মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১২

ভক্তিফাঁদ

লিখেছেন টোস্টার

এক খ্যাতিপ্রত্যাশী কবির একটা কবিতা ছাপা হলো কাগজে। এক পাঠকের খুব ভালো লাগলো কবিতাটা। পত্রিকা অফিস থেকে অনেক কষ্টে ঠিকানা জোগাড় করে সে কবির বাড়িতে চলে এলো। কলিং বেলের শব্দে কবি নিজেই দরজা খুললেন। সসম্মান সম্ভাষণ জানিয়ে পাঠক বললো, “আপনার এই কবিতায় আমি মুগ্ধ। আমার মন চাইছে কবিতাটা আপনাকে আবৃত্তি করে শোনাই।”

এমন ঘটনা কবির জীবনে কখনোই ঘটেনি। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন। সাদরে তিনি পাঠককে বাড়ির ভেতরে ডেকে নিয়ে বসালেন এবং অন্দরমহলে উত্তম চা-নাশতার ফরমায়েশ পাঠালেন। পাঠক তখন আবেগেসিঞ্চিত কণ্ঠে মধু ঢেলে কবিতাটা আবৃত্তি করলো। আবেগ সঞ্চারিত হলো কবির মধ্যেও; তাঁর চোখে জল এসে পড়লো। উত্তম জলযোগের পর পাঠক বিদায় নিলো।

সারাটা দিন জুড়ে কবির মুখে স্মিত হাসি ঝুলে রইলো; থেকে থেকেই গুণগুণ করে গান গেয়ে উঠলেন; অকারণেই মানুষজনের সাথে ভালো ব্যবহার করলেন। রাতেও ঘুমের মধ্যে বারে বারেই স্বপ্ন হয়ে এলো সকালের ঘটনাটা।

পরদিন সকালে কবি যখন খবরের কাগজ নিয়ে বসেছেন, ঠিক তখনই কলিং বেল। দরজা খুলে কবি দেখেন, গতকালের সেই পাঠক হাসিমাখা মুখে দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞাসু চোখে পাঠকের দিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো,“গতকাল কবিতাটা আবৃত্তি করে আমার আসলে মন ভরেনি। আজ আবার আমার মন চাইছে কবিতাটা আপনাকে শোনাতে।” কবি খুশি হলেন এবং পাঠককে ভেতরে নিয়ে বসালেন। তবে আজ আর জলযোগের ফরমায়েশ গেলো না অন্দরমহলে। পাঠক আবৃত্তি করে চলে গেলো।

তার পরদিন সকালে আবার কলিং বেল, আবার সেই পাঠক, আবার সেই কবিতা আবৃত্তির অনুরোধ। কবি কিছুটা রুষ্ট স্বরে বললেন, “ঠিক আছে, এখানে দরজায় দাঁড়িয়েই আপনি আবৃত্তি করুন।” ভক্ত পাঠক সেখানেই দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করে চলে গেলো।

পুরোটা দিন কবির গেলো এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে। সারা রাত তাঁর ঘুম হলো না দুশ্চিন্তায়, “কাল সকালে আবার যদি আসে!”

এই হলো মর্ত্যের সামান্য এক কবির একটিমাত্র কবিতার একজন-মাত্র পাঠকের ভক্তির ঘটনা। যখন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্ত একই সুরা একই সুরে আওড়াতে থাকে, তখন আল্লাহর কী অবস্থা হয়, সেটা জানতে ইচ্ছে করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন