অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
পর্ব ০১ > পর্ব ০২ > পর্ব ০৩ > পর্ব ০৪ > পর্ব ০৫ > পর্ব ০৬ > পর্ব ০৭ > পর্ব ০৮ > পর্ব ০৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯
রিযার ধারণা স্বামীস্ত্রীর মধ্যে প্রয়োগ করলে কী হবে? স্বামীর পাকস্থলীতে যদি স্ত্রীর দুধ ঢুকে যায়, তখন? ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ! কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমান এরূপ কথা চিন্তাও করতে পারে না। পাঠক, আসুন না একবার চেষ্টা করে দেখি, ইসলামের পবিত্র কেতাবগুলিতে এসম্পর্কে কোনো বিধান খুঁজে পাওয়া যায় কি না। যদি আপনি আপনার স্ত্রীর বুকের দুধ খান, সেজন্যে স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে না। দুই বছর বা তার চেয়ে কম বয়েসে বুকের দুধ খেলে, তবেই কেবল তাদের মধ্যে (দুগ্ধদাত্রী এবং শিশুটি) আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুয়াত্তা, বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৪:আবুমুসা আল আশারিকে জনৈক লোক জিজ্ঞেস করল- “আমি আমার স্ত্রীর স্তন্য হতে কিছুদুধ খেয়ে ফেলেছি, তা আমার পাকস্থলিতে চলে গেছে”। আবু মুসা বললেন- “আমি তোমাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সে তোমার জন্যে হারাম হয়ে গেছে”। (তখন) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন- “তুমি কী বলছ তা ভেবে দেখ”। আবু মুসা বললেন- “তা’হলে তোমারমত কী”? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন- “দুধ খাওয়ার কারণে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল প্রথম দু’বছরে”। (অর্থাৎ দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশু যখন মা ছাড়া অন্য নারীর দুধ পান করে, তখনই কেবল শিশুটি এবং দুগ্ধদানকারী স্ত্রীলোকটির মধ্যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়। আবু মুসা বললেন- “এই জ্ঞানী লোকটি যতক্ষন আমাদের মাঝে থাকবেন, তোমরা আমাকে কোন কিছুর ব্যপারে জিজ্ঞেস করো না”।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ কে ছিলেন? যে দশজন সাহাবি রাসুলের সবচেয়ে ঘনিষ্ট ছিলেন এবং মৃত্যুর পুর্বেই যাদেরকে বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল (আশারা মোবাশ্বেরা- সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ জন), আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ তাদের অন্যতম।
ইবনে মাসুদ উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, মহম্মদের (দঃ) ঠিক পরেই ছিল তার স্থান। এরকম উচ্চমর্যাদাশীল সাহাবির মুখে এ কী কথা, স্ত্রীর দুধ খাওয়ার পরও দাম্পত্যসম্পর্ক টিকে থাকে! আশ্চর্য!
এই রকমই আরেকটি হাদিস দেখুন নিচে।
দুধেল নারীর সাথে সঙ্গম করা হালাল।
সহি মুসলিম, বুক নং-৮, হাদিস নং -৩৩৯১:জুদাইমা বিনতে ওয়াহাব আল আসাদিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলকে (দঃ) বলতে শুনেছেনঃ আমি দুধেল স্ত্রীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম যে রোমান এবং পারসিকরা তা করে থাকে এবং শিশুটির তাতে কোন ক্ষতি হয় না। (ইমাম মালিক বলেছেনঃ এই হাদিসের খালাফ বর্ণিত যে ভার্সনটি আছে তাতে যে নামটি আছে তা হচ্ছে জুদামাত আল-আসাদিয়া। তবে ইয়াহিয়া বর্ণিত ভার্সনে যে নামটি আছে সেটিই সঠিক, অর্থাৎ নামটি হবে জুদাইমা আল-আসাদিয়া)।
বয়ঃপ্রাপ্ত স্বামী কর্তৃক দুধেল স্ত্রীর স্তন্য চোষণ করা কিংবা দুধ পান করা কেন অসিদ্ধ নয়, নিম্নে উদ্ধৃত ইমাম মালিকের পংক্তিগুলি হতে তার জবাব মেলে।
যখন কোনো বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর দুধ পান করে, সেটা স্বাভাবিক খাদ্য মাত্র, ধাত্রীদুগ্ধ (ফষ্টার মিল্ক) নয়!
এ এক আজব আইন! দু’বছরের কমবয়েসী কেউ (শিশু স্বামীও হতে পারে) এক ফোটামাত্র খেলেও তা হলো ফষ্টার মিল্ক, দুবছর পার হলেই সেই একই দুধ হয়ে যায় স্বাভাবিক খাদ্য। কী বিচিত্র এই নিয়ম, সেলুকাস!
মুয়াত্তা, বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.১১:
মালিকের সুত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া বলেন যে ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ বলেছেন যে, তিনি সাইদ আল মুসাবকে বলতে শুনেছেন- “শিশুটি যখন দোলনায় থাকে, তখনই কেবল দুধপান সংক্রান্ত নিয়মকানুন প্রযোজ্য। অন্য সময়ে এ থেকে (বুকের দুগ্ধপান থেকে) কোনো রক্তের সম্পর্ক জন্মায় না।”
মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া আমাকে বলেন (ইবনে শিহাবের সুত্রে) যে, তিনি বলেছিলেন- “বুকের দুধ পান, তা সে যত অল্প কিংবা যত বেশীই হোক না কেন, (সম্পর্ককে) হারাম করে ফেলে। দুগ্ধপানের মধ্য দিয়ে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পুরুষকে মাহরিম করে।”
ইয়াহিয়া বলেন যে, তিনি মালিককে বলতে শুনেছেন, “দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুগ্ধপান, তা সে যত অল্প বা বেশি হোক না কেন, হারাম (সম্পর্কের) সৃষ্টি করে। দুই বছর বয়সের পরে যদি তা করা হয়, তা সে কম-বেশী যাই হোক না কেন, সেজন্যে কোনো কিছু হারাম হয়ে যায় না। এ নেহায়েতই খাদ্যের মতো।”
এবং সর্বশেষে মুক্তাসদৃশ নীম্নোক্ত হাদিসটি।
সুনান আবু দাউদ, বুক নং-৩৪, হাদিস নং-৪২১০:আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ হতে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসুল (দঃ) দশটি জিনিস অপছন্দ করতেন: হলুদ রং করা, শাদা চুল কলপ করা, পোষাকের প্রান্তভাগ মাটি ছুয়ে যাওয়া, স্বর্ণের তৈরী আংটি পড়া, সাজ-সজ্জা করে গায়ের মেহরাম পুরুষের সামনে যাওয়া (বাপ, ছেলে, ভাই ইত্যাদি চৌদ্দপ্রকার সম্পর্ক আছে যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম, এরূপ সম্পর্কের ইসলামি নাম মেহরাম; এর বাইরে যাবতীয় সম্পর্ক গায়ের মাহরাম, যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ), পাশা খেলা, যাদু বা ইন্দ্রজাল করা, তাবিজ/কবজ ব্যবহার করা, বীর্যপাতের ঠিক আগ মুহুর্তে যোনির ভেতর হতে লিঙ্গ বের করে আনা - তা সে নিজের স্ত্রী হোক বা অন্য মেয়েলোক হোক (অর্থাৎ উপপত্নী বা যৌনদাসী) এবং এমন মেয়েলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করা যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তবে তিনি এগুলিকে হারাম বলে ঘোষণা করেননি।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন