লিখেছেন সোহেল চৌধুরী
চলে এল কোরবানির ঈদ। আমার মতে কোরবানি, বলি এসব ধর্মীয় আচার আসলে সাধারণ মানুষের পৈশাচিকতা চর্চার একেকটা উপায়। একটা নিরীহ প্রাণীকে হত্যা উপলক্ষে যে উৎসবের আমেজ উপভোগ করা হয়, সেটা যে কোনো বিচারে অত্যন্ত অরুচিকর পৈশাচিকতা বটে।
মানুষ স্বভাবগতভাবে যে কোনো পৈশাচিকতা, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদির বিরোধী। মানুষ সাধারণ অবস্থায় খুনি হতে পারে না। সে একমাত্র তখনই হাতে রক্ত মাখে, যখন তার সামনে বৃহত্তর একটা উদ্দেশ্য হত্যার নির্মমতাকে পর্দার আড়াল করে ফেলে। হতে পারে সেটা বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধা নিবৃত্তি, আত্মরক্ষা, কিংবা ধর্ম, জাতি, দেশ বা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেম - এরকম গুরুত্বপূর্ণ কিছু। আদিম মানুষ এরকম প্রয়োজনেই শিকার করত। কিন্ত সে শিকারের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দের উপাদান ছিল না, ছিল ক্ষুধার অথবা আত্মরক্ষার তাড়না। আমার মনে হয়, পরবর্তীতে পশু হত্যার সাথে যখন রিচুয়াল যুক্ত হয়, তখন থেকে এ পৈশাচিকতা চর্চার শুরু।
তবে, এই চর্চার কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক উপাদান বিশেষ বিবেচ্য। যেমন, ইসলাম আবির্ভাবের সময় একটা যুদ্ধবাজ আগ্রাসী কমিউনিটির জন্য এই পৈশাচিকতার বিশেষ উপযোগিতা ছিল। তখনকার আরবের প্রত্যেকটা শিশুকে ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ, দৃঢ়, ও নির্মম যোদ্ধা হিসাবে গড়ে তুলতে এরকম বাৎসরিক হত্যা অনুশীলন বেশ কার্যকরী একটা উপায় বলে মনে হয়। প্রত্যেক বছর কোরবানির "বৃহত্তর উদ্দেশ্য"-কে মনে ধারণ করে এবং কোরবানীর পৈশাচিকতার প্রতি নির্বিকার থাকার অনুশীলন করে ধীরে ধীরে একটা শিশু এ রকম পৈশাচিকতার বিপরীতে এক ধরণের স্বভাববিরুদ্ধ ইমিউনিটি ডেভলাপ করে, যা যোদ্ধা হিসেবে তার দক্ষতা অনেকগুন বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। আর এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এখনো দেখি যেসব কমিউনিটির মধ্যে কোরবানী, বলি এসবের চর্চা আছে, তারা তুলনামূলক ভাবে শত্রুর প্রতি অনেক নির্মম, দয়ামায়াহীন। শত্রুপক্ষের কারো জন্য মানবতাবোধ তাদের মনে সহজে রাস্তা খুঁজে পায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন