শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

ইসলামে কাম ও কামকেলি - ৩২

মূল রচনা: আবুল কাশেম (সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম)
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক

(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)

পর্ব ০১ > পর্ব ০২ > পর্ব ০৩ > পর্ব ০৪ > পর্ব ০৫ > পর্ব ০৬ > পর্ব ০৭ > পর্ব ০৮ > পর্ব ০৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১

জাওজ হচ্ছে পত্নী, আজওয়াজ পত্নীগণ। বাংলা তরজমাকারীরা কেন পবিত্র গ্রন্থের তরজমায় এরূপ করেছেন, তা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে ইংরেজী অনুবাদকারীরা তা করেননি, স্পষ্টভাবে ওয়াইভস (wives) বলে অনুবাদ করেছেন। পাঠকরা যাতে বাজারে প্রচলিত বাংলা অনুবাদ গ্রন্থগুলি পড়ে কোনোপ্রকার ধন্দে না পড়েন, তাই এত কথা বলা। 

সে যাহোক, বর্তমান জমানায় যুদ্ধবন্দী কারা? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেহেতু কাফেরদের সাথে চিরস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে বলে ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সুতরাং কাফেরদের দেশের সমস্ত রমণীই অন্ততঃ তাত্ত্বিকভাবে এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কাফেরদের দেশে বসবাসরত একজন মুসলমান (তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক না কেন) যে কোনোসংখ্যক কাফের রমণীর সাথে ঘুমাতে পারে (অর্থাৎ সেক্স করতে পারে)। 

এই কাজের জন্যে জিনা বা ব্যভিচারের দায়ে লজ্জিত বা দণ্ডিত হওয়ার বিন্দুমাত্রও শঙ্কার কারণ নেই তার। অনেক ইসলামপন্থী হয়তো গর্ব করে বলেই বসবেন যে, এইসব কাফের নারীরা মুসলমান পুরুষের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে - এটা তাদের চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য। 

একবার থাইল্যান্ডের এক মেসাজ পার্লারে কয়েকজন পাক্কা মুসলমানের সাথে দেখা হয় আমার। থাই যৌনকর্মীদের সাথে তারা কী করছে - আমার এই প্রশ্নের জবাবে তারা অম্লানবদনে বলল যে, থাই রমণীদের সাথে সেক্স করা দোষের কিছু না। কারণ থাইল্যান্ড কাফেরদের দেশ আর কাফের রমনীদের সাথে সেক্স করা পুরোপুরি ইসলামসম্মত। বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে মুসলমানরা কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, বিশ্বের সমস্ত অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে মুসলমানরা। যুদ্ধাবস্থায় সমস্ত কাফের রমণীই গনীমতের মাল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য, তা সে যেখানেই থাকুক না কেন। তারা আমাকে আরও বলে যে, কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করতে যায়, সেখানে অমুসলিম রমণী ভোগ করায় কোন দোষ নেই, এ কাজ পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। 

তাদের কথাকে তখন মোটেও আমলে নেইনি আমি। ভেবেছিলাম, এইসব মোল্লারা ইসলামের কিছুই জানে না, নিজেদের ভোগবাসনা চরিতার্থ করতে যা-তা বানিয়ে বলছে। এর কয়েক বছর পর আমি ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে মনস্থ করি। গভীরভাবে অধ্যয়নের পর বিস্ময়ে যেন বোবা হয়ে গেলাম আমি। বুঝতে পারলাম, থাইল্যান্ডে যাদেরকে আমি কাঠমোল্লা ভেবে মনে মনে গালি দিয়েছিলাম, তারা ঠিক কথাটিই বলেছিল সেদিন। জীবন্ত ইসলাম হিসেবে মুসলমানরা যা মান্য করে থাকে, সেই শারিয়ার বাইরে কিছুই করেনি তারা! বিশ্বাস হচ্ছেনা তো? তা’হলে শারিয়া বর্ণিত নিচের আইনটি পড়ে দেখুন।
বিদেশের মাটিতে জিনা বা ব্যভিচার করলে কোনো শাস্তি নাই (রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৫)
বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটন (Committing whoredom) শাস্তিযোগ্য নয়:
যদি কোন মুসলমান বিদেশের মাটিতে কিংবা বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়, এবং অতঃপর মুসলিম রাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তন করে, তার উপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না এই কারণে যে, একজন ব্যক্তি, সে যেখানেই থাকুক না কেন, মুসলিম ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ করার কারণে, সেখানকার (অর্থাৎ মুসলিম রাষ্ট্রের) সমস্ত বাধ্যবাধকতা পালন করে চলতে নিজেকে দায়বদ্ধ করেছে। এর পক্ষে আমাদের পণ্ডিতজনদের (Doctors) দ্বিবিধ যুক্তি রয়েছে:

প্রথমত: নবী বলেছেন যে- “বিদেশের মাটিতে শাস্তি প্রদান করা যায় না”;
এবং দ্বিতীয়ত: শাস্তি প্রদানের বিধানগুলির অভিপ্রায় হচ্ছে (অপরাধ) রোধ করা কিংবা সতর্ক করা;
এক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে একজন মুসলমান ম্যাজিষ্ট্রেটের কোনো কর্তৃত্ব নেই, সুতরাং বিদেশের মাটিতে বেশ্যবৃত্তি সংঘটনের দায়ে যদি কোন ব্যক্তির উপর শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা হয়, তা’হলে উক্ত বিধান অর্থহীন, কারণ বিধানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যেন শাস্তি কার্যকরী হতে পারে; এবং যেহেতু বিদেশের মাটিতে ম্যাজিষ্ট্রেটের কর্তৃত্ব নেই, শাস্তি কার্যকর করা অসম্ভব; যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের দায়ে সেখানে শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়; এবং উক্ত ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে বিদেশের মাটি হতে মুসলমান রাষ্ট্রে আগমন করে, তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না; কারণ বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সময় যেহেতু শাস্তি প্রদান করা হয়নি, পরবর্তীতে তা প্রদান করা যাবে না।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন