লিখেছেন আসিফ মহিউদ্দীন
আপনি জন্মসুত্রে যেই ধর্মের পরিবারে জন্মেছেন, আপনার কাছে সেটাই পরবর্তীতে জীবনে হয়ে উঠবে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এখানে ধর্মটি গুরুত্বপুর্ণ নয়, গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে আপনি ঘটনাচক্রে কোন পরিবারে জন্মেছেন। আপনি যেই পরিবার এবং সংস্কৃতিতে বড় হয়েছেন, আপনার মগজধোলাই ছোটবেলা যেভাবে হয়েছে, আপনি ছোটবেলা থেকে যা জেনে এসেছেন, তাতেই যদি আটকে থাকেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক-শিক্ষা-জ্ঞান এই সব কী কাজে প্রয়োজন, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মানুষ ছোটবেলা নানান জিনিস বিশ্বাস করে, তাদের নানান জিনিস শেখানো হয়। ভাত না খেলে ভূত এসে ধরে নিয়ে যাবে বা রাস্তায় ছেলে ধরারা ঘুরছে তোমাকে ধরে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যখন শিক্ষাদীক্ষা গ্রহণ করে ম্যাচিউরড হয়, স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশা করি, ছোটবেলার সেই সব কল্পকথা, গালগপ্প সে মিথ্যা, তা সে বুঝতে পারবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছোট বেলায় মাথায় ঢোকানো ধর্মীয় গালগল্পগুলো অনেক শিক্ষিত হবার পরেও কেউ কেউ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন!!! এবং মনে করেন, অজ্ঞতাপ্রসূত এই সকল বিশ্বাস মানুষের জন্য কল্যাণকর!!! ছোটবেলায় আমরা অজ্ঞ থাকি, মূর্খ থাকি, তাই সেটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত মানুষ যখন সেই সকল গালগপ্প বিশ্বাস করে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ঘৃণার চোখে দেখে, তখনই মানবতা বিপর্যস্ত হয়। মানুষ মূর্খ এবং অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।
সক্রেটিস বলেছিলেন, পাপের কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। জ্ঞানই মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, মানুষ অজ্ঞ ও মূর্খ থাকলেই সুখী থাকে, সৎ থাকে!!!
যেমন ধরুন, আপনি একটি মুসলিম পরিবারে জন্মেছেন। আপনাকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়েছে ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম, কোরানই সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কেতাব, আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা, মুহাম্মদই মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ। ঠিক একইভাবে আপনি যদি ইউরোপে কোনো ক্যাথলিক পরিবারে জন্মাতেন, এই আপনিই বলতেন: খ্রিষ্টধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম, বাইবেলই সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কেতাব, ঈশ্বরই একমাত্র স্রষ্টা, যীশুই মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ। আবার আপনিই যদি ভারতের কোন এক হিন্দু পরিবারে জন্মাতেন, তবে একই কথাগুলো বলতেন হিন্দুধর্ম, ভগবতগীতা, ভগবান শিব-ব্রহ্মা-বিষ্ণু সম্পর্কে, এবং রাম বা কৃষ্ণই হতো আপনার কাছে মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ।
অর্থাৎ মুহাম্মদ-যীশু-রাম বা আল্লাহ-ঈশ্বর-ভগবান বা কোরান-বাইবেল-গীতা বা ইসলাম-খ্রিষ্ট-হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করছে আপনি ঘটনাচক্রে কোন পরিবারে জন্মেছেন তার উপরে, তাদের শ্রেষ্ঠত্বের উপরে নয়। তারা শ্রেষ্ঠ হলেও আপনি চেঁচিয়ে তাদের শ্রেষ্ঠ বলবেন, আবার একেবারে ফালতু হলেও একই কাজ করবেন। কারণ আপনি জন্মসুত্রে সেই ধর্মের পাল্লায় পড়ে গেছেন।
তাই যাঁরা গোঁয়ারের মত জন্মসুত্রে পাওয়া ধর্মটিকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করেন এবং সেই বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন যুক্তি তৈরি করেন, তাঁরা আহাম্মক বৈ কিছুই না। আর যাঁরা নিজেদের প্রজ্ঞা-জ্ঞান-বিচার বিশ্লেষণ-যুক্তিবোধ ব্যবহার করে সত্য কী জানার চেষ্টা করেন, তারা ক্রমশই নাস্তিকে পরিণত হন। শুধুমাত্র ঘটনাচক্রে একটা ধর্মের পরিবারে জন্মাবার কারণে সেই ধর্মকেই শ্রেষ্ঠ বলে চালানোর এই সংস্কৃতিকে যারা বিনা প্রশ্নে মেনে নেন না, তারাই নমস্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন