মূল রচনা: আবুল কাশেম (সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম)
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
পর্ব ০১ > পর্ব ০২ > পর্ব ০৩ > পর্ব ০৪ > পর্ব ০৫ > পর্ব ০৬ > পর্ব ০৭ > পর্ব ০৮ > পর্ব ০৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২
উপপত্নী প্রথা (concubinage)
ডিকশনারী অব ইসলাম’ (রেফারেন্স-৬, পৃষ্ঠা-৫৯) গ্রন্থ অনুসারে - উপপত্নী বা ‘কঙ্কুবাইন’ শব্দের আরবী প্রতিশব্দ সুরিইয়া, বহুবচনে সারারি। ইসলাম ধর্ম উপপত্নী প্রথা পালন করার পক্ষে খোলা লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে। একটিমাত্র শর্ত আছে, উপপত্নীটির ষ্ট্যাটাস হতে হবে দাসী। স্বাধীন নারীকে উপপত্নী করা চলবে না।
দাসী তিন ধরনে: ১. যুদ্ধবন্দিনী, ২. বাজার হতে নগদ মুল্যে ক্রয় করা দাসী, এবং ৩. দাসীর সন্তানসন্ততি (দাসীর সন্তানসন্ততিও পুরুষানুক্রমিকভাবে দাস বা দাসী)।
যুদ্ধবন্দিনী যদি বিবাহিতাও হয়, কোরানের নিয়মানুযায়ী (৪:২৪) তাদের ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে বিজয়ী মুসলমানদের হাতে সমর্পিত।
তোমাদের জন্যে অবৈধ করা হয়েছে নারীদের মধ্যে সধবাগণকে (অন্যের বিবাহিত স্ত্রীগণকেও); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী- আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন।
এই উপপত্নীপ্রথা স্বয়ং মহম্মদ (দঃ) কতৃক স্বীকৃত এবং নিজের জীবনে তিনি তা পালনও করে গেছেন। বানু কুরাইজা নামক ইহুদি গোত্রের সাথে যুদ্ধান্তে (৫ হিজরি সালে) তিনি রায়হানা নাম্নী এক সুন্দরী ইহুদিনীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করেন। মিশরের শাসনকর্তা কর্তৃক উপহার হিসেবে প্রদত্ত এক খ্রীষ্টান ক্রীতদাসীও তার উপপত্নী ছিল, যার নাম ছিল মারিয়া কিবতি। জালালানের (কোরানের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাখ্যাকারক) উদ্ধৃতি দিয়ে ডিক্সনারি অব ইসলাম লিখেছে (রেফারেন্স-৬, পৃ-৫৯৫-৬০০):
(১) দাসী যদি বিবাহিতাও হয়, তাকেও অধিকারে নেয়ার ক্ষমতা আছে মনিবের। সুরা ৪:২৮; “তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী- আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন।”এই আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালান বলেন, “অর্থাৎ, যাদেরকে তারা যুদ্ধের ময়দানে আটক করেছে, তাদের সাথে সহবাস করা তাদের জন্যে বৈধ, যদি তাদের স্বামীগণ দারুল হরবে জীবিতও থাকে” (দারুল হরব অর্থ- অমুসলিম রাষ্ট্র বা দেশ)।
(পাঠক-পাঠিকাবর্গ, ডিক্সনারি অব ইসলাম গ্রন্থটিতে ৪:২৮ নং আয়াত হিসেবে যে আয়াতটির উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, আসলে সেটি কোরানের ৪:২৪ নং আয়াত (সুরা নিসা)।
মাওলানা ইউসুফ আলী, পিকথল এবং যে কোনো বাংলা তরজমায় একে ৪:২৪ আয়াত হিসেবেই পাওয়া যাবে। এই অধ্যায়ের প্রথমেই উক্ত আয়াতটির বর্ণনা রয়েছে।)
ইসলামপন্থীরা বয়ান করে থাকেন যে, আদি ইসলামের স্বর্গীয় ও আধ্যাত্মিক রূপে মুগ্ধ হয়েই জিহাদীরা মহম্মদের (দঃ) সঙ্গে গাজওয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল (গাজওয়া শব্দের অর্থ - নারী ও ধনসম্পত্তি লুটপাট করার জন্যে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান)।
কিন্তু মহম্মদের (দঃ) জীবনী পাঠ করলে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ভেসে উঠে আমাদের সামনে। এইসব লুন্ঠনকারী দস্যুদের মূল আকর্ষণ ছিল - কাফের রমনীদের সাথে অপরিমিত সেক্স করা এবং তাদের ধনসম্পত্তি লুটপাট করা। আমরা দেখতে পাই, যখনই মুসলমানরা কোনো অমুসলিম গোত্রকে আক্রমন করেছে, তারা তাদের নারীদেরকে এক জায়গায় জড়ো করে বন্দী করেছে। বৃদ্ধা এবং শিশুদেরকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হত্যা করা হতো, কারণ এই প্রজাতিগুলি জিহাদিদের কোনো কাজে আসবে না, ভার বাড়াবে মাত্র। তরুণী এবং যৌবনবতী কাফের রমণীদের বাছাই করা হতো এবং জিহাদীদের মধ্যে বন্টন করা হতো। যুদ্ধের ময়দানেই তাদের ওপর সওয়ার হয়ে অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নিত জিহাদীরা। অতঃপর হয় তাদেরকে দাসী হিসেবে অন্য কারও কাছে বিক্রি করা হতো, নয়তো মুক্তিপণের বিনিময়ে আত্মীয়দের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হতো (যদি মুক্তিপণ দিয়ে স্ত্রীকন্যাকে ফিরিয়ে নেয়ার মতো কোন আত্মীয় অবশিষ্ট থাকতো)।
নিচে তাবুক যুদ্ধের একটি বর্ণনা পেশ করা হলো। ইবনে ইসহাক রচিত মহম্মদের জীবন চরিত গ্রন্থ হতে বিবরণটি নেয়া হয়েছে। (রেফারেন্স-১০, পৃ-৬০২-৬০৩)।
তায়েফ ও হোনায়েন যুদ্ধের পর মহম্মদ কয়েক মাস মদীনায় অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি বাইজেন্টাইনদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিতে আদেশ দিলেন। তখন ছিল ঘোর গ্রীষ্মকাল। আরব উপদ্বীপে সে বৎসর প্রচণ্ড খরা চলছিল, সুর্যের তাপ ছিল অসহনীয়। এই সময়ে অভিযানে বের হতে অনেকেরই ঘোরতর অনিচ্ছা ছিল। অভিযান থেকে রেহাই পেতে কেউ কেউ নবীর কাছে প্রার্থনা জানাল। তদসত্ত্বেও অভিযানের আয়োজন চলল জোর কদমে। জা'দ বিন কায়েস নামক জনৈক মুসলমানকে নবী জিজ্ঞেস করলেন, সে জিহাদে যেতে প্রস্তুত কি না। উত্তরে জা'দ এই বলে অস্বীকৃতি জানাল যে, সে খুব স্ত্রীলোক পছন্দ করে। বাইজেন্টাইন রমণীরা অপূর্ব সুন্দরী, তাদের দেখলে সে নিজকে আয়ত্বে রাখতে পারবে না। সুতরাং তাকে যেন রেহাই দেয়া হয়। মহম্মদ (দঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন, অতঃপর জা’দকে উদ্দেশ্য করেই পবিত্র কোরানের অত্র আয়াত নাজেল হলো- “তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে যে, আমাকে (যুদ্ধে না যেতে) অনুমতি দিন...”(৯:৪৯, সুরা তাওবা)।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন