আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ঈশ্বরের চর দখল


লিখেছেন থাবা বাবা

অক্সিজেন ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব না। ঠিক তেমনই উপাসনা ছাড়া ঈশ্বরেরও অস্তিত্ব নেই। মানুষের উপাসনা না পেলে ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটে, তাই বেঁচে থাকার জন্য ঈশ্বর মানুষের থেকেও বেশী মরিয়া। একজন মানুষ মরে গেলেও তার বংশধর থাকে, কিন্তু ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটা মানে নির্বংশ হয়ে যাওয়া। তাই বেঁচে থাকার যুদ্ধ মানুষের থেকেও ঈশ্বরের জন্য বেশি কঠিন।

মানুষের উপাসনা পাবার জন্য ঈশ্বরের যুক্তি একটাই: তিনি সবকিছুর স্রষ্টা। আর সেটা বিশ্বাস করাবার জন্য পথ মাত্র দু'টি: একটা হচ্ছে লোভ আর একটা হচ্ছে ভয়। ঈশ্বর প্রথমে তার উপাসনা করার জন্য মানুষকে লোভ দেখান। তার উপাসনা করলে এটা দেব, ওটা দেব; মানুষের আরাধ্য সব জিনিস। আর লোভে যদি কাজ না হয়, দেখানো হয় ভয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা চালানোর জন্য একটি বিধান দেয়া হয়। সেই বিধানের বাইরে যা-ই থাকে, তার সবই অন্যায় ও অনৈতিক। আর বিধানের ভেতরের সব কাজ ঠিকমতো করলেই লোভনীয় সব জিনিসপত্র পাবার হাতছানি। আর বিধানের বাইরের কাজ করলে ভয়-ভীতি দেখানো শুরু হয়ে যায়। 

'হীরক রাজার দেশে' সিনেমাটি যাদের দেখা আছে, তাদের কাছে হীরক রাজের একটা উক্তি মনে থাকার কথা, "এরা যতো বেশি পড়ে, ততো বেশি জানে, ততো কম মানে"; রাজা মশাই জ্ঞান ও উপাসনার মাঝের মূল সূত্রটি ধরতে পেরেছিলেন। তাই তিনি তার প্রজাদের বেশি জানার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন পাঠশালা বন্ধ করে দিয়ে। তাতে প্রজাদের বেশি পড়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, আর পড়তে না পেলে জানার রাস্তাও বন্ধ। প্রজা যতো কম জানে, ততোই তাদের ঘাড়ে আরো বেশি করে চেপে বসা যায়। 

আমাদের ঈশ্বরও এই কথাটি জানেন। তাই ঈশ্বরের বিধানে জ্ঞান অর্জনের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ঈশ্বরের দেয়া বিধানে একমাত্র যে-জ্ঞানের চর্চা করতে বলা হয়েছে, সেটা হলো ঈশ্বর সংক্রান্ত জ্ঞান। ঈশ্বরের রূপ, ঈশ্বরের জ্ঞান, ঈশ্বরের ক্ষমতা, ঈশ্বরের বিধান ইত্যাদির বাইরে জ্ঞানচর্চা করা ঈশ্বরের দেয়া বিধানে নিষিদ্ধ। যে-কোনো নতুন জ্ঞান ঈশ্বরের বিধানে নিষিদ্ধ। কেন? কারণ নতুন জ্ঞান মানেই নতুন কিছু জানা, আর নতুন কিছু জানা মানেই নতুন নতুন প্রশ্ন আর ঈশ্বরের উত্তর দিতে না পারা, আর উত্তর দিতে না পারা মানে হলো ঈশ্বরের দুর্বলতা, আর ঈশ্বরের দুর্বলতা মানে হলো মানুষের ঈশ্বরের ভয় থেকে মুক্ত করার সম্ভাবনা, আর ঈশ্বরের ভয় থেকে মুক্ত অবার মানে হলো ঈশ্বরের উপাসনা না করা। 

মানুষ যতো কম জানে, ঈশ্বর ততোই তার ঘাড়ে চেপে বসে সিন্দবাদের ভূতের মতো। মানুষ যখন কাঁচা মাংশ খেত, তখন আগুন তার কাছে অপার্থিব একটা জিনিস। ঈশ্বর তাকে আগুনের কাছে যেতে মানা করে দিলেন। বললেন, ওটা মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। মানুষকে আগুন থেকে দূরে রাখা হলো। তার পর এক সময় মানুষ আগুনকে ইচ্ছে মতো জ্বালাতে শিখে গেল। ঈশ্বরের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকলো না। আগুন জ্বালানোর জ্ঞানটা যখন সবার হাতে পৌঁছে গেল, তখন ঈশ্বর বললেন যে, তিনিই তো তার পোষ্যদের জন্য আগুন পাঠালেন তাদের আরামের জন্য। মূর্খ মানুষ বললো "আহা... ঈশ্বর কতো মহান"! 

মানুষের জন্য ঈশ্বরের রূপ নিয়ে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। তাই মানুষ সেটা করে না, ঈশ্বরের ভয়ে। কিন্তু স্বভাবের দোষে মানুষের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে তার পালানোর পথ খুঁজে না পেয়ে ঈশ্বর চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি দেখিয়ে বললেন যে, সেগুলোই ঈশ্বরের রূপ। মানুষ ভাবলো, "আহা... ঈশ্বর কতো সুন্দর"! কিন্তু একটা সময় মানুষ জেনে গেল যে সেগুলো ঈশ্বর না, চন্দ্র-সূর্যের রূপ আবিষ্কার করে বসলো সে। ঈশ্বর দেখলেন সমূহ বিপদ উপস্থিত। ঈশ্বর চন্দ্র-সূর্য দখল করে বসলেন। বললেন, আরে, ওরা তো আমারই সৃষ্টি। আমি তো তোমাদের জন্যই তাদের বানিয়েছি।

তিনি তার বিধান সংশোধন করে দিলেন। বলে দিলেন যে, মানুষের থাকার জায়গা, যেটার নাম পৃথিবী, সেটার চারপাশে চাঁদ-সূর্য ঘুরতে থাকে, শুধুই মানুষকে সেবা করার জন্য। মানুষ আবার খুশী হয়ে গেল, "আহা... ঈশ্বর কতো সদয়।" 

বেয়াদব মানুষ তখন প্রশ্ন করে যে, রাতে সূর্য আর দিনের বেলায় চাঁদ কোথায় যায়? ঈশ্বর দেখেন, মহা বিপদ! বলে দিলেন যে, ওরা তখন আমার সিংহাসনের নিচে বিশ্রাম নেয়! মানুষ প্রশ্ন করে, পৃথিবী কিসের ওপর আছে? ঈশ্বর উত্তর দেন, তারা একটা ষাড়ের শিং-এর ওপরে আছে ইত্যাদি। মানুষও ঈশ্বরের ক্ষমতার কথা ভেবে খুশি। 

একটা সময় মানুষ ঈশ্বরের বিধানে দেয়া সীমা ভেঙ্গে আরো জ্ঞান অর্জন করলো। তার জন্য বিষপানে মৃত্যু, আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু, গৃহবন্দী হয়ে মৃত্যু ইত্যাদি অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তার পরেও মানুষ জ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়ে গিয়েছে। অর্জিত জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়েও দিয়েছে। হাজার বছরের একচ্ছত্র রাজত্বকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিল নবলব্ধ জ্ঞান। ঈশ্বর হন্তদন্ত হয়ে তার লাঠিয়াল বাহিনীকে আদেশ দেন, "এই ব্যাটারা! যা, দখল কর"! লাঠিয়াল বাহিনী গিয়ে জ্ঞান প্রাকৃতজনে ছড়িয়ে যাবার আগেই দখল করে নিল। কি সেই জ্ঞান? সৌরজগৎ, মহাকাশ, নক্ষত্র ইত্যাদি। ঈশ্বর সেই জ্ঞানের আলোকে তার বিধান আপডেট করলেন। আকাশ-বাতাস ও মহাকাশের আলোকে তার অবস্থান ঢেলে সাজালেন। তার পর সেটা ছড়িয়ে দিলেন সবার মাঝে, তখন সবাই ভাবলো, "দেখেছো, ঈশ্বরের কতো ক্ষমতা। তিনি সেই সাত আকাশের ওপরে বসে কতো কিছু দেখেন!" 

তার পর কতোদিন কেটে গেল, কতো কিছু হলো, কতো জ্ঞান যোগ হলো মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারে। দখল করতে করতে এখন ঈশ্বরের লাঠিয়াল বাহিনীও ক্লান্ত। ছোটখাট কিছু হলে সেটা ছেড়ে দেয় সাব কনট্রাক্টে। সেই সাব কন্ট্রাক্টরেরা তখন বিজ্ঞানের ছোটখাট আবিষ্কার দখল করে দেয়। আর বড় কোনো জ্ঞান আবিষ্কার হলেই কেবল এখন ঈশ্বরের এলিট ফোর্স আসে সেটা দখল করতে। 

এলাকার মোড়লদের মতো, ছোট খাট খাল-বিলে চর জাগলে তেমন গা করেন না, কিন্তু পদ্মার চর দখল করতে যায় তাদের খাস লাঠিয়াল বাহিনী। এই যেমন এখন ঈশ্বর দখলের চেষ্টা করছেন অচিন্তনীয় মহাবিশ্বের এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত রহস্যসমূহ। সৌরজগতের তুলনায় এটা একটু বেশীই বড়। তাই পুরনো বিধানে চলছে না। মানুষ বেমক্কা প্রশ্ন করে তাকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে। তবে ঈশ্বর হাল ছাড়ছেন না, পদ্মার চর বলে কথা, সেটা তো দখল করতেই হবে! 

হীরকরাজ পাঠশালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কী বোকা। পাঠশালা বন্ধের রাস্তা এখন বন্ধ, ঈশ্বর তাই পাঠশালা দখল করে নিয়েছেন! কী চালাক! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন