সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কুরানে বিগ্যান (দশম পর্ব): জ্ঞান তত্ত্ব

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯

আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ পাকের রেফারেন্স দিয়ে পাক কালামে ইরশাদ ফরমাইয়েছেন যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এমন কোনো জ্ঞান নাই, যা আল্লাহ পাক তাঁর মাধ্যমে মানব জাতিকে অবহিত করান নাই। মুহাম্মদ দাবী করেছেন

১) আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান কুরানে বিদ্যমান 
২৭:৭৫ - আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন ভেদ নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে না আছে। 

২) কুরানে আছে সব রকম বিষয়বস্তুর জ্ঞান 
১৭:৮৯ - আমি এই কোরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার না করে থাকেনি। 

৩) আছে সর্বপ্রকার দৃষ্টান্তের বর্ণনা 
ক) ৩০:৫৮-৫৯ - আমি এই কোরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি। আপনি যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন, তবে কাফেররা অবশ্যই বলবে, তোমরা সবাই মিথ্যাপন্থী। এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন। 
খ) ৩৯:২৭-২৮ - আমি এ কোরআনে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা অনুধাবন করে... 

পাঠক, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ইসলাম বিশ্বাসীরা কেন কুরানে বিজ্ঞান খোঁজে? কেন তারা বিজ্ঞানের নামে "তামাসার" আশ্রয় নেয়? কেন তারা কুরানে রাজনীতি, যুদ্ধনীতি, সমাজনীতি সহ জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান খুঁজবে না, যখন তাদের ঐশী কিতাব দাবী করছে: আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান ইহাতে বিদ্যমান? কুরানের এই জ্ঞানের “আছরে” ইসলাম বিশ্বাসীরা বুকে বোমা বেঁধে নিজে মরে। অপরকে মারে। হাত-পা কেটে সুস্থ-সবল মানুষকে বিকলাঙ্গ করে। মাটিতে অর্ধেক পুঁতে পাথর মেরে অমানুষিক পৈশাচিকতায় খুন করে সেই একই জ্ঞানের মাতমে! পৃথিবীর মানুষ আজ তটস্থ। এ সত্ত্বেও "জ্ঞানটি" যদি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার হতো (Only for personal use)! কাউকে বাধ্য করতো না তাদের সে জ্ঞানের বলি (victim) হতে। মাইকের আজানের প্রচণ্ড গর্জনে শব্দদূষণ ও অবিশ্বাসীদের সকালের ঘুম হারাম করা থেকে হতো বিরত। অপরের বিশ্বাসের প্রতি দেখাতো সম্মান। অনুন্নত জন্মভূমি থেকে হাজারে হাজারে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা সহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে প্রবাসী হয়ে সে দেশ সহ বিশ্বব্যাপী মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী "শরিয়া আইন চালু করার" ব্রতে ব্রতী হয়ে সে দেশের জনগণকে করতো না আতংকগ্রস্ত। তাহলে এ লেখার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। আমরা হতাম আশ্বস্ত। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তা কখনোই হবার নয়। কারণ, ইসলামের জন্মের ইতিহাস হলো ষড়যন্ত্রের ইতিহাস! যে মদিনাবাসী দয়াপরবশ হয়ে মুহাম্মদ ও তার সহচরদের বিপদে "ঠাঁই" দিয়েছিলেন, প্রবাসী হয়ে সে দেশে বংশ-বংশানুক্রমে বসবাসরত মানুষদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। ছলে-বলে-কৌশলে হত্যা-খুন- সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভিটে-মাটি থেকে উৎখাত করে তাদের “সমস্ত কিছু” গ্রাস করার ইতিহাস। সমস্ত কিছু! শুধু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিই নয়, তাদের ছেলে-মেয়ে-বউ-বাচ্চা কাউকেই রেহাই দেয়া হয়নি। ইসলামের ভাষায় পরাজিত সেই মানুষগুলো হলো "মাল"; গণিমতের মাল। সম্পূর্ণ হালাল। ১০০% ইসলাম সম্মত! ইসলামের "প্রতিষ্ঠাতা” হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হাতে কলমে তার অনুসারীদের তা শিক্ষা দিয়েছেন! এই যখন অবস্থা, সেখানে কুরান ও বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যা তো খুবই সামান্য ব্যাপার! “কুরান যাবতীয় জ্ঞানের উৎস”- এ দাবী মুহাম্মদের। মুহাম্মদ অনুসারীরা তাইই করছে, যা মুহাম্মদ তাদেরকে শিখিয়েছেন! ইসলামের সংজ্ঞা অনুযায়ী তা বাধ্যতামূলক। মগজের ব্যবহার “সম্পূর্ণ” নিষিদ্ধ! Absolutely "NO, NO." মুহাম্মদকে বিশ্বাস করলে এ ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই! মুহাম্মদ তার অনুসারীদের "স্বাধীন চিন্তার দরজা" চিরকালের জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছেন। আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর ঘোষণা: 

অমান্য কারীদের জন্য কঠোর হুমকি ও শাসানী

২৪:৬৩ - যারা তাঁর (মুহাম্মদ) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। 

৩৩:৩৬ - আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। 

৩৩:৫৭ - যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন 

২৪:৫৪ - আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। 

অনুরূপ বাণী: ৪:১৪, ৪:১৫০-১৫১, ৯:২৪, ৯:৬১, ৯:৬৩, ২৪:৬৩, ৪৮:১৩... এরূপ আরও অনেক।

মান্যকারীদের পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি 

৩৩:৭১ - যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। 

২৪:৫৬ - রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও। 

অনুরূপ বাণী: ৩:৩১, ৩:১৩২, ৪:৬৯, ৪:৮০ ৭:১৫৮, ৪:১৫২, ৫:৫৬, ২৪:৫৬, ৪৮:১০, ৪৯:১৪, ৫৭:৭, ৫৭:১৯, ৫৭:২১, ৫৭:২৮, ৬১:১০-১১ - এরূপ আরও অনেক।

ইসলাম মূলত: “ক্রীতদাসের” ধর্ম

যেখানে মুহাম্মদ হলো মালিক আর বিশ্বাসীরা হলো দাস। পৃথিবীর সমস্ত ইসলাম বিশ্বাসীই ‘আবদ-মুহাম্মদ (মুহাম্মাদের দাস)’; দাসের একান্ত (Absolutely mandatory) কর্তব্য হলো মালিককে সে তার কর্ম- ও মনোজগতের “সর্বোচ্চ আসনে” স্থান দেবে। এর অন্যথা দণ্ডণীয় অপরাধ। ইসলাম ১০০% সমগ্রতাবাদী (Totalitarian)। ইসলামী পরিভাষায় যার নাম আল-ওয়ালা-আল বারা (Love and hate for the sake of Muhammad)। ইসলামী “একনায়কত্ববাদের” এই পক্ষাঘাতে তার অনুসারীরা (দাসরা)সম্পূর্ণ পঙ্গু। মুহাম্মদের বিষয়ে বিরূপ ‘চিন্তা বা ধারনা’ করার ক্ষমতা বিশ্বাসী মগজে অসম্ভব। তাই বিশ্বাসী তফসিরকারীরা সম্পূর্ণ অসহায়। এই অসহায়ত্ব থেকে “মুহাম্মাদ” যে অভ্রান্ত, এটা প্রমাণ করতে তফসিরকারীদের যুক্তির কোনো অভাব হয় না। সে যুক্তিগুলো যতই “উদ্ভট” হোক না কেন, বিশ্বাসীরা বাধ্য তাকেই অকাট্য জ্ঞান করতে! বর্তমানের "জ্ঞান ও বাস্তবতার" সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে তাদের সামনে মাত্র "দুটি" পথ খোলা। তা হলো: 

১) বিশ্বাসে অটল থাকা - অত্যন্ত সহজ, নির্ঝঞ্ঝাট ও ঝুঁকি-হীন 

মুহাম্মদ সত্য নবী। কুরান সৃষ্টিকর্তার বাণী। এ বিশ্বাসে অটল থেকে আধুনিক জ্ঞান ও বাস্তবতাকে “বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা” সহ যাবতীয় কসরতের সাহায্যে কুরানের বাণীর সাথে মেলানোর চেষ্টা করা। মুক্তবুদ্ধির মানুষের কাছে এ কসরত/কার্যকলাপ যতই উদ্ভট ও হাস্যকর হোক না কেন! মুহাম্মদ ৭ম শতাব্দীর এক নিরক্ষর আরব বেদুইন। উদ্দেশ্যমূলক বা মতি-বিভ্রমের (Delusion) বশবর্তী হয়ে তিনি বলতেই পারেন, “আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) ও তাঁর ফেরেশতাগণ তার প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। আল্লাহ ‘কসম কাটেন। মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। আরশ থেকে ফেরেশতা পাঠায়ে তার ‘অস্বীকারকারীকে’ খুন করেন।” তার প্রত্যক্ষ অনুসারীরা তা মনে-প্রাণে বিশ্বাসও করতে পারে। এতে আশ্চর্য হবার তেমন কোনো কারণ নেই। কারণ তারাও 'সে যুগেরই' বাসিন্দা। একইভাবে অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত কোনো সাধারণ মানুষ, যারা এই ‘বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের’ বিশালতার বিষয়ে কোনো জ্ঞানই রাখেন না, জন্মসুত্রে প্রাপ্ত এরূপ বিশ্বাসে বিশ্বাসী হলে অবাক হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু যখন কোন “পণ্ডিত/তফসির-কার/ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ’ ইন্টারনেটসহ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে “অবৈজ্ঞানিক উদ্ভট বিশ্বাস”-এর সপক্ষে কু-যুক্তি ও মিথ্যাচার করে সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করে, তখন অবাক না হয়ে উপায় থাকে না! প্রমাণ হয়, বিশ্বাস মানুষের স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধি-বিশ্লেষণের ক্ষমতা অবশ করে দেয়। 

২) দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে “সত্যকে” আলিঙ্গন 

মুহাম্মদের যাবতীয় প্রলোভন ও ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে “সত্যকে” আলিঙ্গন করার সৎ সাহস অর্জন। এ পথের প্রাথমিক (Initial) স্তরটি অত্যন্ত দুরূহ ও বেদনাদায়ক! বিশেষ করে যারা আমার মত রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। “Freedom is not Free!” এই প্রাথমিক স্তরটিকে সাহসের সাথে মোকাবিলা করার পরের প্রাপ্তি - "মুক্তির” অনাবিল আনন্দ! দাসত্বের মেকী আনন্দের সাথে স্বাধীনতার সত্যিকারের আনন্দের তুলনা অর্থহীন! 

দুটি বিশেষ সতর্ক সংকেত!! 

যে কোন অজানা বিষয়ে জ্ঞানলাভ ও সিদ্ধান্ত নিতে হলে চিন্তাধারাকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন করা অবশ্য অত্যাবশ্যক। তা না হলে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হবার সম্ভাবনা ষোল আনা। ইসলামী যে কোন আলোচনায় বিভ্রান্ত হতে না চাইলে দুটি বিশেষ "সতর্ক সংকেত" সর্বদা সর্বান্তকরণে মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী

১) "বিভ্রান্তি হইতে সাবধান!” 

কুরানের বক্তা মুহাম্মদ, সৃষ্টিকর্তা নয়! 

ইসলামের যে কোনো বিষয়ে আন্তরিক আলোচনা শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পক্ষের বক্তা যে-মিথ্যা বাক্যটি দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন তা হলো, "আল্লাহ পাক কুরানে ইরশাদ ফরমাইয়েছেন--।" নি:সন্দেহে বক্তা মশায় এ বাক্যটির মাধ্যমে "আল্লাহ ওরফে মুহাম্মদ (একই ব্যক্তি)" বুঝাতে চান না? তিনি "আল্লাহ" অর্থে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি-কর্তাকে বুঝাতে চান! সত্য হচ্ছে, "বক্তা এখানে মুহাম্মদ(আল্লাহ), সৃষ্টিকর্তা নয়!" সৃষ্টিকর্তা কোন কিছুই কুরানে ইরশাদ করেন নাই। ইরশাদ ফরমাইয়েছেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। মুহাম্মদের দাবী, তাঁর বাণীগুলো 'বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার"; মুহাম্মদের প্রতি অবিশ্বাসে তার “আল্লাহর" কোন অস্তিত্ব নাই। মুহাম্মদের বর্ণিত আল্লাহ যে ভুলে ভরা "এক মনুষ্য" প্রতিকৃতির বাস্তব রূপ, সে আলোচনা গত নয়টি পর্বে করা হয়েছে। পরবর্তী পর্বগুলোতেও তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে। সুতরাং মুহাম্মদের বর্ণিত আল্লাহকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ভাবার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আলোচনা শুরুর আগেই পক্ষের বক্তা মশায় বিসমিল্লাতেই "মিথ্যা বাক্যটি" দিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন তা যে কোনো সুস্থ চিন্তাশীল মানুষই বুঝতে পারেন। 

এই চমকপ্রদ (Magnificent) বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আদৌ আছে কি নেই, সে প্রশ্ন এ বিতর্কে অপ্রাসঙ্গিক। সেই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন কি করেন না, সেটাও এ বিতর্কের বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের এ ক্ষুদ্র জ্ঞানে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে প্রশ্ন ও তার কার্যকলাপের সমালোচনা করতে পারি কি না, সে প্রশ্ন এখানে বাতুলতা। আমাদের প্রাত্যহিক অসহায়ত্ব ও অক্ষমতার বিপরীতে "স্রষ্টা" নামক প্রতিরক্ষা বর্মটি (Defensive) আমাদের উর্বর-মস্তিষ্কেরই (Superior Intelligence) "সৃষ্টি" কি না, তাও এ আলোচনার বিষয় নয়। স্রষ্টায় বিশ্বাস উচিত নাকি অনুচিত, প্রয়োজন নাকি অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক নাকি লাভজনক, সে বিষয়ের অবতারণা এ আলোচনায় অর্থহীন। এ আলোচনার "একমাত্র বিষয়" স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বক্তব্য ও কার্যকলাপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার দাবীর যথার্থতা/অসাড়তা নিরূপণ! তাঁর কার্যকলাপ কি "ঐশ্বরিক (Divine)" নাকি "দানবীয় (Demonic)"? তারই নির্ধারণ। মুহাম্মদের দাবীকৃত "আল্লাহ" কি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার (যদি থাকেন) গুনে গুণান্বিত হবার যোগ্যতা রাখেন? এ আলোচনার উদ্দেশ্য তারই নির্ধারণ। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে যে "সত্যে" আমরা একমত, তা হলো - সৃষ্টিকর্তার বাণীতে কোনোরূপ অসামঞ্জস্য-ভুল-মিথ্যা থাকতে পারে না। ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি, মুহাম্মদের প্রচারিত বাণী আধুনিক জ্ঞানের আলোকে বিকার-গ্রন্থ মানুষের প্রলাপের সামিল। সুতরাং, আলোচনা শুরু হওয়ার মুহূর্তেই মুহাম্মদের বাণীকে "সৃষ্টিকর্তার বাণী" বলে চালানোর চেষ্টা উদ্দেশ্যমূলক, অসৎ ও মিথ্যাচার। 

২) “প্রতারণা হইতে সাবধান”! 

ইসলামী পণ্ডিতরা যুগে যুগে সাধারণ মুসলমানদের আবেগ, ধর্ম-বিশ্বাস এবং কুরান ও বিজ্ঞানের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে মিথ্যাচার করে আসছেন। কীভাবে? কিছু উদাহরণ: 

ক) “বিজ্ঞান বিজ্ঞ” আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বক্তা ও শ্রোতা 

এ সব পণ্ডিতরা আধুনিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডক্টরেট, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, প্রভাষক, প্রফেসার, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক - এ জাতীয় ব্যক্তিত্ব। এ সব পণ্ডিতরা জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে সচরাচর যে প্রতারণার আশ্রয় নেন তা হলো বিজ্ঞানের মোটামুটি "সঠিক তথ্যের" সাথে “কুরানের অপব্যাখ্যা” জুড়ে দেন। অপব্যাখ্যার সাথে যোগ হয় মিথ্যাচার। প্রায় সময়ই কুরানে যার আদৌ কোনো উল্লেখই নেই তাও প্রয়োজনমত যোগ করেন আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে। সব ক্ষেত্রেই যে তিনি তা জ্ঞাতসারে করেন তা নয়। তাদের অধিকাংশেরই "ইসলামী জ্ঞান" মসজিদ-তাবলীগ-ওয়াজ মাহফিলে মৌলোভী সাহেবের বয়ান, টিভি আলোচনা অনুষ্ঠান অথবা ডাঃ জাকির নায়েকের মিথ্যাচার থেকে অর্জিত। Critical দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে "বুঝে" সম্পূর্ণ কুরান জীবনে একবারও জানার চেষ্টা ও হয়তো করেন নাই। সেই জ্ঞানের আলোকে তারা যখন বক্তৃতা করেন, আর্টিকেল লিখেন, 'ব্লগে' বিতর্কে নামেন তখন তারা এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন। আলোচনার সময় প্রায়ই দ্রুত গতিতে এ শ্রেনীর বক্তা গরগর করে কম করে "হাফ-ডজন লিস্ট" উল্লেখ করেন। কিসের? নামের। কিছু উদাহরণ, 

১) বিখ্যাত/অখ্যাত "ব্যক্তিবর্গের নাম ও তাদের উদ্ধৃতি"! সেই উদ্ধৃতির সাহায্যে আলবার্ট আইনস্টাইন কিংবা স্টিফেন হকিংদের "আস্তিক" বানিয়ে ছাড়েন! 

২) বিখ্যাত/অখ্যাত "বইয়ের নাম ও উদ্ধৃতি"। সে বইগুলো পুরোটা বুঝে তারা জীবনে কখনো পড়েছেন এমন প্রমাণ পাবেন না। অল্প কিছুদিন আগে মুক্তমনায় এক বিতর্কে "Grand Design" বইটির উদ্ধৃতি দিয়ে এক লেখক/বক্তা আমাকে প্রফেসার স্টিফেন হকিং এর "আস্তিকতার" প্রমাণ হাজির করলেন! 

৩) "সুরা ও আয়াতের নাম"। উদ্ধৃত সে আয়াতগুলো যদি পরখ না করতে যান, তবে "আসল চমক" থেকে বঞ্চিত হবেন। অধিকাংশ সময়েই বক্তার দাবী আর কুরানের বক্তব্যের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাবেন না! 

কুরান-অজ্ঞ শ্রোতামণ্ডলী 'অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারক' ধরতে না পেরে বিভ্রান্ত হন এই ভেবে যে, কুরান সৃষ্টিকর্তার বাণী না হলে এই 'সঠিক তথ্যটি' মুহাম্মদ কীভাবে জেনেছেন? সমাজের অল্প-শিক্ষিত বিশ্বাসী মানুষ এরূপ বক্তা ও উচ্চশিক্ষিত বিশ্বাসী শ্রোতা মণ্ডলীদেরকে “উদাহরণ" হিসাবে বিবেচনা করে কুরানের যথার্থতার বিষয়ে হন নিঃসন্দেহ! 

খ) “বিজ্ঞান অজ্ঞ” বক্তা ও শ্রোতা 

এ শ্রেণীর বক্তা অধিকাংশই মোল্লা-মৌলভী সমাজের অন্তর্ভুক্ত। তারা আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ে কোনো ধারনাই রাখেন না। তারা “বিজ্ঞানের অপব্যখ্যা” করে কুরানের সাথে জুড়ে দেন। ওয়াজ-মাহফিলে তারা তাদের অজ্ঞাতেই এসব "অপবিজ্ঞান" প্রচার করে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেন। বিজ্ঞান-অজ্ঞ ব্যক্তিরা, কুরানে সঠিক জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও 'বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যাটি' ধরতে না পেরে বিভ্রান্ত হন। 

গ) কুরান ও বিজ্ঞান দুটোতেই অজ্ঞ বক্তা ও শ্রোতা 

বলা বাহুল্য, সিংহভাগ বক্তা ও শ্রোতা এই দলের। যে কোনো মানের ইসলামী পণ্ডিত বক্তা ইচ্ছেমত "যেমন খুশি তেমন' করে কুরান ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা /অপ ব্যাখ্যা করে শ্রোতা মণ্ডলীকে বিভ্রান্ত করেন। ধরা পড়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই! শ্রোতামণ্ডলী 'সোবহানাল্লাহ, সোবহানাল্লাহ' জপতে জপতে আসর গরম করেন। 

ঘ) Any combination of above three 
ওপরে উল্লেখিত যে পদ্ধতিই অবলম্বন করা হোক না কেন, ইসলামী পণ্ডিতদের আলোচনা/নিবন্ধের "শেষের বাক্য গুলো প্রায় সব ক্ষেত্রে একই"। তা হলো, 

"১৪০০ বছর আগে নবী করিম (সাঃ) জিবরাইল মারফত যে ঐশী বাণী প্রাপ্ত হয়েছিলেন তার সাথে আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের “হুবহু মিল”! কুরানের এই "নিখুঁত বর্ণনাই" প্রমাণ করে নবী করিম (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রসুল। কুরান আল্লাহর কালাম না হলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কীভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের এ তথ্যগুলো জেনেছিলেন! --' সোবহানাল্লাহ! সোবহানাল্লাহ!" 

জ্ঞানই সকল পরিবর্তনের উৎস (Knowledge changes everything))। আজকের এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে যে কোনো মুক্তচিন্তার মানুষ, বিশেষ করে যারা ইন্টারনেটের সুবিধাপ্রাপ্ত, সঠিক তথ্য অনায়াসেই খুঁজে নিতে পারেন। কুরানে "কী লিখা আছে" তা কুরানের যে কোনো অনুবাদ থেকে এবং "আধুনিক বিজ্ঞান" কী বলছে তা যে কোনো বিজ্ঞান বই ও প্রবন্ধ থেকে নিমিষেই যাচাই করে নিতে পারেন। ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান এবং ধর্মান্ধ ব্যক্তির বক্তৃতায় বিভ্রান্ত হতে না চাইলে এর কোন বিকল্প নেই। 

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন