মূল রচনা: আবুল কাশেম (সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম)
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
শিশুবিবাহ: অপরিনত বয়স্কার সাথে সেক্স
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই শিশুবিবাহ আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুবিবাহ আজকাল মানবতার প্রতি অভিশাপ হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে প্রাচীন হিন্দু সমাজে এ ধরণের বিয়ের বহুল প্রচলন ছিল। প্রাচীন পুঁথিপত্র পড়ে আমরা জানতে পারি, এমনকি পাঁচ-ছয় বছরের মেয়েকেও পিতামাতা তখন অম্লানচিত্তে বিয়ে দিয়ে ফেলত। এই শিশুরা বড় হয়ে এমন স্বামীর ঘর করতেও বাধ্য হতো, যে-ঘরসংসারকে তারা রীতিমত ঘৃণা করত। এই প্রথাকে নিকৃষ্টতম শিশুনির্যাতন ছাড়া আর কোন নামে অভিহিত করা যায়? কিছু সংখ্যক মানবতাবাদী কর্মীর দুর্বার আন্দোলনে হিন্দু ধর্মের আমূল সংস্কার সাধিত হয়, শিশুবিবাহ বর্তমানে হিন্দু সমাজে অতীত বিষয়মাত্র। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে অবস্থাটা কী?
ইসলামপন্থীরা জোর গলায় দাবী করে থাকেন যে, তাদের ধর্মটি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে প্রগতিশীল ধর্ম। সুতরাং মানুষ সঙ্গতভাবেই আশা করবে যে, এমন একটি প্রগ্রতিশীল ধর্মে শিশুবিবাহের মতো নোংরা প্রথা নিশ্চয়ই আইনসিদ্ধ নয়। এই প্রত্যাশা অবশ্য প্রচণ্ড এক ধাপ্পাবাজি, আসল সত্য হলো - বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কোনো সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই। মায়ের বুকের দুগ্ধ পানরত সদ্যোজাত একটি শিশুকেও ইসলামী আইন অনুযায়ী বিয়ে দেয়া যায় এবং সে বিয়ে শতভাগ ইসলামসম্মত!
ইসলামি শিশুবিবাহের নিষ্ঠুরতম দিকটি হলো - যদি বাপ-মায়ের সম্মতিক্রমে এই বিয়ের চুক্তি হয়ে থাকে, তবে তা কোনোভাবেই রদ করা যায় না। অর্থাৎ বড় হওয়ার পর দম্পতিকে অবশ্যই বিয়েটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। শিশুবিবাহ সংক্রান্ত শরিয়া আইন নিম্নরূপ:
হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১, পৃ-৩৬):
শৈশবে চুক্তিকৃত কোন প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর অবশ্য প্রতিপাল্য:
যদি শিশুদের পিতা কিংবা পিতামহ বিয়ের চুক্তি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই চুক্তি বাতিল করার কোনো অধিকার তাদের (দম্পতির) নেই; যেহেতু এই বিষয়ে পিতৃ-পিতামহদের সিদ্ধান্ত কোনো অসদুদ্দেশ্য হতে উদ্ভুত হতে পারে না, কারণ সন্তানসন্ততিদের প্রতি তাদের স্নেহ সংশয়াতীত; ফলতঃ এই বিবাহ উভয় পক্ষের জন্যে অবশ্য প্রতিপাল্য, ঠিক সেইভাবে যেন তারা বয়ঃপ্রাপ্তির পর নিজেরা স্বেচ্ছায় এই সম্পর্কে প্রবেশ করেছে। শৈশবে চুক্তিকৃত কোনো প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর বাতিল করা/বহাল রাখার স্বাধীনতা দম্পত্তির ইচ্ছাধীন:
যদি পিতৃপিতামহ ব্যতিরেকে অন্য কোন অভিভাবক চুক্তি করে থাকে, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির পর উভয়ের অধিকার রয়েছে চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার।
ইসলামের নবী মহম্মদ (দঃ) নিজেই ছয় (অথবা সাত) বছরের একটি শিশুকে বিয়ে করেছিলেন। মহম্মদের (দঃ) এই শিশু কনেটিকে নিয়ে ইদানীং বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে, এসম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা এই প্রবন্ধের উপজীব্য নয়। পাঠক-পাঠিকাগণকে আমি অন্য কোথাও হতে সেসব লেখা পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি। আমি এখানে দু’একটি হাদিস উদ্ধৃত করব, যেখান থেকে দেখা যাবে যে মহম্মদ (দঃ) যখন তার বালিকা বধুটিকে ঘরে তুলে নেন এবং বিয়ে কনজুমেট করেন, বধূটি তখনও পুতুলখেলা ছাড়েনি (কনজুমেট শব্দের অর্থ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিয়েকে পুর্ণাঙ্গ করণ বা আইনসিদ্ধ করণ)।
সহি মুসলিম, বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩৩১১:আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) যখন তাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স ছিল সাত বছর, এবং বউ হয়ে তিনি যখন তার (রাসুলের) ঘরে যান তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, এবং তার পুতুলগুলি তার সাথে ছিল; এবং যখন তিনি (রাসুল) ইন্তেকাল করেন তখন তার বয়স ছিল আঠার বছর।
সহি বুখারি, ভলিউম-৫, বুক নং-৫৮, হাদিস নং-২৩৬:হিশামের পিতা হতে বর্ণিতঃনবী মদীনা চলে যাওয়ার তিন বছর পুর্বে খাদিজা ইন্তেকাল করেন। সেখানে বছর দুই কাটানোর পর তিনি আয়েশাকে বিয়ে করেন, আয়েশা তখন ছয় বছরের বালিকা মাত্র, এবং আয়েশার বয়স যখন নয় বছর তখন তিনি বিয়েকে পুর্ণাঙ্গ করেন।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন