করুণাময় আল্লাহ!
মহাজ্ঞানী আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়েছেন যে, "চতুষ্পদ জন্তুসমূহের" মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। তিনি আমাদেরকে তাদের “উদরস্থিত বস্তু” থেকে প্রচুর উপকারী দুগ্ধ পান করান। তিনি আরও ঘোষণা দিয়েছেন যে, দুধ "গোবর" ও রক্ত নিঃসৃত পানীয়!
দুধ নিঃসৃত হয় উদরস্থিত বস্তু (Intestinal contents) থেকে:
২৩:২১ -- তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।
দুধ নিঃসৃত হয় গোবর ও রক্ত থেকে:
১৬:৬৬-তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।
পাঠক, আসুন! আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে মুহাম্মদের ঘোষণাকৃত এই বাণী দু'টিকে আমরা একটু মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করি। এবং আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে এর সত্যতা নিরূপণের চেষ্টা করি।
১) দুধ কী “উদরস্থিত বস্তু" থেকে নিঃসৃত? অবশ্যই "না"!
২) দুধ কী গোবর (Feces) নিঃসৃত? আসতাগফেরুল্লাহ! অবশ্যই নয়!
চতুষ্পদ জন্তুদের স্তন (Breast) যে উদরের উপরিভাগে থাকে, এ তথ্যটি জগতের সকল চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই দেখতে পান। আর "গোবর"যে এই উদর থেকেই নির্গত হয় তাও চক্ষুষ্মানদের অজানা নয়। কিন্তু, যা দেখা যায় না তা হলো চামড়ার নীচে স্তন-গ্রন্থির অস্তিত্ব। তাই, স্তন-গ্রন্থির অস্তিত্ব, অবস্থান ও কার্যকারিতা জানা না থাকা যে কোন ব্যক্তিই দুধকে (Milk) উদরস্থিত গোবর ও রক্ত মিশ্রিত বস্তু জ্ঞানে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য। উদরস্থিত পাকস্থলী, অন্ত্র এবং তাদের মধ্যস্থিত বস্তু সামগ্রীর (গোবর) সাথে স্তন-গ্রন্থি যে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়, তা আপাতদৃষ্টিতে বোঝার কোনো উপায় নেই। সেকালে মুহাম্মদের পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি জানার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলস্বরূপ, আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে মুহাম্মদ যা প্রচার করেছেন, তাকে আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে "প্রলাপ" ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না!
আধুনিক বিজ্ঞান
১) দুধ তৈরি হয় স্তন-গ্রন্থিতে। উদরে নয়! সকল দুগ্ধজাত প্রাণীর (Mammal) সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এই স্তন-গ্রন্থি। এর অবস্থান প্রাণীভেদে বিভিন্ন হলেও কখনোই তা Mammary line এর বাহিরে নয়। মানুষসহ অন্যান্য প্রাইমেটের(Primate) ক্ষেত্রে এর অবস্থান হলো বুকের চামড়া সংলগ্ন। আর ক্ষুরযুক্ত চতুষ্পদ জন্তুদের (Ungulates) ক্ষেত্রে এর অবস্থান তাদের পিছনের দুই পায়ের সামনে পেটের শেষভাগের চামড়া সংলগ্ন।
২) বাহ্যিক অবস্থান যেখানেই হোক না কেন,স্তন-গ্রন্থি কক্ষনোই (Never) কোনোভাবে পাকস্থলী ও অন্ত্র (উদর) এবং উদরস্থিত বস্তু সামগ্রীর (গোবর-feces) সাথে সম্পৃক্ত নয়। ভ্রূণের একদম প্রাথমিক স্তর থেকেই এ দুটি দেহযন্ত্র সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন Germ layer থেকে বেড়ে ওঠে (ষষ্ঠ পর্ব)। Their Embryological development is completely different.
ক) স্তন-গ্রন্থির সম্পর্ক চামড়ার (Skin) সাথে। এর প্রাথমিক উৎপত্তিস্থল চামড়ার মতই মূলত: “Ectoderm”। কিছু অংশ Mesoderm থেকে।
খ) অন্যদিকে উদরের (পাকস্থলী ও অন্ত্র) সম্পর্ক খাদ্য নালীর সাথে। মুখ থেকে গুহ্যদ্বার পর্যন্ত (From mouth to anus)। এর প্রাথমিক উৎপত্তিস্থল হলো “Endoderm”।
৩) স্তন-গ্রন্থির অস্তিত্ব এবং দুধের প্রস্তুত প্রণালী সম্বন্ধে সামান্যতম ধারণা থাকা কোনো ব্যক্তি সুস্থ মস্তিষ্কে কক্ষনোই ঘোষণা দেবেন না যে, “দুধ গোবর নিঃসৃত পানীয়”। “গোবরের” সাথে দুধের প্রস্তুত প্রণালীর কোনোই সংস্রব নেই”।
পুনশ্চ: "একটিই যথেষ্ট, দুইটি অতিরিক্ত"
শুধু “একটি মাত্র” ভুল, অবাস্তবতা অথবা অসামঞ্জস্য থাকলেই একশত ভাগ সুনিশ্চিতভাবেই বলা যাবে যে, কুরান 'বিশ্বস্রষ্টার' বাণী হতে পারে না। সেক্ষেত্রে, মুহাম্মদের দাবী মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অথবা মানসিক বিভ্রম (Psychosis)।
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন