বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

কেছাছের বিধান এবং কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন কাফের

ইসলাম নামক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানে ‘কেছাছ’ নামক একটি বিষয় আছে। এর মূল কথা হলো - কোনো মুসলমান যদি কোনো মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাহলে সেই হত্যাকারী মুসলমানকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচার করে হত্যা করা হবে। এটি মূল বিধান। এই মূল বিধানের শাখা-বিধান অনুসারে চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত তুলে নেওয়া যাবে। অর্থাৎ ক্ষতির বদলে সমপরিমান ক্ষতি। 

এতটুকু জানার পর মনে হবে, আহা! ইসলাম বড়ই ন্যায়বিচারক। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাধারন নিয়মে যখন বিচারই পাওয়া যায় না, তখন ইসলামের এ বিধান তো আকাশের চাঁদ। এই নিয়ম এখন চালু আছে পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ অন্যান্য শরিয়া শাসিত দেশে। 

এই বিধান পালন করা হয় দু'জন মুসলমানের মধ্যে সংঘঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলে? অর্থাৎ কোনো অমুসলিম যদি কোনো মুসলিমকে হত্যা করে বা কোনো মুসলিম যদি অমুসলিমকে হত্যা করে তাহলে? 

প্রথমটির ক্ষেত্রে, অর্থাৎ “কোনো অমুসলিম যদি কোনো মুসলিমকে হত্যা করে”- এরূপ ক্ষেত্রে ইসলামে কোনো বিধানই নেই। মুহম্মদ হয়তো ভাবতেই পারে নি যে, একটি ইসলামিক দেশে কোনো অমুসলিম এ ধরনের সাহস দেখাতে যাবে। তাই হয়তো এরকম বিধান দেওয়ারই প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে অর্থাৎ, “কোনো মুসলিম যদি অমুসলিমকে হত্যা করে” - এ ক্ষেত্রে মুহম্মদের অত্যন্ত সহজ এবং স্পষ্ট বিধান হলো, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ফলে কেছাছের বিধান অনুযায়ী কোনো মুসলমানের প্রাণ নেওয়া যাবে না। এই হাদিসটি পাওয়া যাবে ‘বাংলাদেশ তাজ কোম্পানি লি.’ প্রকাশিত ‘সহীহ বোখারী শরিফ’ এর ১০৩৪ পৃষ্ঠার ৬৪৩৮ নং হাদিসে। শুধু তাই নয়, এর পরের হাদিসেই বলা আছে: ‘কোনো মুসলমান কোনো ইহুদিকে চড় মারলেও তার জন্য ঐ মুসলমানকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।’ এখানে বলা হচ্ছে ইহুদি; কিন্তু এই বিধান যে কোনো অমুসলিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 

বাহ রে ইসলাম! এই না হলে শান্তির ধর্ম! ইসলাম নাকি আবার মানবতারও ধর্ম! 

এবার সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। 

সংবাদপত্রে প্রকাশ: 
৪ খুনি গ্রেফতার চুরিতে বাধা দেওয়ায় ডা. নিতাই খুন 
চুরি করার সময় বাধা দেওয়ায় চিকিৎসক নেতা ও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাইকে খুন করা হয়। ওই কিলিং মিশনে অংশ নেয় সাতজন।নেতৃত্বে ছিল মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার সন্ত্রাসী মিন্টু। তারই নির্দেশনায় সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা ডা. নিতাইয়ের বাসায় চুরি করতে যায়। নিতাই ঘুম থেকে জেগে চিৎকার দিলে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতারকৃত চার সন্ত্রাসী গতকাল বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানায়। গ্রেফতারকৃতরা হলো পেদা মাসুম (২৫), সাইদুল (৩৭), পিচ্ছি কালাম (২৬) ও ফয়সাল (৩০)। 
এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যাকে খুন করা হয়েছে, সে একজন অমুসলিম এবং যারা খুন করেছে তারা সবাই মুসলমান। ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি বিচার করা হয়, তাহলে ঐ চার খুনির কোনো সাজাই হবে না। যদিও তারা চুরি করতে গিয়েছিলো, অর্থাৎ তারা চোর, এবং খুন করেছে। এরপরও ইসলামিক বিধানে তারা নির্দোষ। কারণ তারা মুসলমান। আল্লা আর মুহম্মদের কাছে মুসলমানদের জন্য ১ টা কেনো ৭ টা খুন বা তার বেশি হলেও মাফ, যদি তারা কাফের মারে। আর কাফের মারা আল্লার কাছে কোনো অন্যায় নয়, বরং ছোয়াবের কাজ। এমনই অমানবিক - মুসলমানদের কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানব - মুহম্মদ। মুসলমান ছাড়া আর কেউ তার কাছে কোনো মানুষ হিসেবেই গণ্য নয়। কিন্তু মুসলমান হলেই তার সব অপরাধ মাফ এবং সে তাকে গ্যারান্টি দেয় বেহেশতে যাওয়ার। এমনই একটি ঘটনার প্রমান পাওয়া যাবে নিচের হাদিসে: 
আবু দার বর্ণিত- আমি নবীর নিকট যখন আসলাম তখন তিনি সাদা কাপড় পরে ঘুমাচ্ছিলেন। অত:পর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন আমি তার কাছে গেলাম। তিনি বললেন- আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এ বিশ্বাস নিয়ে যে মারা যাবে সে বেহেস্তে যাবে।আমি বললাম- যদি সে ব্যভিচার ও চুরি করে? তিনি বললেন- যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে। আমি আবার বললাম- যদি সে আবারও ব্যভিচার ও চুরি করে ? তিনি আবার বললেন- যদিও আবার সে ব্যভিচার ও চুরি করে। আমি আবারও বললাম – এর পরেও যদি সে ব্যভিচার ও চুরি করে? তিনি বললেন- এর পরেও যদি সে ব্যভিচার ও চুরি করে। সহি বুখারি, ভলিউম-৭, বই-৭২, হাদিস-৭১৭। 
পুনশ্চ: মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা কি এমনি এমনি? এমনিই কি মুসলিম দেশগুলো ঘুষ, দুর্নীতি আর দারিদ্র্যে ভরা? এর মূল কারণ হলো মুহম্মদ আর তার বিধান। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন