লিখেছেন নিষ্কর্মা
ঘটনার সূত্রপাত হুট করেই। আমি আমার এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেছি। সে ভালো ধরনের ধার্মিক মানুষ। নামাজ, রোজা ইত্যাদি তো করেই; তার সাথে যত ধরনের ইসলামের আনুষাঙ্গিক সোয়াব হাসিলের উপায় আছে, তার একটাও সে বাদ দিতে চায় না। কোর’আন এবং হাদিস নিয়ে তার পড়াশোনা অনেক। আর আমি তাকে প্রায়ই সে সব নিয়ে খোঁচাখুঁচি করি।
তার তিন মেয়ে। ছোটটার বয়েস দশ-এগারো। কম হলেও হতে পারে, আমার অত মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে, মেয়েটার জন্মের সময়ে আমি আর আমার স্ত্রী আরেকটি সন্তানের জন্য পর্যন্ত প্ল্যান করেছিলাম। কিন্তু বয়েস আর সময় –এই দুই সদা-বহমান ফ্যাক্টরের জন্য সন্তান লাভ আমাদের হয়নি।
তো আমার বন্ধুর সাথে আলোচনার ছলে আমি বললাম, “তোর ছোট মেয়ে তো ভারি মিষ্টি আর মায়া কাড়া। বিয়ে-টিয়ে দিবি নাকি?” আমার বন্ধু তো আকাশ থেকে পড়ল। বলেকি, “কেবল মাত্র স্কুল শুরু করল, এখনো অনেক পথ যেতে হবে মেয়েটাকে, আর তুইএখনই বলছিস বিয়ে করানোর কথা!”
আমি বললাম, “দেখ, আমার বয়েস এখন প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই করছে। তোর মেয়ের বয়েস তো দশের মত। চিন্তা করে দেখ, একটা ভালো সুন্নত পালনের সুযোগ তোর সামনে কিন্তু আছে!”
এর পরে অনেক দিন আমার এই বন্ধুটি আমার সাথে বাক্যালাপ বন্ধ রেখেছিল, কেউ কিন্তু জানে না, কেন আমাদের ভেতরে বাক্যালাপ বন্ধ ছিল। ওর ছোট মেয়েটি তো আমার মেয়ের মত, তাকে আমি কেন বিয়ে করতে যাব? এতো ছোটলোক তো আর আমি নই, আমার সামাজিক সম্মান আর মর্যাদা আছে। তারপরে নিজের কাজকর্ম আছে, পরিবারকে আমার সময় দিতে হয়।
অনেকদিন পরে বন্ধুটি এসে মাফ চাইল। বলল, “দোস্ত আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মাফ করে দিস।” এবারে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কী এমন হল যে, আমার কাছে সে মাফ চাইবে? মাফ তো চাইতে হলে আমাকে চাইতে হবে তার কাছে।
আমি যে চেষ্টা করিনি, তা নয়। ভদ্র সমাজে কেউ কখনো নিজের বন্ধুর কম বয়েসি মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। আদিম সমাজে অমন বিবাহপদ্ধতি থাকলেও থাকতে পারে। আমাদের এ যুগে তা আর নেই। আমরা চিন্তাও করতে পারি না যে, আমারই বন্ধু আমার কম বয়েসি মেয়েক বিয়ে করবে! কিন্তু আমার মাফ চাইবার প্রচেষ্টাগুলো ফলদায়ক হয়নি।
আমার বন্ধু বলল, “দোস্ত, তুই যে বিয়ের কথা বলেছিলি, আমি পরে অনেক চিন্তা করে দেখলাম, আমাদের ধর্মে এই ব্যাপারটা ধর্মের অনেক কিছুর সাথেই মেলে না। চিন্তা করে দেখ, তাঁর [রাসুল (সাঃ) -এর] সব স্ত্রীর বয়েস তিরিশ প্লাস। এমন কি উপঢৌকন পাওয়া ক্রীতদাসী মারিয়া – যার গর্ভে তাঁর পুত্রসন্তান, সেই মারিয়াও কিন্তু টুয়েন্টি-ফাইভ প্লাস। তাইলে কেন একটা ছয় বছরের মেয়েকে বিয়ে করার দরকার পড়ল?”
এ নিয়ে আরো অনেক আলোচনা করলাম। পরে এই সিদ্ধান্তে আসলাম যে, ইসলাম ধর্মের অনেক কিছুই মানুষের বানানো। যেটুকু মানুষের বানানো, সেইটুকু চিরন্তনভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। যেমন এই কম বয়েসি মেয়ে বিয়ে করা, কিংবা পালক পুত্রের বউকে বিয়ে করা। এমনকি নিজের মেয়েকে নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া হয় বলে শোনা যায় না।
এই ব্যাপারগুলো ছোট বলে মনে হতে পারে, কিন্তু শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসাবে দাবীদার ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কি এইসব রীতি মেনে চলেন এখনো? আমার জানা মতে তো না। তা হলে কেন ইসলামকে ঐশ্বরিক ধর্ম বলা হবে?
ধর্ম অনেক দিনের অনেক প্রচলিত ভাল কাজকে স্থান দেয় বা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। পরে বলা হয় যে এইগুলো ধর্মের বিধান। এই দিক থেকে দেখলে গরীবকে দান করা, অপরের জন্য কিছু মঙ্গল সাধন করা, শরীর পরিষ্কার রাখা, পরিধানের বস্ত্র পরিচ্ছন্ন রাখা – এমন অনেক আদেশই মানুষের জন্য মঙ্গলজনক। এমন ধরনের অনেক ভালো কিছুর সাথে মিলালে কম বয়েসি মেয়ে বিয়ে করাটা ইসলামের অন্য আইনের সাথে সাজুয্যপূর্ণ হয় না।
আবার এই ভাবে দেখলে কেমন মনে হয়? ইসলাম ধর্মের অনেক ব্যাপার মানুষের বানানো তবে বাইবেলের মত তার ধাপে ধাপে না লিখে একবারেই লিখে ফেলা হয়েছে, একজনের জীবনেই তা বাস্তবে রূপ দেওয়া হয়েছে। আর পরের চার খলিফারা সেই সব কাহিনী সংগ্রহ করে ফাইনাল করে দিয়ে গেছেন। মক্কা ও মদিনা শীর্ষক সুরাগুলো দেখলেই এই তফাতটা ভালো করে বোঝা যাবে: একটা হল মহম্মদ লিখিত সুসমাচার, অন্যটা হল বক্কর-উমর-ওসমান লিখিত সুসমাচার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন