লিখেছেন থাবা বাবা
চাপা-০১২
(সিয়াম সাধনার ইতিবৃত্ত)
সে অনেক কাল আগের কথা। আরবের লোকেরা তখন আল্লাকে ভুলিয়া গিয়াছিল। ভোলে নাই কেবল একজন, মহামতি মোহাম্মক। তাহাও খোদাতালা তাহাকে জেব্রাইল প্রেরণ করিয়া উত্তম-মধ্যম সহযোগে ইয়াদ করাইয়া না দিলে তাহারও আল্লার কথা ইয়াদ করিতে বেগ পাইতে হইতো। তা সেইবার জেব্রাইলের মধ্যম উত্তমরূপে খাইয়া তাহার ভয়ানকরূপে বাহিরে বালিয়াড়ির আড়ালে যাইবার বেগ চাপিয়াছিল কি না আমাদিগের নিশ্চিত জানা নাই, তবে তাহার বৃদ্ধা পত্নী খাদিজা হইতে বর্ণিত যে, সেবার পর্বত-পাদদেশ হইতে ভেড়া লইয়া ফিরিবার পর সবরী থুক্কু পেয়ারা নবী বেশ কিছু দিবস শয্যাশায়ী ছিলেন। যাহা হউক... তাহার বেশ কিছুদিন গত হইবার পর আজিকার এই কাহিনীর আরম্ভ।
হেরা গুহায় জেব্রাইলের উত্তম-মধ্যম খাইয়া মোহাম্মদের আল্লার কথা মনে পড়িয়াছিল বটে। আধুনিক বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের মাথায় ডান্ডার বাড়ি খাইয়া ইয়াদ্দাশ ফেরত আসিবার গল্প বোধ করি ১৪০০ বৎসর পূর্বের মোহাম্মকের উত্তম-মধ্যম খাইবার ঘটনা হইতেই আসিয়াছে। তবে স্মৃতি ফিরাইবার ক্ষেত্রে উত্তম-মধ্যম যে কীরূপ কার্যকর, তাহা মোহাম্মকের ঘটনা হইতেই উত্তমরূপে প্রতীয়মান হয়। সেই স্মৃতি এমনই বলশালী হইয়া ফেরত আসিয়াছিল যে, মোহাম্মক তাহার বাকী জীবন আল্লার শবরী কলা হিসাবেই কাটাইয়া দিবার নিমিত্তে নিজেকে উৎসর্গ করিয়া দিয়াছিল। তবে তাহার আল্লার দূত হইবার সমস্ত আয়োজনই এক কথায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়া যাইতে বসিয়াছিল তাহার পত্নী খাদিজার উপস্থিতিতে। খাদিজা তাহার পতিনবীকে হস্তে রাখিবার নিমিত্তে তাহার সমস্ত কথাই বিনা বাক্যব্যায়ে মানিয়া লইয়াছিল ঠিকই, তথাপি তাহার কথায় কদাচিৎ বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে। আর মোহাম্মক যেইরূপ প্রায়শই তাহার ব্যবসায়িক তহবিল তছরূপ করিত, তাহাতে তাহার আল্লার সাক্ষ্যও খুব একটা কার্যকরী হইতে পারিছেলিন না। অপর হস্তে খাদিজা প্রেমময় পত্নী হইলেও বিষয়বুদ্ধিতে ছিলেন খুব কড়া। পতিনবী মোহাম্মককে পরমাত্মীয় বলিয়া ক্ষমা করিবার পাত্রী খদিজা ছিলেন না। তাই প্রতিবারই সে তহবিল হোক চাই কি ভেড়ার পাল, তছরূপের দায়ে মোহাম্মককে শাস্তি পাইতে হইতো। তা সে পিঠে হালকা পাদুকা বৃষ্টি নতুবা পানাহার রহিতকরন।
সেইরূপ একদা মোহাম্মক পত্নী খাদিজার অনুমতি ব্যাতিরেকে আস্ত একপাল উট আল্লার পথে উৎসর্গ করিয়া বসিয়াছিল, যদিও তাহার কোন চাক্ষুষ প্রমান উপস্থিত করিতে ব্যর্থ হওয়ায় খাদিজা তাহাকে শাস্তিস্বরূপ এক চন্দ্রকাল দিবাভাগের পানাহার রহিত করিয়া তাহাকে শাস্তি প্রদান করিয়াছিলেন। সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত তাহার নিকট পানাহার প্রেরনে নিষেধাজ্ঞা জারী করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, দাসীদিগের ওপরেও মোহাম্মকের নিকট না যাইতে করা হুকুম জারি করিয়া দিয়াছিলেন। তাই খাবার ও দাসী উভয় হইতেই মোহাম্মক বঞ্চিত হইতেছিল। দিবাভাগ ব্যতীত পানাহার ও দাসীর সমভিব্যাহারে কোনো নিষেধাজ্ঞা খাদিজার নির্দেশ নামায় না থাকিলেও খাদিজা মহাম্মকের কর্মকাণ্ডের প্রতি কঠিন পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছিলেন। তাহাতে মোহাম্মক বেজায় বেকায়দায় পড়িয়াছিল।। খাদ্যে তাহার সেন্সরশিপের সহিত খাদিজাকে গোপন করিয়া কচিৎ-কদাচিৎ দাসী নতুবা বগ্নি উম্ম-হানীর সাহচর্য লাভের সুযোগও রহিত হইয়া বসিল।
এমতাবস্থায় শিশ্নের ক্ষুধা চাপিয়া রাখিতে পারিলেও আরবস্থলীর ক্ষুধা নিবারণ ক্রমশ কঠিন হইয়া যাইতেছিল। সূর্যাস্তের পরে ও নিদ্রাপূর্বক আহার ব্যতিত অন্যরূপ আহারের অভাবে মোহাম্মক উদরে প্রস্থরবন্ধনি লইতে বাধ্য হইয়াছিল। তথাপী তাহার ক্ষুধা নিবারনে অন্যরূপ সমস্ত উপায়ও খাদিজা রহিত করিয়া রাখিয়াছিলেন। এমতাবস্থায় রাত্রি দ্বিপ্রহরে লোকচক্ষুর অন্তরালে চুপি চুপি খাদিজার হেঁসেল হইতে চৌর্যবৃতি ব্যতীত আর কোন গত্যন্তর ছিল না।
কিন্তু কথায় যেরূপ বলিয়া থাকে যে, মোহাম্মকের বিংশ রজনী ও খাদিজার এক, সেরুপ শাস্তির বিংশত রজনী দ্বিপ্রহরে মোহাম্মক খাদিজার হস্তে রঞ্জিত হস্তে ধরা পড়িয়া গেল। তাহাতে লোক জানাজানিও কম হইলো না। ঘৃহের অভ্যন্তরে কোনোরূপ মান-সম্ভ্রম কোনোকালেই মোহাম্মকের ছিল না, কিন্তু মক্কা নগরীর জনগণের নিকট আল্লার একমাত্র সেবকরূপে তাহার বিশেষ পরিচিতি বজায় ছিল। তাহার ওপর মোহাম্মকের গোপন কারোবার হিসেবে একখানা অর্থের বিনিময়ে আমানত-গাহ বিশেষ খ্যাতিপ্রাপ্ত হইয়াছিল ও তাহার গুডউইল হিসাবে তাহার কপালে আলামিন খেতাবও জুটিয়া গিয়াছিল। এমতাবস্থায় চৌর্যবৃত্তির সহিত তাহার সংস্রব প্রমানিত হইলে তাহার যৎসামান্য এক্সট্রা ইনকামও রহিত হইয়া কদাচিৎ খাদিজার আড়ালে ইয়ার-দোস্ত লইয়া আমোদ স্ফূর্তি করিবার পথও রহিত হইয়া যাইবে। তাই তাহার আমানতগাহ এবং আলামিন উপাধি রক্ষার্থে তাহাকে সর্বসমক্ষে একখানা চাপা উপস্থিত করিতে হইলো, তাহা হইলো ঐ একচন্দ্র সময়কাল, যাহাকে স্থানীয় ভাষায় রমজানুল চন্দ্র বলা হইতো, আল্লাহ তাহাকে সিয়াম সাধনা করিতে নির্দেশ দিয়াছেন। আর এই সিয়াম সাধনার তরিকা হইলো রাত্রি দ্বিপ্রহরে আহার্য সাধন করিতে হইবে, তাহার পর সূর্যাস্তের পরে আবার আহার্য গ্রহনের অনুমতি মিলিবে। এই সময়ের মধ্যে কোনোরূপ পানাহার ও নারীগমন নিষিদ্ধ। সেই হইতে মোহাম্মকের চৌর্যবৃত্তি ঢাকিতে প্রদত্ত চাপা অনুসরনে মোহাম্মকের বিশাল উম্মক-বাহিনী অদ্যবধি রমজানুল চন্দ্রে সেইরূপ পানাহার ও নারীগমনে বিরত থাকে এবং সূর্যাস্তের পরে ও রাত্রি দ্বিপ্রহরে খাদ্যগ্রহনে প্রবৃত্ত হয়। এই বিধানকেই আমরা পবিত্র সিয়াম সাধনা বলিয়া মানিয়া থাকি।
অন্যদিকে চৌর্যবৃত্তির শাস্তিস্বরূপ তাহার খাদ্য রহিতকরনের বিংশ দিবসের পর হতে অবশিইষ্ট চন্দ্রদিবস সমূহতে খাদিজা মোহাম্মককে কক্ষে অন্তরীন করিয়া রাখিয়াছিলেন যাহাকে অদ্যবধি আমরা ইতিকাফ বলিয়া পালন করিয়া থাকি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন