বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১২

বিশ্বাস কেন ঘৃণার যোগ্য

যাবতীয় ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদাত্ত ও উদ্ভট আহ্বান শোনা যায় প্রায়ই। অনেকে তো রীতিমতো শ্রদ্ধা দাবি করে বসেন! "শ্রদ্ধা দাবি করা যায় না, অর্জন করে নিতে হয়" - এই সরল সত্যটি মূঢ়দের মস্তিষ্কে কবে পৌঁছবে? 

প্যাট্রিক কন্ডেলের এই ভিডিওটি আগে ধর্মকারীতে দেয়া হয়েছিল। তবু সেটা আবার পোস্ট করতে ইচ্ছে হলো, কারণ ধর্মকারীর লক্ষ্য ও অবস্থান তা অনেকখানিই প্রকাশ করে। তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশের অনুবাদ পড়ে নিতে পারেন: 

বিশ্বাস কেন শ্রদ্ধা পাবার যোগ্য, কেউ কি আমাকে তা হিসেব কষে দেখিয়ে দেবেন? কারণ আমার কাছে তা বোধের অতীত। সারাক্ষণই শুনে আসছি, "আরেকটু বেশি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত আপনার। আপনার মতের সঙ্গে কারুর মত না মিললেই তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলবেন না।"

এমন কিন্তু নয় যে, আমার মতের সঙ্গে কারুর মতের মিল না হলেই তাকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ বলি। বলি বাস্তবতা প্রসঙ্গে তাদের বিশ্বাস এবং, সর্বোপরি, সেই বিশ্বাস নিয়ে তারা কী করতে চায়, সেটার ভিত্তিতে। ব্যাপারটা যদি শুধু বিশ্বাসের হতো, তাহলে সেটিকে তার চাহিদা অনুযায়ী শ্রদ্ধা প্রদর্শনে কোনও সমস্যা আমার হতো না। ঠিক যেভাবে অন্যদের পোশাকরুচি, ঘরের সাজসজ্জা - এমনকি আমার কাছে তা রুচিহীন মনে হলেও - আমি তা প্রকাশ করি না তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।

কিন্তু ধর্ম তো বিশ্বাসের চেয়ে বেশি কিছু। ধর্ম সবার ওপরে চাপিয়ে দিতে চায় সর্বজনীন নৈতিকতা, যে-কারণে এই জাতীয় লোকের অভাব কখনওই হয় না, যারা মনে করে, অন্যদের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানো তাদের কর্তব্য। এবং এই রকম মানসিকতাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েই আমরা দুর্দশায় পড়েছি।

সংজ্ঞা অনুসারে বিশ্বাস মানেই তা অপরীক্ষিত। সে-কারণে তার স্থান হবার কথা সবচেয়ে অগভীর অভিজ্ঞতাগুলোর কাতারে। এর পরেও তা, ক্ষমতায় কুলোলে, আমাদের এই গ্রহের প্রতিটি মানুষের প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি শব্দ ও প্রতিটি চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতো।

কেউ যদি শয়তানের প্রতিকৃতি ও নরকের আগুনের আতঙ্ক দিয়ে তার সন্তানের মস্তিষ্ক পূর্ণ করে, সে একজন অসুস্থ ব্যক্তি, এবং সে মানসিকভাবে অসুস্থ। তবে সেটা তার অজানা, তার একমাত্র কারণ - অতীব দীর্ঘকালব্যাপী কিছু স্বল্পজ্ঞানী মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তাকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। তবে সত্যটা হচ্ছে এই: তার বিশ্বাস শিশুতোষ, তাদের পবিত্র গ্রন্থ মিথ্যা এবং তার ঈশ্বর বিভ্রমমাত্র।

যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা দাবি করে, সঙ্গত কারণেই তার প্রাপ্য হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। শ্রদ্ধা তার প্রাপ্য হলে সে তা ইতোমধ্যেই পেয়ে যেতো।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব যদি থেকে থাকে, তাহলে আমি চাইবো, সে নিজে এসে আমাকে সেটা জানাক। অন্য কারোর কাছ থেকে আমি তা শুনতে চাই না।... দয়া করে আপনাদের পবিত্র গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেবেন না... সত্যি বলতে, কোনও বিষয়ে বাইবেল বা কোরানের বক্তব্য কী, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই আমার।

তবে একটি কথা আপনাদের অনুধাবন করা উচিত, কোনওকিছুতে আপনার প্রবলতম বিশ্বাসও কিন্তু সেটিকে বাস্তব করে তোলে না। আপনাকে সম্মোহিত করে আপনাকে বিশ্বাস করানো যেতে পারে যে, আপনি একটি মুর্গি, তবে অন্তত গোটাকয়েক ডিম স্বচক্ষে দেখার আগে অন্যেরাও তা বিশ্বাস করবে, সে আশা আপনি যুক্তিসঙ্গত কারণেই করতে পারেন না। অতএব আপনি যদি আমাকে কিছু ডিম দেখাতে পারেন, কেবল তখনই আমি বিশ্বাস করবো, আপনি মুর্গি, আপনি খ্রিষ্টান, আপনি মুসলিম...

তবে তার আগ পর্যন্ত আপনার বিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করতে মানা করবেন না, প্লিজ।

অ-ইউটিউব ভিডিও। সাবটাইটেলসহ দেখার ব্যবস্থাও আছে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন