাবা রামদেবের সম্পত্তির পরিমাণ দেখে আশ্চর্য হযেছিলেন, তাঁদের বলে রাখি, আজ যার কথা বলবো, তার কাছে রামদেব নস্যি। আজ বলছি সত্য সাইবাবার কথা। যারা এইসব বাবাগিরির খবর খুব একটা রাখেন না, তাঁদের প্রথমে একটু বুঝিয়ে দেওয়া দরকার - সাইবাবা কাহাকে বলে, ইহা কয় প্রকার ও কী কী ইত্যাদি। 

সাইবাবা আছেন দু'জন। একজন হচ্ছেন সির্দি সাইবাবা যিনি মহারাষ্ট্রের সির্দি তে বাস করতেন এবং ১৯১৮ সালে মারা যান। এই ব্যক্তি মূলত একজন সুফি বা ফকির ধরনের লোক ছিলেন এবং হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকই এর শিষ্য ছিল। আমাদের ইনি হলেন সত্য সাইবাবা, যিনি তাঁর “ক্যারিয়ারের” শুরুতে নিজেকে সির্দি সাইবাবার অবতার বলে দাবি করেন। যথাসময়ে বাবার পসার জমে যায়, দেশ-বিদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ বাবার শিষ্য হতে শুরু করে ও তাদের দাক্ষিণ্যে বাবার বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।

গোপিনিবেশী “বয়ফ্রেন্ড”দের সাথে সাইবাবা

ভারতে বাবার কতটা প্রভাব ছিল, সেটা বোঝানোর জন্য দু'টি উদাহরণই যথেষ্ট।

এক. ২০০১ সালে কিছু পত্র-পত্রিকায় বাবার কুকীর্তির ব্যাপারে লেখালিখি শুরু হলে বাবার সমর্থনে ভারতের গণমান্য লোকেরা একটা প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করে। তাতে স্বাক্ষরকারীদের কযেকজন হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী (তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে), পি. এন. ভগবতী (সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি), রঙ্গনাথ মিশ্র (সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান), নাজমা হেপতুল্লা (কংগ্রেসের প্রবীণ রাজনীতিবিদ), শিবরাজ পাতিলের (প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বহুবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) মতো লোকেরা। ওই চিঠিতে আর কার-কার নাম ছিল, জানি না, তবে দিল্লির রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বলিউডের অভিনেতা পর্যন্ত সবাই সাইবাবার শিষ্যের তালিকায় আছে।

দুই. সাইবাবা গতবছর মারা গেলে তার শেষকৃত্যে যোগ দেন মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী, নরেন্দ্র মোদী, অম্বিকা সনি সহ পাঁচ লক্ষ লোক। শচীন তেন্ডুলকর তার জন্মদিনের উত্সব বাতিল করে দেন। 

এবার আসল কথায ফিরি। এহেন সাইবাবার সম্পত্তির পরিমাণ কত? সরকারী হিসেবে ৪০,০০০ কোটি (ভারতীয়) টাকা। বেসরকারী হিসেবে সেটা ১,৪০,০০০ কোটি টাকা। না, ভুল পড়েননি। ওটা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটিই বটে। একটু দম নিয়ে নিন...। 

পৃথিবীজুড়ে ১৮৬ টি দেশে সাই-সাম্রাজ্য বিস্তৃত। তারা ১২০০-এরও বেশি বিভিন্ন সংস্থা চালায়। এই সাম্রাজ্যের রাজধানী ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের পুত্তাপার্থী নামের একটি ছোট শহর। এই শহরটির অর্থনীতি পুরোপুরি সাইবাবা ভিত্তিক। সেখানে আছে সত্য সাই বিশ্ববিদ্যালয়, মিউজিয়াম, প্ল্যানেটোরিযাম, ইনডোর ও আউটডোর স্টেডিয়াম, একটি সাধারণ হাসপাতাল, একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মিউজিক কলেজ, একটি রেল স্টেশন ও একটি বিমান বন্দর। এ সবই সাই-সাম্রাজ্যর অধীন।

৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ১০০ একর জমিতে যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি বানানো হয় তার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা দেন হার্ড রক কাফের মালিক আইজাক টিগ্রেট। জি. ভি. শেট্টি নামে একজন প্রবাসী ভারতীয় ইনডোর স্টেডিয়ামটির জন্য ২৫ কোটি টাকা দেন। একজন ইন্দোনেশিয়ার ভক্ত মিউজিক কলেজটির জন্য দেন ৫০ কোটি টাকা।

বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জলের যেসব প্রকল্প তার সংস্থা বানিয়েছে তার মোট খরচ ২৫০০ টাকার ওপর।

এসব তথ্য থেকে অনেকেরই মনে হতেই পারে যে, বাবা তো সবই সমাজ সেবার কাজ করেছেন। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সেটা বুঝতে গেলে একটু অঙ্ক করতে হবে। হরি সম্পথ নামে একজন পুরো বিষয়টা এখানে বেশ বিশদে হিসেব করে দেখিয়েছেন। আমি ছোট করে বলি। 

বাবার বিদেশী শিষ্যদের একটা বড় অংশ মাসে ৫০ ডলারের মতো প্রণামী দেন। অনেকে দেন বছরে ১০০০ ডলার। যদি ধরা যায়, ৪০ লক্ষ শিষ্য ১০ বছর ধরে গড়ে বছরে ৪০০ ডলার করে দান করেন তাহলে মোট অর্থের পরিমান দাড়ায় ১৬০০ কোটি ডলার| কাজেই গত ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে বাবার মোট রোজগারের পরিমাণ ২৫০০ থেকে ৩০০০ কোটি ডলার হবেই। এছাড়া বাবার ৩০০ একরের ওপর জমি রয়েছে নানা জায়গায়। সব মিলিয়ে ৪০০০ কোটি ডলারের মতো। অন্যদিকে গত ২০ বছর ধরে বাবার সমস্ত জনহিতকর কাজের জন্য খরচ ২০ থেকে ২৫ কোটি ডলারের বেশি নয়। হরি যুক্তি দিয়েছেন তার হিসেব যদি খুব সঠিক নাও হয় এবং তা যদি সঠিক টাকার দ্বিগুণও হয় তা হলেও সাইবাবা ট্রাস্টের কাছে ২০০০ কোটি ডলার থাকার কথা।

যে বাড়িতে সাইবাবা থাকতেন, তার একটা অংশে বাইরের কারো প্রবেশাধিকার ছিল না। তার মৃত্যুর পর সেই বাড়ি থেকে ১১ কোটির ওপর নগদ টাকা, ৯৮ কিলো সোনা ও ৩০৭ কিলো রুপা পাওয়া যায়। কাজেই হরি সম্পথের হিসেব খুব ভুল নয় বলেই মনে হয়।

সাইবাবার অলৌকিক শক্তির ব্যাপারে তার শিষ্যদের বিশ্বাস ও সেই সম্পর্কিত ঘটনাবলী খুবই ইন্টারেস্টিং। সে নিয়ে পরে কখনো কথা বলা যাবে। 

তথ্যসূত্র: 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন