লিখেছেন সোহেল চৌধুরী
কোরবানী যে আমাদের ত্যাগের শিক্ষা দেয়, এই কথাটা ধর্মের আরো দশটা কথার মত ১০০% ফাঁকা বুলি। একটু ধৈর্য নিয়ে আমার যুক্তিগুলো দেখুন।
প্রথমতঃ ত্যাগের অনুভুতি কী রকম? ত্যাগের অনুভুতি কারো অজানা থাকার কথা না। নিজের খুব পছন্দের একটা জিনিস অন্য কাউকে দিয়ে দেয়ার অনুভূতি, নিজের পোষা কোনো প্রাণী থাকলে সেটাকে বাধ্য হয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেয়ার অনুভুতি, সদ্য বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যকে দীর্ঘ দিনের জন্য অনিচ্ছায় ছেড়ে যাওয়ার অনুভূতি, কিংবা কোনো বিশেষ অপারগতার জন্য বাধ্য হয়ে প্রেমিক বা প্রেমিকার বিয়ে সহ্য করার অনুভূতি ইত্যাদির অধিকাংশের সাথে আমাদের পরিচয় আছে। সুতরাং, ত্যাগের অনুভূতি কী, সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ত্যাগের অনুভূতি অনেকটা বিরহের অনুভূতির সমতুল্য।
এখন প্রশ্ন করেন নিজেকে, কোরবানী ঈদের দিন এরকম কোন অনুভূতি বা এর ধারেকাছের কোনু অনুভূতি কি মনে তৈরি হয়? যদি উত্তর হয় 'হ্যাঁ', তবে আমি বলব, মনোরোগ চিকিৎসক দেখান। আর যদি উত্তর হয় 'না', তবে আরেকটা প্রশ্ন, কোরবানীর ঈদের দিন আসলে কী রকম অনুভূতি হয় আমাদের? আমি আমারটা বলি।
ছোটবেলায় যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম, তাবলিগ জামাতের বয়ান শুনতাম, তখনকার যে কোনো কোরবানী ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হত, আজ একটা বিশেষ দিন। ঠিক যে রকম মনে হয় ভোটের দিন, কিংবা পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার দিন। অর্থাৎ একটা উৎসবের অনুভূতি হত। তারপর সবার সাথে ঈদের নামাজে যাওয়া, নামাজ পড়া, নামাজ শেষে কোলাকুলি এসবই সে উৎসবের অনুভূতিকে রিইনফোর্স করত। আর যখন কোরবানী দেয়া হত, তখন আমার মনে আসলে যে অনুভুতিগুলো তৈরী হত, সেগুলো হচ্ছে ঐ নিরীহ প্রাণীটির প্রতি করুণা, তার অবধারিত বিভীষিকাকে অনুভব করে ভয়, আর সর্বোপরি প্রাণীটিকে কোরবানী দেয়ার একটা বীভৎস দায়িত্ববোধ। কখনোই আমার মনে ঐ প্রাণীর জন্য ত্যাগ বা বিরহের অনুভূতি তৈরি হয়নি। কোরবানীর পর প্রাণীটা যখন একটা পরিচিত জীবের আদল থেকে আস্তে আস্তে বাজার থেকে কিনে আনা মাংসের আদল নিত, তখন সেসব অনুভুতি আর থাকত না, জন্ম নিত সুস্বাদু মাংস খাওয়া সংক্রান্ত কিছু অনুভূতি। ব্যস, এই আমার অনুভূতির তালিকা। এখন আপনার নিজের প্রতি সৎ হয়ে নিজের অনুভূতিগুলোকে বিচার করার পালা। ধার্মিকদের জন্য ধর্মের প্রতি বায়াস এড়িয়ে নিজের প্রতি সৎ হয়ে নিজের অনুভূতি বিচার করা খুবই কঠিন।
ছবি সৌজন্য: লুক্স
মোট কথা, কোরবানী কখনই আমাদের ত্যাগের শিক্ষা দেয় না। আমার প্রেক্ষিত বিচারে রেখে বলা যায়, কোরবানী আমাদের করুণা, বীভৎসতা, ভয়, আর বীভৎস একটা কাজ করার দায়িত্ববোধ এর সাথে পরিচয় করায় এবং সেগুলোকে সহ্য করা শেখায়। একটা বাচ্চার সুস্থ ভবিষ্যৎ মানসিক অবস্থার জন্য এসব অত্যন্ত ভয়ানক বলে আমি মনে করি। একবার ভাবুন, একজন কসাই আর একজন কবির মধ্যে কে সহজে একটা খুন করতে পারবে? তাই শিশুদের মানসিক ভাবে কসাই হওয়া থেকে বাঁচান। কোরবানীর আয়োজন থেকে তাদের দূরে রাখুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন