লিখেছেন নিলয় নীল
ছোটকালে আমি খুব সুন্দর ডিগবাজি দিয়ে সবাইকে আকৃষ্ট করতে পারতাম। একদিন আমার বয়সী আমার এক কাজিন আমাকে দেখে ডিগবাজি দেয়া শুরু করলো। আমার তো মেজাজ খারাপ হল, আমার দেখাদেখি সে ডিগবাজি কেন দেবে? তার ডিগবাজির বিরোধিতা যখন আমি করি, তখন সে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলো। আমি যেভাবে ডিগবাজি দেই, সে সেভাবে না দিয়ে অন্যভাবে দেয়া শুরু করলো। সত্যি কথা বলতে কি, মোহাম্মদের অবস্থাও আমার সেই কাজিনের মত হয়েছিল। নিম্নে বিশ্লেষণ করছি:
রাসূল (সাঃ) যখন মদীনায় আগমন করলেন তিনি আশুরার দিনে ইহুদিদের রোযা পালন করতে দেখলেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোযা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিন যে তোমরা রোযা পালন করছ? তারা বললঃ এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা (আঃ) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোযা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোযা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা (আঃ) এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূল (সাঃ) রোযা পালন করলেন ও অন্যদেরকে রোযা পালনের নির্দেশ দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
কিন্তু একটা পর্যায়ে শয়তান ইহুদীরা এর বিরোধিতা করতে লাগলো এবং বলতে লাগলো, নবী তাদের অনুসরণ করছেন। তাই রাসূল (সাঃ) সংকল্প করলেন, আশুরার দিনে তিনি ইহুদিদের মত আর একটি করে রোযা পালন করবেন না। বরং এ রোযার সাথে মুহাররম মাসের নবম তারিখে একটি রোযা বাড়িয়ে রাখার মাধ্যমে ইহুদিদের ধর্ম ও সংস্কৃতির বিরোধিতা করবেন। এর প্রমাণ হিসেবে বহু হাদিস এসেছে।
যেমন,
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসূল (সাঃ) আশুরার রোযা পালন করলেন ও অন্যকে পালন করার নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বললেনঃ এটা তো এমন এক দিন যাকে ইহুদী ও খৃষ্টানরা সম্মান করে থাকে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ আগামী বছর আসলে ইনশা-আল্লাহ আমরা নবম তারিখে রোযা পালন করব। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ পরবর্তী বছর আসার পূর্বেই রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করলেন। (মুসলিম)
আর একটি হাদিস দেখি আমরা,
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আশুরা দিবসে রোযা পালন কর ও এ ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধীতা কর। তাই তোমরা আশুরার একদিন পূর্বে অথবা একদিন পরে রোযা পালন করবে। (আহমদ)
এ দিনে রোযা পালনের ফযীলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সাঃ) কে আশুরার রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেন: “বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়। (মুসলিম, তিরমিযী)
ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বলেন, এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল: যে রোযা পালনকারীর গুনাহ রয়েছে তার গুনাহের কাফফারা হবে আর যার গুনাহ নেই আশুরার রোযা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। (ফাযায়েলুল আওকাত: বায়হাকী)
মোট কথা আশুরার দিনের রোযা হল এক বছরের রোযাতুল্য।
এই হল আশুরার রোজা রাখার তাৎপর্য। এক বছরের প্যাকেজ ছওয়াব চাইলে আপনিও রোজা রাখতে পারেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন হাস্যকর কারণে এই দিনটা মুসলিম মতে গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করছি:
১. এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদমকে সৃষ্টি করে আল্লাহ।
২. এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেন।
৩. এই দিনে আল্লাহ নবী মুসা (আঃ) এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মারেন।
৪. এই দিনে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতী হোসেনকে হত্যা করা হয়।
৫. এই দিনে নূহ (আঃ) তার নৌকা নিয়ে ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
৬. এই ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ আসমান জমিন সৃষ্টি করেন।
৭. এই দিনে নবী ইব্রাহীম (আঃ) অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার পেয়েছেলেন।
৮. এই দিনে নবী আইয়ুব (আঃ) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়েছিলেন।
৯. এদিন আল্লাহ ঈসা (আঃ) কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়ে যান।
১০. হাদিসে আছে, এই দিন কেয়ামত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন