পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে যে বাণীগুলো প্রচার করেছিলেন, তাতে অবিশ্বাসীরা কেন "সন্দেহ পোষণ" করতেন, তা কুরানে অত্যন্ত স্পষ্ট। তাদের তিনটি অভিযোগের প্রথম দুইটির আলোচনা আগের পর্বে (সপ্তদশ) করা হয়েছে। মুক্তচিন্তার পাঠকরা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন যে, অবিশ্বাসীদের অভিযোগ গুলো ছিল যথার্থ। তাদের সে অভিযোগের কোনো সদুত্তরই মুহাম্মদ (আল্লাহ) দিতে পারেননি। তাদের তৃতীয় অভিযোগটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর!
তৃতীয় অভিযোগ: মুহাম্মদ প্রেরিত ব্যক্তি নন, সে মিথ্যাবাদী, উন্মাদ / যাদুগ্রস্ত
প্রবক্তা মুহাম্মদের (আল্লাহ) ভাষায়:
২২:৪২ - তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে কওমে নূহ, আদ, সামুদ,
২৯:১৮ - তোমরা যদি মিথ্যাবাদী বল, তবে তোমাদের পূর্ববর্তীরাও তো মিথ্যাবাদী বলেছে। স্পষ্টভাবে পয়গাম পৌছে দেয়াই তো রসূলের দায়িত্ব।
৩৪:৪৩ - যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা বলে,তোমাদের বাপ-দাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বাধাদিতেচায়। তারা আরও বলে, এটা মনগড়া মিথ্যা বৈ নয়। আর কাফেরদের কাছে যখন সত্য আগমন করে, তখন তারা বলে, এতো এক সুস্পষ্ট যাদু।
৩৫:৪ - তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণকেও তোমিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। আল্লাহর প্রতিই যাবতীয় বিষয় প্রত্যাবর্তিত হয়।
৩৮:৪ - তারা বিস্ময়বোধ করে যে, তাদেরই কাছে তাদের মধ্যে থেকে একজন সতর্ককারী আগমন করেছেন। আর কাফেররা বলে এ-তো এক মিথ্যাচারী যাদুকর।
উম্মাদ
১৫:৬- তারা বললঃ হে ঐ ব্যক্তি, যার প্রতি কোরআন নাযিল হয়েছে, আপনি তো একজন উম্মাদ।
২৩:৭০- না তারা বলে যে, তিনি পাগল ? বরং তিনি তাদের কাছে সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।
৩৪:৭-৮ -কাফেররা বলে, --- সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে, না হয় সে উম্মাদ এবং যারা পরকালে অবিশ্বাসী, তারা আযাবে ও ঘোর পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে।
৩৭:৩৬ - বলত, আমরা কি এক উম্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব।
৬৮:৫১- কাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে এবং তারা বলেঃ সে তো একজন পাগল।
যাদুগ্রস্ত (Bewitched)
১৭:৪৭ - যখন তারা কান পেতে আপনার কথা শোনে, তখন তারা কেন কান পেতে তা শোনে, তা আমি ভাল জানি এবং এও জানি গোপনে আলোচনাকালে যখন জালেমরা বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছ।
২৫:৮- জালেমরা বলে, তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ।
>>> পাঠক, অবিশ্বাসীদের কথা আপাতত স্থগিত রেখে বিশ্বাসী মুমিনদের উদ্ধৃতি জানা যাক। বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিক ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীকার মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮) লিখেছেন:
মুহাম্মদের দুধ মাতা হালিমা জানিয়েছেন,
‘তার (হালিমার ছেলে) পিতা আমাকে বললেন, "আমি শঙ্কিত এই ভেবে যে, ছেলেটি (মুহাম্মদ) মস্তিষ্ক রোগগ্রস্ত (stroke), পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পূর্বেই তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে এসো।" তাই আমরা তাকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিতে গেলাম। তার মা আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, কেন আমরা তাকে ফেরত নিয়ে এসেছি যদিও তার কল্যাণ কামনায় আমি উদ্বিগ্ন এবং তাকে আমি আমার কাছে রাখতে ইচ্ছুক। আমি তাকে (মুহাম্মদের মা আমিনা) বললাম, "এতদিন ঈশ্বর আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছে এবং আমি আমার কর্তব্য করেছি। আমি শঙ্কিত এই ভেবে যে বিপদ তাকে স্পর্শ করবে। তাই আপনার নির্দেশ মোতাবেক আমি তাকে (মুহাম্মদ) আপনার কাছে ফেরত নিয়ে এসেছি।" তিনি জানতে চাইলেন আসলে কী ঘটেছে এবং সেই কারণটি তাঁকে জানাবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি আমাকে স্বস্তি দেননি। তিনি জানতে চাইলেন, আমি তাঁকে (মুহাম্মদ) পিশাচগ্রস্ত (Possessed demon) জেনে ভীত কি না। আমি জবাবে বললাম, 'হ্যাঁ।' তিনি বললেন, কোনো পিশাচের সাধ্য নাই যে আমার ছেলেকে স্পর্শ করে... (তারপর উদ্ভট/অলৌকিক কিচ্ছা)।
- (অনুবাদ: লেখক)
(His father said to me, "I am afraid that this child has had a stroke, so take him back to his family before the result appears." So we picked him up and took him to his mother who asked why we had brought him when I had been anxious for his welfare and desirous of keeping him with me. I said to her, "God has let my son live so far and I have done my duty. I am afraid that ill will befall him, so I have brought him back o you as you wished." She asked me what happened and gave me no peace until I told her. When she asked if I feared a demon possessed him, I replied that I did. She answered that no demon had any power over her son who had a great future over him, and then she told how when she was pregnant with him a light went out from her which illuminated the castles of Busra in Syria and she had borne him with the least difficulty imaginable. When she bore him he put his hands on the ground lifting his head towards the heavens. "Leave him then and go in peace," she said.']
Reference: Ibne Hisham (d 833 CE) ‘Sirat Rasul Allah -byIbne Ishaq (704-768)
ed M al Saqqa et al, Cairo, 1936. Translated by A. Guillaume, Oxford university press, First Published 1955. Page - 72)
আয়েশা হতে বর্ণিত,একদা নবী এমন যাদু-গ্রস্তহয়েছিলেন যে, ভ্রমের বশে এমন সব কাজের কথা তিনি করেছেন বলে বলতেন, যা তিনি আদৌ করেননি।
(অনুবাদ: লেখক)
আয়েশা হতে বর্ণিত,নবীর ওপর যাদুর আছরহলে ভ্রমের বশে এমন সব কাজের কথা তিনি করেছেন বলে বলতেন, যা তিনি আদৌ করেননি। একদা তিনি অনেকক্ষণ প্রার্থনার পর ঘোষণা করলেন, "আল্লাহর ইচ্ছায় আমি আমার রোগের উপশম জানি। দুই ব্যক্তি আমার কাছে (স্বপ্নে) এসে বসলো, একজন আমার শিয়রে আর আরেকজন আমার পায়ের কাছে।একজন অপরজনকে বললো,"এই লোকটির কী অসুখ?"অপরজন বললো, "সে যাদুগ্রস্ত।"প্রথম জন বললো,"কে তাকে যাদু করেছে?"অপরজন বললো,"লুবায়েদ বিন আল-আসাম।"প্রথম জন জিজ্ঞেস করলো, "কী দিয়ে?"জবাবে অন্যজন বললো, "একটা চিরুনি, তার সাথে জড়ানো চুল এবং খেজুর গাছের ছাল।"প্রথম জন বললো, "কোথায় সেটা?"অপরজন উত্তর দিল, "সেটা ধাওয়ানের কুয়ায়।"নবী বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন, তারপর ফিরে এসে আমাকে বললেন, "খেজুর গাছগুলো (কুয়ার পাশের) ছিল শয়তানের মাথার মত।"আমি জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি কি ঐ যাদুর সামগ্রীগুলোকে তুলেছেন?"তিনি বললেন, "না, কারণ আল্লাহ আমার নিরাময় করেছেন এবং আমি শঙ্কিত যে, এই কাজটি মানুষের ক্ষতির কারণ হবে।"পরে এই কুয়াটিকে মাটি চাপা দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল।'
(অনুবাদ: লেখক)
>>> সুতরাং যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, শুধু অবিশ্বাসীরাই নয়, মুহাম্মদের দুধ-মাতা হালিমা এবং তার সবচেয়ে প্রিয় সহধর্মীনি আয়েশা (রাঃ) ও আমাদের জানাচ্ছেন যে, সেই ছোটকাল থেকেই মাঝে মাঝে মুহাম্মদ অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। বাস্তবে যে কাজ তিনি করেননি, তাইই করেছেন বলে দাবী করতেন।
জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ জোগানোর নিমিত্ত সমগ্র কুরানে একটিও স্পষ্ট বাণী নেই (আশ্চর্য নয় কেন মুসলমানেরা শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞানে-বিজ্ঞানে পৃথিবীর সর্বনিম্ন)! কিন্তু অবৈজ্ঞানিক অশরীরী জিনদের নামে একটি পূর্ণ সুরা কুরানে বিদ্যমান (৭২ নম্বর)। প্রবক্তা মুহাম্মদ (আল্লাহ) ঘোষণা দিয়েছেন:
৭২: ১-১৫ - “-- জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি; যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না। এবং আরও বিশ্বাস করিযে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই। আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত। অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জিন কখনও আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্নম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত। তারা ধারণা করত, যেমন তোমরা মানবেরা ধারণা কর যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ তা’আলা কখনও কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না।
আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে। আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছা রাখেন। আমাদের কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত। আমরাবুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহ তা’আলাকে পরাস্ত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাকে অপারক করত পরব না। আমরাযখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশংকা করে না। আমাদের কিছুসংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়, তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে। আর যারা অন্যায়কারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন।”
>>> জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডকে (Meteorites) মুহাম্মদ জিন/শয়তান তাড়ানোর হাতিয়ার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন (বিস্তারিত দ্বিতীয় পর্বে)।
জিনদের নিয়ে কুরানে আরও যে আয়াতগুলো আছে, সেগুলো হচ্ছে:
১৫:২৭-২৮ - --এবং জিনকে এর আগে লু এর আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি।
৩৪:১২ - আর আমি সোলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।
৩৭:১৫৮ -তারা আল্লাহ ও জ্বিনদের মধ্যে সম্পর্ক সাব্যস্ত করেছে, অথচ জ্বিনেরা জানে যে, তারা গ্রেফতার হয়ে আসবে।
৫১:৫৬- আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।
এ ছাড়াও,
৬:১০০, ৬:১২৮, ৬:১৩০, ২৭:৩৮-৩৯, ৪৬:২৯-৩০, ৫৫:৩১-৩৫ - ইত্যাদি।
>>> সুরা জিনের শানে নজুলে ইমাম বুখারী (সহি বুখারী, ৬:৬০:৪৪৩) আমাদের জানাচ্ছেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে উকাজ বাজারে যাওয়ার পথে নাখলা নামক স্থানে ফজর নামাজরত অবস্থায় জিনদের একটি দল (তাঁর সাথে সাক্ষাতে) কুরানের মহান বাণী শুনে বিমোহিত হোন। তারা কুরানের ঠিক কোন আয়াতটি এবং কতটুকু শুনেছিলেন, তার উল্লেখ এ হাদিসে নেই। ফজর নামায মাত্র চার রাকাত। এই অল্প সময়ে এই অশরীরীরা যে খুব বেশি কিছু শুনতে পারেননি, তা সহজেই অনুমেয়।
বরাবরের মতই মুহাম্মদের আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্য সাহাবীদের কেউই এই জীবটিকে দেখেননি। কিংবা তাদের কথোপকথনও শোনেননি। মুহাম্মদ একাই তা শুনেছেন ও দেখেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই মানসিক উপসর্গটিকে দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তির বিভ্রম (Visual and auditory Hallucination) নামে আখ্যায়িত করা হয়। জিনের অস্তিত্ব প্রমাণিত না হলেও এক বিশেষ ধরনের মানসিক রুগীরা যে এই মতিভ্রম উপসর্গের শিকার, তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে আজ প্রমাণিত।
সুতরাং অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদকে কেন "পাগল" বলে আখ্যায়িত করতেন তার ব্যাখ্যা কুরান-হাদিসেই বিদ্যমান।
মুহাম্মদের জীবনী নিয়ে হাজার-হাজার মিথ্যাচার ও অতিকথা (Myth) সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। প্রশ্ন হলো, কেন এ মিথ্যাচার? কেন এ অতিকথা? এর কারণ বুঝতে হলে আমাদেরকে আবারও ফিরে যেতে হবে ইসলামের মৌলিক শিক্ষায়। ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী মুহাম্মদের (আল্লাহ) বশ্যতা স্বীকার বাধ্যতামূলক এবং তাঁর প্রশংসা করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। বাকস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে রহিত!
প্রবক্তা মুহাম্মদ তার আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে কুরানে বহুবার নিজেই নিজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। 'মহান চরিত্রের অধিকারী (৬৮:৪); বিশ্বাসভাজন (৮১:২১); বিশ্ববাসীর রহমত (২১:১০৭); সমগ্র মানবজাতির সুসংবাদাতা (৩৩:৪৫); উজ্জ্বল প্রদীপ (৩৩:৪৬)’ - ইত্যাদি, ইত্যাদি স্বঘোষিত বিশেষণে আখ্যায়িত করেছেন নিজেকে। কিন্তু নির্জলা সত্য হলো, কুরানের অসংখ্য বাণী ও সিরাত-হাদিসের নৃশংস-অমানবিক ঘটনার বর্ণনা মুহাম্মদের এ সকল দাবীর অসাড়তার উজ্জ্বল সাক্ষী! অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদকে জানতেন একজন মিথ্যাবাদী ও জালিয়াত (Forger) রূপে। অসংখ্য বাক্যে মুহাম্মদ অবিশ্বাসীদের করছেন অভিশাপ (একাদশ পর্ব) । নেতৃত্ব দিয়েছেন নিরীহ বাণিজ্য ফেরত কাফেলায় ডাকাতি, সম্পত্তি লুট, ভূমিদখল, সন্ত্রাস ও খুনের মত বীভৎস কর্মকাণ্ডে (দ্বাদশ পর্ব)! যে কোন সাধারণ বিবেকবান মানুষই জানেন যে, কোনো ব্যক্তির 'স্বঘোষিত আত্ম-প্রশংসা' কোনোক্রমেই সেই ব্যক্তির সত্যবাদিতার প্রমাণ হতে পারে না। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতাকে অস্বীকার করার কোনোই অবকাশ নেই। এমত পরিস্থিতিতে মুহাম্মদের বাণীকে অভ্রান্ত ও তাঁকে বিশ্বাসী, সত্যবাদী, চরিত্রবান ও রহমতের আধার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার উপায় কী?
উপায় মাত্র দুটি:
১) হুমকি-ভীতি ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমালোচনাকারীদের কঠোর হস্তে দমন। যাতে বিরুদ্ধবাদীরা কোনোরূপ বিরূপ মন্তব্যের সাহসই না পায়!
২) নেতিবাচক তথ্যগুলোকে গোপন অথবা বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা।
শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত এমত পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিথ্যাকে সত্যের মোড়কে প্রতিষ্ঠিত করা যে সম্ভব, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ইসলাম। গত ১৪০০ বছর যাবত মুহাম্মদ ও তাঁর প্রবর্তিত ইসলামের সমালোচনাকারীকে অমানুষিক পৈশাচিকতায় দমন করা হয়েছে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পীড়নযন্ত্রের মাধ্যমে সে সব মুক্তমনাদের জর্জরিত করা হয়েছে শারীরিক ও মানসিক আঘাতে। আজকের পরিস্থিতিও যে তার ব্যতিক্রম নয়, তা পৃথিবীবাসী প্রতি নিয়তই প্রত্যক্ষ করছেন!
মুহাম্মদের যাবতীয় উদ্ভট ও অবৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনী, স্বঘোষিত নির্জলা মিথ্যা আত্ম-প্রশংসা, অমুসলিমদের প্রতি তার যাবতীয় ঘৃণা-হিংসা-ত্রাস-অমানবিক বিধান– ইত্যাদি, ইত্যাদি যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবার প্রয়োজনেই মুহাম্মদ অনুসারী/পণ্ডিতরা গত ১৪০০ বছর যাবত এ দু'টি উপায় অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে অনুশীলন করে আসছেন। সত্যকে মিথ্যার বেড়াজালে বন্দী করার প্রয়োজনেই সৃষ্টি করেছেন মুহাম্মদের জীবনী নিয়ে হাজারও মিথ্যাচার ও অতিকথা (Myth)! ফলস্বরূপ, ইসলামের ইতিহাসে হাজারো মিথ্যাচারের বেসাতী! মুহাম্মদ ও তার বাণীকে “অভ্রান্ত" প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনেই ইসলাম বিশ্বাসীদের তা করতে হয়েছে অতীতে! করতে হচ্ছে বর্তমানে! করতে হবে ভবিষ্যতে!
মুহাম্মদ ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত পিতৃ-মাতৃ স্নেহবঞ্চিত ৭ম শতাব্দীর এক আরব বেদুইন। পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের মতই ছিল তাঁর আশা-আকাঙ্ক্ষা, লোভ-লালসা, ভুল-ভ্রান্তি, ভাল-মন্দ, মানবিক /অমানবিক ইত্যাদি যাবতীয় দোষ-গুণ ও দুঃখ-শোকের জীবন! পৃথিবীর সকল মানুষের মত তিনিও ছিলেন চিন্তা-চেতনা-কর্মে তাঁর স্থান ও কালের সীমাবদ্ধতায়। এই চরম সত্যটিকে যাঁরাই অস্বীকার করে মুহাম্মদের যাবতীয় বাণী ও কর্মের বৈধতা দেবার জন্য "ঐশী" শক্তির দ্বারস্থ হবেন, তাঁদেরকেই ঘুরপাক খেতে হবে 'মুহাম্মদ <>আল্লাহ<> মুহাম্মদ<>আল্লাহ>' চক্রের গোলকধাঁধায়।
মিথ্যাবাদী/জালিয়াত বনাম মহা-বিশ্বাসভাজন (আল-আমিন)
পৃথিবীর সকল ইসলাম বিশ্বাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী ও বিশ্বাসভাজন! যে কোনো ইসলামী আলোচনা ও বক্তৃতা-বিবৃতিতে তাঁরা উচ্চস্বরে প্রচার করেন, “অবিশ্বাসীরাও মুহাম্মদের সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে আল-আমিন নামে আখ্যায়িত করেছিলেন।”
কিন্তু কুরানে আমরা কী দেখছি?
দেখছি, মুহাম্মদের নিজেরই জবানবন্দী তাঁর সম্পূর্ণ বিপরীত সাক্ষ্যবাহী! শুধু একটি বা দু'টি বাক্য নয়, কুরানের বহু বাক্যে যে-সত্যটি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো মুহাম্মদের পরিপার্শ্বিক প্রায় সমস্ত মানুষই মুহাম্মদকে জানতেন মিথ্যাবাদী/জালিয়াত হিসাবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মক্কায় মুহাম্মদের ১২-১৩ বছরের অক্লান্ত প্রচারণার ফসল সর্বোচ্চ ১৩০ জন অনুসারী। এই অত্যন্ত স্বল্প সংখ্যক অনুসারী ছাড়া তার পরিপার্শ্বের অন্যান্য সবাই ছিলেন অবিশ্বাসী, যাঁরা মুহাম্মদকে মিথ্যাবাদী রূপে আখ্যায়িত করেছিলেন। মিথ্যাবাদী ও বিশ্বাসী দু'টি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চরিত্র। মিথ্যাবাদী তাকেই বলা হয়, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।
ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল হলো কুরান। সেই কুরানেরই আলোকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, “মুহাম্মদের আল-আমীন উপাধিটি ইসলামের হাজারও মিথ্যাচারের একটি!”
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।
(চলবে)