লিখেছেন দ্রাক্ষা রস
(অলম্বুষা জাতক অবলম্বনে লিখিত )
প্রথমেই আসে দেবরাজ ইন্দ্রের কথা। এই ব্যক্তির মত হিংসুটে পৃথিবীতে কম আছে (দুঃখিত, তিনি স্বর্গে থাকতেন বলে চটিতে উল্লেখ আছে) । গৌতম বুদ্ধ এক ভিক্ষুকে তার স্ত্রীর প্রলোভন থেকে মুক্ত করার জন্য উক্ত জাতক কাহিনী শোনায়। ভিক্ষু তার অতীত জন্মে ছিলেন নারীসঙ্গবর্জিত মুনি। গৃহ থেকে দূরে বনে আশ্রমে পাতা-ছাতা, ফল-মল খেয়ে দিনাতিপাত করতেন এবং সিদ্ধি লাভ করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। এবং তিনি যখন সাধনার শেষ পর্যায়ে, তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর ঠিক পূর্বেই ঈর্ষান্বিত দেবরাজ (!) ইন্দ্র অলম্বুষা নামক স্বর্গের অপ্সরাকে পাঠিয়ে দিলো সেই আশ্রমে মুনির ধ্যান ভঙ্গ করতে। সুন্দরী যথারীতি সিডিউস করতে সক্ষম হয়ে গেলো । তারা টানা তিন বছর রমণে ব্যস্ত ছিলো (কী খাইতো, কে জানে? বিছানা অবশ্য ছাগলের লোম দিয়ে তৈরি ছিলো এবং গিফট করেছিলো ইন্দ্র!) । এরপর একদিন মুনির মোহ ভঙ্গ হলো। এক ঝটকায় তিনি অস্বীকার করলেন তাঁর তিন বছরের জীবন এবং পুনরায় ধ্যান –সাধনায় ব্যস্ত হলেন নিজের হারানো তেজ ফিরে পাবার জন্য। পুনরায় সিদ্ধি লাভের জন্য কঠোর তপস্যাতে নিমগ্ন হলেন।
এবং স্মরণ করলেন, তার পিতা কাশ্যপ মুনির বাণী – “নারীগণ ফুল্ল কমলের মতন। তারা পুরুষের মন হরণ করে, এমনকি বিপদে ঠেলে দেয় । তাই নারীর প্রলোভন থেকে পুরুষের সতর্ক থাকা উচিত” (মারহাবা !)
ওপরোক্ত 'নারীপ্রেমমণ্ডিত' বাণীদাতা কাশ্যপ মুনি কে ছিলো, অনুমান করুন দেখি? পারলেন না? গৌতম বুদ্ধ। হ্যাঁ, তিনিই।
এখন প্রশ্ন হলো:
১. ঈর্ষান্বিত দেবরাজ ইন্দ্র কি তুলসী দিয়ে ধোয়া ছিলো? দেবরাজ হয়ে সে কী করে আরেকজনের তপস্যা নষ্ট করতে চায় নিজের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে? (বৌদ্ধ ধর্মে কথিত আছে, নিয়মিত শীল-সমাধি – প্রজ্ঞা অনুশীলন করলে স্বর্গে ইন্দ্রের আসন পাওয়া যাবে! এরকম লোকের মত হওয়ার জন্য মন্দিরের চৌকাঠে জীবন লিখে দেয় অনেক বেকুব শ্রেণীর ধার্মিক লোক)
২. দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে অলম্বুষা মুনির ধ্যান ভঙ্গ করে। এক্ষেত্রে বিপদে ঠেলে দেওয়া নারীর দোষ কতটুকু?
৩. তিন বছর একজনের সাথে সেক্স করার পর যার সবকিছু অর্থহীন মনে হয়, সে কি মুনি নাকি সুবিধাবাদী? অন্য নারী পেলে সে কি নিজের কাপড় আবার ভেজাবে না? তার গ্যারান্টি কী?
৪. কেউ সংসারে চলে যেতে চাইলে কিংবা স্ত্রীকে ভালবাসলে তাকে নারী জাতির বদনাম করে ধর্মের বোঝা চাপানো কি অধর্ম নয়?
৫. নারী জাতি যদি পুরুষের বিপদের কারণ হয়ে থাকে, তাহলে কেন এই বলে গলাবাজি করা – আমরাই সকল নারীকে সম্মান দিয়েছি । এটাই সম্মানের নমুনা?
কোনো ধর্মই নারীকে সম্মান দেয়নি। বরং সম-অধিকার দেওয়ার নামে অপমান করেছে সমাজের চোখে, ধর্মের চোখে, যুগে-যুগে, কালে-কালে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন