আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১২

১%

লিখেছেন মুখফোড়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কিয়ৎকাল পর জানিলাম, সহপাঠী বনি ইয়ামিন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য।

মনের ভিতর দুর্ভাবনা জাগিল। বনি ইয়ামিন সদালাপী, না চাহিতেই আসিয়া নোটপত্র ধরাইয়া দেয়, বিপদে আপদে লোমশ বুক পাতিয়া ঝাঁপাইয়া পড়ে, জ্যেষ্ঠ খালু দুর্ঘটনায় আহত হইয়া হাসপাতালে যাইবার পর বনি ইয়ামিন ও তাহার কতিপয় ঈষৎ শ্মশ্রুমণ্ডিত বন্ধু আসিয়া রক্তদানের ভার স্কন্ধে লইয়াছিল। তাহার সহিত কোথাও গমন করিলে রিকশা অথবা সিএনজি ভাড়া সে প্রদান করে, খাইতে বসিলে বিল চুকাইতে সে অস্থির হইয়া পড়ে।

অথচ নিন্দুকেরা বলে ইসলামী ছাত্র শিবির ইসলামী ছাত্র সংঘের উত্তরসূরী। তাহারা ঊনিশশো একাত্তর সালে বাংলায় আল-বদর বাহিনী গঠন করিয়া হত্যা লুণ্ঠন ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ সকলই করিয়াছিল।

বনি ইয়ামিনকে এ প্রশ্ন একদিন ঠুকিয়া বসিলাম। বলিলাম, এত যে আমাকে জুম্মার নামাজ পড়িতে আহ্বান কর, রমজানের মিলাদে ইফতার ভোজন করিতে ডাক, আল্লামা মওদুদীর পুস্তকাদি পড়িতে চাপাচাপি কর, শিবির কি আল-বদরের সন্তান নহে?

বনি ইয়ামিন আপত্তি জানাইয়া কহিল, শিবির আল-বদরের বৈধ অবৈধ কোন প্রকারের সন্তান নহে। শিবির শিবিরই। যেমন নারিকেলকে ডাবের সন্তান বলা অনুচিত।

আমি আমতা আমতা করিতেছিলাম, বনি ইয়ামিন কহিল, ইসলামী ছাত্র সংঘের বড়জোর ১% লোক আল-বদরে গিয়াছিল। বাকি ৯৯% মুক্তিযুদ্ধ করিয়াছিল। শিবির ইসলামী ছাত্র সংঘের সেই অবশিষ্ট ৯৯% এর সন্তান।

যুক্তিটি আমার মনে ধরিল। বনি ইয়ামিনকে নিঃসংকোচে বন্ধু ডাকিয়া পেলব বুকে টানিয়া লইলাম।

দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা আমায় নিন্দামন্দ করে। বলে, ইনজিনিয়ারিং পড়িতে গিয়া এ কী দশা করিলি। তোর স্বীয় ইনজিনখানিতে সমস্যা দেখা দিয়াছে। উপরন্তু চলাফিরা করিতেছিস একটি শিবিরের সঙ্গে।

আমি বনি ইয়ামিনের সঙ্গে ওঠবোস করিয়া অনেক যুক্তি শিখিয়াছি। বলিলাম, দেখ, গোটা বাংলাদেশেই জামাত শিবির আছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বাহিরে নয়। বাংলাদেশে যদি ১% লোক জামাত শিবির হয়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়েও ১% জামাত শিবির থাকা পরিসংখ্যানগতভাবে সঠিক।

বন্ধুগণ পরিসংখ্যানে পরিপক্ক নহে বলিয়া চুপ মারিয়া গেল।

আরও দিন যায়। মাস যায়।

এক ইঁচড়ে পাকা বন্ধু ইত্যবসরে কয়েক পাতা পরিসংখ্যান অধ্যয়ন করিয়া একদিন চায়ের আড্ডায় আসিয়া ফট করিয়া বলিয়া বসিল, বাছিয়া বাছিয়া ঐ ১% জামাত শিবিরের সদস্যের সঙ্গেই তোমার দোস্তি হইল কীরূপে?

আমি বনি ইয়ামিনের সঙ্গে ওঠবোস করিয়া ইতিমধ্যে আরো কিছু যুক্তি শিখিয়াছি। কহিলাম, দেখ বন্ধু, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত শিবির সমর্থক অনেকে আছে বটে, কিন্তু তাহাদের সঙ্গে আমি কদাপি মিলামিশা করি না। তাহাদের মাত্র ১% এর সঙ্গেই আমার খাতির।

পরিসংখ্যানগর্বী বন্ধুটি থম মারিয়া চায়ের কাপে চুমুক মারিতে লাগিল।

আরও দিন যায়। মাস যায়।

একদিন বনি ইয়ামিন কহিল, আরে ইয়ার, আমাকে একটি কাজে সহায়তা কর। কিছু ভারি জিনিস বহন করিতে হইবে। আমি মটর সাইকেল চালনা করিব, তুমি জিনিসগুলি ভালমত যুত করিয়া পাকড়াইয়া ধরিয়া বসিয়া থাকিবে কেবল। কী, পারিবে না?

বনি ইয়ামিন আমাকে লেখাপড়ায় সহায়তা করে, কিছু ভাল টিউশনি সন্ধান করিয়া দিয়াছে, আমার জ্যেষ্ঠ খালুর শরীরে তাহার ও তাহার ঈষৎ শ্মশ্রুমণ্ডিত বন্ধুদিগের রক্ত বহমান, না করিতে বাধিল। বলিলাম, চল ইয়ার।

বনি ইয়ামিন তাহার মটর সাইকেলের পিছনে বসাইয়া লইয়া গেল জিগাতলার একটি ঘুপচি বাড়িতে। তাহার মতই স্বাস্থ্যবান সুদর্শন এক যুবক আসিয়া খবরের কাগজে বাঁধাই করা একটি বাণ্ডিল আমার হাতে তুলিয়া দিয়া সুমধুর হাস্যে কহিল, আসসালামু আলাইকুম ভাই।

আমি আরবী ভাষায় সহীহ মুসলিম তরিকায় বোলচাল শিখিয়া গিয়াছি, কহিলাম ওয়া ইয়াকুম। জাযাকাল্লাহু খাইরান।

যুবক হাস্যমুখে জবাবে কহিল, দুগদুগ আনতি উখতি।

বনি ইয়ামিন তাহার সহিত নিম্নস্বরে কিছু বাক্যালাপ সারিয়া আসিয়া পুনরায় মটর সাইকেল চাপিয়া আবুল মকসুদ হলে ফিরিয়া আসিল। সে আবুল মকসুদ হলের আবাসিক ছাত্র।

দোতলায় তাহার প্রান্তবর্তী ঘরে সেই বাণ্ডিলটি খাটের নিচে রাখিতে গিয়া তাহা বম্বাই চলচ্চিত্রের নায়িকার বসনের ন্যায় আলগা হইয়া পড়িল। আর অবগুণ্ঠিত চাপাতি ও রডগুলি বাহির হইয়া পড়িল।

আমি ভীত হইয়া বলিলাম, ইয়ার বনি ইয়ামিন, এইসব কী হইতেছে? চাপাতি রড লইয়া তুমি কী করিবে?

বনি ইয়ামিন আমাকে আলিঙ্গন করিয়া কহিল, ভীত হইও না বন্ধুবর। সামনে কুরবানি, মাংস কাটাকাটি করিব।

আমি কহিলাম, কুরবানি তুমি গাইবান্ধায় উদযাপন না করিয়া হলের কক্ষে চাপাতি আনিতেছ কেন?

বনি ইয়ামিন কহিল, গাইবান্ধায় এলাকার ভাইয়েরা আরও অনেক মালপত্র লইয়া যাইবে। তাহার ১% আমি নিজের কাছে আনিয়া রাখিয়াছি। সব ভার অন্যের উপর চাপাইলে চলিবে না, নিজেকেও কিছু বহন করিতে হইবে।

সপ্তাহ দুইয়েক পর একদিন সন্ধ্যায় বনি ইয়ামিন ক্যাম্পাসে আসিয়া আমাকে কহিল, ইয়ার, সমস্যা হইয়া গিয়াছে। পল্টনে মারপিট লাগিয়াছে। পুলিশ আমার সন্ধান করিতেছে। কিছু দিন তোমার বাসায় অবস্থান করিতে চাই।

বনি ইয়ামিন আমার বন্ধু, লেখাপড়া-টিউশনি-জ্যেষ্ঠ খালুর দিক দিয়া হিসাব করিলে নিকটাত্মীয়ের ন্যায়, তাহাকে লইয়া চলিলাম বাড়িতে।

আমার মাতা বনি ইয়ামিনকে দেখিয়া অস্বস্তিভরে আমাকে ফিসফিস করিয়া কহিলেন, এ কেন আমাদের বাসায় থাকিতে চায়?

আমি জ্যেষ্ঠ খালুর হিমগ্লবিনের কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া গম্ভীরচিত্তে কহিলাম, মা, আমার সব বন্ধুরা তো রাত্রিকালে আমার ঘরে থাকিতে চাহে না। মাত্র ১% থাকিতে বাঞ্ছা করিলে তুমি ফিরাইয়া দিবে? তাছাড়া জ্যেষ্ঠ খালুর শরীরে বনি ইয়ামিন ও তাহার ঈষৎ শ্মশ্রুমণ্ডিত বন্ধুদিগের রক্ত বহিতেছে, অন্তত ১% তো হইবেই। আর সে তো সারা বছর থাকিবে না। তিন সাড়ে তিন দিন কাটাইয়া চলিয়া যাইবে যেদিকে দুই চক্ষু যায়। বছরের মাত্র ১% সময় সে বন্ধুর বাড়িতে থাকিলে কী এমন ক্ষতি? আর সারা বাড়িময় তো সে বাস করিবে না। বড়জোর বারো চোদ্দ বর্গফুট জায়গা লইয়া চুপচাপ শুইয়া থাকিবে। গোটা বাড়ির মাত্র ১% স্থান তাহাকে ছাড়িয়া দিলে অনিষ্ট কোথায়?

আমার লেকচাড় শ্রবণ করিয়া আমার জননী ক্ষান্ত হইলেন। রাতে মুরগি রান্না করিলেন বনি ইয়ামিনের জন্য।

বনি ইয়ামিন গভীর রাত্রিতে মোবাইল ফোনে নিম্নস্বরে গুজগুজ করিয়া আমার বিছানায় আমার সঙ্গে শুইয়া ঘুমাইয়া পড়িল।

বিপত্তি বাঁধিল দ্বিতীয় রাত্রিতে। সারা দিনে এক হাজার চার শত চল্লিশ মিনিট। তাহার ৯৯% নির্বিবাদে কাটিয়া যাইতেছিল, মিনিট পনেরর জন্য একটা সমস্যা দেখা দিল।

বনি ইয়ামিন আমায় বহুবার বলিয়াছে, জিহাদে নামিলে মাঝেমধ্যে নফস জাগ্রত হয়। নামাজকালাম পড়িয়া তাহা নিবৃত্ত করা দস্তুর, কিন্তু নামাজকালামে কাজ না দিলে যাহা করিলে কাজ দেয় তাহা করিয়া ফেলাই গুরুজনের হিতোপদেশে আছে।

আমি তাই বাধা না দিয়া উপভোগের চেষ্টা করিতেছিলাম। কিন্তু বনি ইয়ামিনের নফস অপেক্ষাকৃত শোরগোলপ্রবণ বলিয়া আমার পরিবারের গুরুজনেরা জাগিয়া উঠিয়া দরজায় করাঘাত করিতে লাগিলেন।

আর যেখানে ব্যাঘ্র লইয়া ভীতি, সেইখানেই ঘনায় সন্ধ্যারাতি। ছিটকিনিটি সেদিন আর উত্তমরূপে আবিষ্ট করা হয় নাই। তাই তাহাদের উপর্যুপরি করাঘাতে দরজা খুলিয়া গেল। বাতি জ্বলিয়া উঠিল।

পিতা ও মাতা আঁতকাইয়া উঠিলেন। আমি থতমত খাইয়া পড়িয়া রহিলাম। বনি ইয়ামিন হাঁপাইতে হাঁপাইতে কহিল, আসসালামু আলাইকুম।

পিতা গর্জন করিতে লাগিলেন। মাতা ক্রন্দন করিতে লাগিলেন। ছোট ভাই বোন আসিয়া বেআদবের ন্যায় হাহা হিহি করিতে লাগিল।

পিতা চিৎকার করিয়া কহিলেন, এই ছেলের লিঙ্গ তোমার পায়ুপথে কেন?

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলাম, আব্বা, পায়ুপথকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে? সমগ্র শরীর বিবেচনায় নিলে পায়ুপথের তাৎপর্য কতটুকু? আয়তন বিচারে সে সমগ্র শরীরের আর কতটুকু? বড়জোর ১%?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন