নানান ধর্মীয় পুস্তকে উল্লেখিত অজস্র কাহিনী ঠাকুরমার ঝুলিকে হার মানিয়ে দেয় অনেক ক্ষেত্রেই। ধর্মবইগুলো একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে লিখেছে বলেই মনে হয়। কোরান, বেদ, বাইবেল পড়লেই বোঝা যায় সবগুলোই আজগুবি বালছালে ভরা! মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা। বাইবেল-এর আদি পুস্তকে ঈশ্বরের আত্মার পানিতে হেঁটে বেড়ানোর কথা লেখা আছে! তিনি দিন-রাত সব কিছু সৃষ্টি করলেন। তখন আল্লাহ এবং ব্রহ্মা কী করছিলেন? তাঁরা কি একান্ত ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলেন? সনাতন ধর্মে আছে মেদিনী সৃষ্টির আশ্চর্যরকম গাঁজাখুরি কাহিনী। আর আল্লাহ নিরাকার হয়ে কীভাবে পুরো দুনিয়ার আকার-বিকার-চিৎকার-শীৎকার তৈরি করলেন, সেটা আরেক চিরন্তন মিথ্যা ! সেরকম হলে ধরনী তিনবার সৃষ্টি হয়েছে, তিনভাবে (আজিব এক খেলা!!) এবং প্রত্যেকের দাবি করা দুনিয়ার একক মালিক ঈশ্বর তাহলে একজন না, সেখানেও তিনজন আছে! তাহলে কোন ধর্ম বই সত্য লিখেছে? এক ধর্মের দৃষ্টিতে আরেক ধর্ম মিথ্যা, চটিকাহিনী তুল্য। বৌদ্ধধর্ম পাগলের ধর্ম। এসব কনফিউজিং বিষয়ে মাথা না খাটিয়ে মহাপুরুষ হবার প্রতি দৃষ্টি ছিল গৌতমের । সে বুদ্ধ না হলে আজকের দুনিয়ায় বউ-পোলা ছেড়ে যাবার অপরাধে গণপিটুনি বা নারী নির্যাতন মামলায় জেলের ভাত খেতো, সে ব্যাপারে নিশ্চিত।
আল্লাহ সব সৃষ্টি করলেন, ঈশ্বর সব সৃষ্টি করলেন, মহা ব্রহ্মা সব সৃষ্টি করলেন। তারা কি যৌথ প্রযোজনা চালিয়েছিলেন? একসাথে সকল ধর্মগ্রন্থ সত্য হতে পারেনা। তাহলে সত্যের বাণী দিয়ে সৃষ্টি করা প্রতিটা ধর্মবই, মানুষকে সত্য পথের শিক্ষা দেওয়া ধর্মের বই, পরম পূজার শ্রদ্ধার ধর্মের বই, যেখানে আস্তিকদের অগাধ বিশ্বাস সেই বইগুলো কি মিথ্যা জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে না যুগের পর যুগ? প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মকে সত্য ও শ্রেষ্ঠ দাবি করার সুস্পষ্ট অর্থই হল, অন্য ধর্মের প্রতি তীব্র অবজ্ঞা এবং অশ্রদ্ধা। কারণ একজন বিশ্বাসী কখনোই নিজের ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মকে সত্য এবং শাশ্বত মানতে পারে না। নিজের ধর্মের গুণগানে ব্যস্ত থাকে, নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। তাই ধার্মিক (মানে নিজ ধর্মের পাঁড় ভক্ত) যারা, তারা কখনোই ভালবাসতে পারে না সকল ধর্মের-বর্ণের-জাতির মানুষকে! যে ধর্মে স্পষ্ট বলা হয় জাত-পাতের কথা, যে ধর্মে বলা হয় মূর্তিপূজকদের ঠ্যাঙানোর কথা, যে ধর্মে বলা হয় ঈশ্বরের জারজ সন্তানের স্বীকৃতির কথা পক্ষান্তরে নারীদেরকে তীব্রভাবে অপদস্থ করা অপমানজনক দৈববানী, সেসব ধর্মকে চার্চ, মন্দির, মসজিদে গিয়ে পালনকারী আস্তিকের দল কতটুকু ভালবাসে মানুষকে, মানবতাকে, সেটা স্পষ্টতই অনুমেয়।
স্রষ্টা, ধর্মবই এবং ধর্মের বাণী প্রচারকারী মহাপুরুষেরা যুগে যুগে কালে কালে মানুষের মাঝে বুনে দিয়েছে অধর্মের বীজ। ধর্মের নামে ধ্বংস করেছে মানুষের মনুষ্যত্ব, আরোপ করেছে নিজেদের চিন্তা, বিশ্বাস এবং গাঁজাখুরি কাহিনীর ধর্মবই নামধারী চটি। ধর্ম দেখিয়েছে স্বর্গের লোভ (ছিঃ! প্রতারণার একটা সীমা থাকে!!), নরকের ভয়, হুরপরীর লোভ (ইহজীবনে নিজের যৌনাঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে পরকালে সঙ্গমের অবাধ স্বাধীনতা প্রদান!) কিংবা সুখে থাকার, খাওয়া-দাওয়ার সুব্যবস্থা (এতো ফল থাকতে দ্রাক্ষা বাগান কেনু?) এবং উন্নতবক্ষাদের সাথে বিনোদন (এর নাম কি তাহলে সেভেন্টি থ্রীসাম? পবিত্র পায়খানা!!!)।
ঈশ্বর, আল্লাহ, কিংবা ভগবান এতো শক্তিমান, মহাক্ষমতাধর, মহাবিচারক, পরম করুণাময় তকমাধারী হলে প্রতিদানের আশায় কেন বসে থাকেন নিজেদের স্তুতি শোনার জন্য? কিংবা কেন বেঁচে থাকতে যেসব ভোগ করলে পাপ বলে নিজের দুর্বলতা ঢাকলেন, আবার স্বর্গে কিংবা বেহেশতে সেসেই জায়েজ করে লোভ দেখালেন? প্রার্থনা কিংবা নামাজের জন্য কেন আলাদা ভাষা সৃষ্টি করেলন? তিনি এতো কিছু জানেন, পারেন, আলু-কচু বোঝেন, বাংলা বোঝেন না? এতোবড় প্রপঞ্চককে মানুষ কীভাবে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে?
মুমিনদের ধর্মের কাহিনী আরবি, পালি-ছালি, সংস্কৃত পর্যন্তই ফাক পবিত্র। বাংলা অনুবাদ করলেই বোধগম্য হয় হাজার বছর আগের প্রচলিত কথা এই যুগে কতটা অচল এবং ব্যাকডেটেড! আর এসব কথা মেনে চলে আজকের আধুনিক যুগের আবাল মানুষ। ধর্মের বাণী মেনে নেয় অনায়াসে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উপযোগ উপভোগ করে ষোলো আনা, কিন্তু বিবর্তন কিংবা বিগ-ব্যাং এর কথা শুনলে লাফ দিয়ে উঠে ধর্মীয় অনুভূতি!!
তথাকথিত মহাপুরুষরা মানুষের চরিত্রের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই কল্পনার সব রঙ মিশিয়ে টাইট দেওয়ার জন্য রেখে গেছেন তাদের আবাল দর্শনের লিখিত রূপ - ধর্মীয় চটি। এসব নিয়ে অনেকবার অনেকেই অনেককিছু বলছেন, কিন্তু আস্তিকদের কখনোই সেসব পছন্দ হয়নি। অদেখা-অচেনা-নিরাকারকে এক এবং অভিন্ন মেনে কিংবা অবিশ্বাস্য কাহিনীকে সত্য মনে করে দিনের পর দিন স্তুতি গেয়েছে ওপরওয়ালা নামক প্রশংসাপ্রিয় প্রাণীর। তিনি নিজের জন্য সব সৃষ্টি করেছেন, তিনি শয়তান সৃষ্টি করেছেন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কিংবা নরক বা দোযখ তৈরি করেছেন মানুষকে শাস্তি স্বরূপ গ্রিল করতে।
ভাবছি, আল্লাহ কাফেরদের বিচার করলে মহা ব্রহ্মা মাইন্ড করবেন না? তিনি কি তখন অবসর নেবেন? ম্লেচ্ছদের বিচার যদি ব্রহ্মা করেন, আল্লাহ কি চুপ করে তামাশা দেখবেন? (সেখানে আরেকটা ঐশী দাঙ্গা হবে আল্লাহ-ঈশ্বর-ব্রহ্মার মধ্যে! যে স্বর্গে যেতে মানুষ উন্মুখ, সেই স্বর্গেও গ্যাঞ্জামের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায়না!!) বেহেশতে যেতে পারবে শুধুমাত্র মুমিন মুসলিম! এমনকি একজন ধার্মিক মালাউনের বেহেস্তে প্রবেশের অধিকার নেই! এসব মালাউনের বাচ্চাকে পিটিয়ে-খেদিয়ে-পোন্দিয়ে যদি ইসলামে ঢোকানো যায়, তাহলে অন্তত সে বেহেস্তে তার কর্তিত লিঙ্গ হুরির যোনীতে প্রবেশ করাতে পারবে! এ তো মুমিনের নির্দোষ চাওয়া। এতে অধর্মের কী আছে! ম্লেচ্ছরা ছুঁলে যদি স্বর্গের পথ বাধাগ্রস্থ হয়, সেক্ষেত্রে একপাতে খেতে ঘৃণা করতেই পারে ধার্মিক হিন্দু একজন মানুষ। একদল ব্যস্ত জ্বালাও-পোড়াও নীতিতে, অপরদল মানুষকে নিচু জাত, ম্লেচ্ছ কিংবা অস্পৃশ্য নাম দিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার তালে! ধার্মিকদেরই রূপ এসব। যাদের মানবতা-ভালবাসা কিংবা ধ্যান-জ্ঞান সীমাবদ্ধ নিজ সম্প্রদায়ের ভেতর। তীব্র বিদ্বেষ অন্য সব ধর্মের জন্য।
কোনো ধর্মই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো ধর্মই শ্রেষ্ঠ নয়। কোন ধর্মগ্রন্থের বাণীই নির্ভুল নয়। যারা নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের মোহে মানুষ ও মানবতা ভুলে মেতে থাকে ঈশ্বরস্তুতিতে, তাদের জীবন কেটে যায় ধার্মিকরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে, স্রষ্টাকে পটাতে। এরাই সময় এবং সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কিচ্ছা-কাহিনী প্রচার এবং প্রসারে। এভাবে আর কতকাল ভণ্ডামি চলবে? কবে এরা সব ভুলে বরণ করবে মানবতাকে, মানবধর্মকে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন