পর্ব ১
এবারে একটু হাদিস ঘেঁটে দেখা যাক। হাদিস হল নবী (সঃ) -এর কথাবার্তা, আচার-বিচার, ধ্যান-ধারণা, ব্যবহার-ব্যক্তিত্ব, মতামত-সিদ্ধান্ত, এ সবের বিস্তারিত রিপোর্ট, যা তাঁর সহচরেরা দিয়ে গেছেন। হাদিস ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, কোরানের পরেই এর স্থান। হাদিস বাদ দিলে ইসলামের সাংঘাতিক অঙ্গহানি হয়ে যায়। বিখ্যাত মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম তাঁর বিখ্যাত ‘‘হাদিস সংকলনের ইতিহাস’’ বইয়ের ৯৪ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন বুলন্দ ইমামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘হাদিস অমান্যকারী - কাফির।'
ছয়টি হাদিসের বই সর্বকালে সর্ব দেশে সুন্নী মুসলমানেরা ‘‘সহিহ্’’ বা ‘‘সত্য’’ বলে গণনা করেন, সেগুলো হল: সহিহ্ বোখারি, সহিহ্ মুসলিম, সহিহ্ নাসায়ী, সহিহ্ তিরমিজি, সহিহ্ আবু দাউদ এবং সহিহ্ ইবনে মাজাহ। আমরা মোটামুটি সেগুলো থেকেই উদ্ধৃতি দেব।
দুনিয়ার এক হাজার দুশো মিলিয়ন মুসলমানের মধ্যে সুন্নীরা-ই এক হাজার কোটি। হাদিসে মেয়েদের সম্বন্ধে অনেক ভালো কথাও আছে। কিন্তু তার পাশাপাশি যা আছে, তাতে লজ্জায় মুসলমান পুরুষদের স্রেফ আত্মহত্যা করা ছাড়া অথবা ওই শত শত দলিলগুলোকে খুন করা ছাড়া উপায় নেই। বাড়িয়ে বলছি না একটুও, সবই দেখাব একটা একটা করে।
সহিহ্ মুসলিম, বই ৩১ হাদিস ৫৯৬৬:
আবু মূসার বর্ণনা মতে নবী (দঃ) বলেছেন: "পুরুষদের মধ্যে অনেকেই ত্রুটিমুক্ত কিন্তু নারীদের মধ্যে কেউ-ই ত্রুটিমুক্ত নয়, কেবল ইমরানের কন্যা মেরী এবং ফারাওয়ের স্ত্রী আয়েশা ছাড়া।"
হল? একেবারে সাফ কথা। এ কথার পর কি আর কিছু বলার থাকতে পারে, না বলা উচিত? এর পরেও আবার যদি গোদের ওপর বিষফোঁড়া গজায়, ইসলাম যদি পতিদেবতাকে ওপরে তুলতে তুলতে একেবারে আসমানী পাতি-দেবতা করে তোলে, তবে নারী তো পুরুষের পায়ের তলায় পিষে যাবেই, তার জন্মগত মানবাধিকারও লেজ তুলে পালাবেই।
প্রমাণ দেখাচ্ছি সুনান আবু দাউদ হাদিস থেকে; বই ১১ হাদিস নম্বর ২১৩৫:
কায়েস ইবনে সা’দ বলছেন, "নবী (দঃ) বললেন: “আমি যদি কাউকে কারো সামনে সেজদা করতে বলতাম, তবে মেয়েদের বলতাম তাদের স্বামীদের সেজদা করতে। কারণ আল্লাহ স্বামীদের বিশেষ অধিকার দিয়েছেন তাদের স্ত্রীদের ওপরে।"
গ্রাম-গঞ্জের কোটি-কোটি অশিক্ষিত মুসলিম পুরুষ আর কিছু না বুঝুক, আল্লার দেয়া এই ‘‘বিশেষ অধিকার’’ ঠিকই বুঝেছে, আর তার ঠ্যালায় মেয়েদের যে কী অপমান আর নৃশংস অত্যাচার সইতে হয়েছে শতাব্দী ধরে, তা ঠিকমত উপলব্ধি করলে অশ্রু সামলানো যায় না।
এ ঘটনাটা ঘটেছিল হিন্দুধর্মের বইতেও। হিন্দুরা তো তাদের মহাপুরুষদের অক্লান্ত চেষ্টায় সে নরক থেকে বেরিয়ে এসেছে, শুধু আমরা মুসলমানরাই এখনো চোখে সর্ষে ফুল দেখে দেখে ভির্মি আর খাবি খেয়ে চলেছি এ অন্ধকুপের ভেতর। মেয়েদের আর্তনাদ শুনছি আর সাম্যের বক্তৃতা শুনছি। অবশ্যই, অবশ্যই!
সে কথাগুলো হল: পুরুষ নারীর ওপরে কর্তা, উত্তরাধিকারে পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পাবে, আর্থিক লেনদেনে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক, ইত্যাদি ইত্যাদি।
নারীরা হল ভূমি এবং ক্রীতদাসী সদৃশ—এও কি বলে দিতে হবে? দেখুন কোরান শরীফ:
সুরা বাকারা, আয়াত ২২৩ (২:২২৩):
তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।
এ কথার মানে কী? ‘শষ্যক্ষেত্র’ কথাটার মানেই হল, মেয়েদের বিছানায় টেনে নিয়ে যাও, আর ‘চাষ কর’, ‘শষ্য’, অর্থাৎ বাচ্চা পয়দা করার জন্য। ছিঃ! কোনো ধর্মগ্রন্থ যে নারীদের নিয়ে এমন অবমাননাকর শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, তা কল্পনাই করা যায় না। আর ‘ব্যবহার কর’ কথাটার মানেই বা কি? মেয়েরা কাপড়, না জুতো যে ব্যবহার করতে হবে? এর পরেও কোরানে পুরুষের জন্য মেয়েদের ‘উপভোগ কর’, ‘সম্ভোগ কর’ এ ধরনের কামুক কথাবার্তা প্রচুর আছে। আর বেহেশতের তো কথাই নেই।
সুরা আল-ওয়াক্বিয়াতে (সূরা ৫৬: ৩৫-৩৭) মেয়েদের নানারকম উত্তেজক বর্ণনার পর বলা হল:
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা।
এদিকে বেচারা অনুবাদকের হয়ে গেল মহা মুশকিল। রমণীর সাথে রমণের লোভটাই সবচেয়ে আকর্ষনীয়, কিন্তু একবার রমণ হয়ে গেলে রমণীর পক্ষে চির কুমারী থাকাটাও অসম্ভব। কী করা যায়! অনেক ভেবে-চিন্তে মাথা চুলকে তিনি ব্যাখ্যার অংশে লিখলেন: জান্নাতের নারীদের এমনভাবে সৃষ্টি করা হবে যে, প্রত্যেক সঙ্গম-সহবাসের পর তারা আবার কুমারী হয়ে যাবে (পৃ-১৩২৭, কোরাণের বাংলা অনুবাদ মওলানা মুহিউদ্দীইন খান) । শুধু তা-ই নয়, ঐ একই পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে: এ ছাড়া শয্যা, বিছানা ইত্যাদি ভোগবিলাসের বস্তু উল্লেখ করায় নারীও তার অন্তর্ভুক্ত আছে বলা যায়। অর্থাৎ নারী শুধু শয্যা ও লাঙ্গল করার ভূমি মাত্র।
সাব্বাশ!
এইসব কথা বলার পরে প্রচুর মিষ্টি মিষ্টি কথা কিংবা ‘আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক’’’ এসব বলে কোনোই লাভ হয়নি, মুসলমান মেয়েরা চিরকাল পিষ্ট হয়েছে পুরুষদের পায়ের নীচে।
এগুলোই হল প্রাথমিক পাঠ। এবার আসা যাক দীর্ঘ আলোচনায়।
(চলবে)
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন