পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১
স্বামী দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেওয়া (বিবাহ বিচ্ছেদ) - শেষাংশ
সত্যি বলতে কি ইমাম গাজ্জালী লিখেছেন, কোনো কারণ ছাড়াই স্বামী পারবে স্ত্রীকে তালাক দিতে।
এহিয়া উলুম আল দীন, ভলুম ১, পৃঃ ২৩৪):স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপার স্যাপার কারও কাছে ফাঁস করবে না—তা বিবাহ অবস্থায় হউক অথবা বিবাহ বিচ্ছেদই হউক। এই ব্যাপারে বেশ কিছু বর্ণনা আছে যে স্ত্রীর গোপন ব্যাপারে কারও সাথে আলাপ আলোচনা বিপদজনক হতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে একদা এক ব্যক্তি জানালো যে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়। প্রশ্ন করা হল কি কারণ। সে বলল: “একজন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি তার স্ত্রী সংক্রান্ত গোপন ব্যাপার কাউকে বলে না।” সে যখন তালাকের কাজ সম্পন্ন করল তখন জিজ্ঞাসা করা হল: “তুমি কি কারণে স্ত্রীকে তালাক দিলে?” সে উত্তর দিল: “আমার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী অথবা অন্য কোন নারীর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার অধিকার আমার নাই।”
এ ব্যাপারে শারিয়া বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান ডোইয়ের বক্তব্য হল, হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেবার জন্য কোনো কারণের দরকার নেই। (ডোই, পৃঃ ১৭৩)
মালিকের মুয়াত্তা হাদিসে লিখা হয়েছে যে, তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে আর মেয়েদের জন্য আছে ইদ্দত।
দেখুন মালিক মুয়াত্তা হাদিস ২৯.২৪.৭০:ইয়াহিয়া-মালিক-ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ-ইয়াজিদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুসায়ত আল লাইথ থেকে বললেন যে সা’দ ইবনে আল মুসায়েব থেকে বর্ণনা করেছেন: উমর আল খাত্তাব বলেছেন: ‘কোন স্ত্রীর তালাক হল। তার পর সেই মহিলার দুই অথবা তিন স্রাব হল। এর পর স্রাব বন্ধ থাকল। এমন অবস্থা হলে সেই মহিলাকে নয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। এর থেকে বুঝে নিতে হবে যে স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী। নয় মাস পার হয়ে যাবার পর আবার তাকে তিন মাসের ইদ্দত করতে হবে। এর পর সে পুনরায় বিবাহে বসতে পারবে।’
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ ইবনে মুসায়েব থেকে বলেছেন: “তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে, আর স্ত্রীর জন্যে রয়েছে ইদ্দত”।
মালিকের মুয়াত্তাতে আরও লেখা হয়েছে যে, স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে যে, সে (স্ত্রী) তার জন্য হারাম, তখন তা তিন তালাক (অর্থাৎ স্থায়ী তালাক) হিসাবে গণ্য হবে।
পড়া যাক মালিকের মুয়াত্তা ২৯.১.৬:মালিক ইয়াহিয়া থেকে বললেন তিনি শুনেছেন যে আলী বলতেন যে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে যদি বলে: “তুমি আমার জন্যে হারাম”, তবে সেটাকে তিন তালাকের ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে।
এই সব কিছুর অর্থ হচ্ছে যে, এক মুসলিম পুরুষ যে কোনো মুহূর্তে তার খেয়ালখুশিমত তার হারেমের রদবদল করতে পারবে। সে এক অধিবেশনেই তার চার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারবে এবং একই সাথে আরও নতুন চারজন স্ত্রী দ্বারা তার হারেম পূর্ণ করে নিতে পারবে।
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ভাতার ব্যাপারে অনেকেই ইসলামের মাহাত্ম্য দেখাতে চান। এ বিষয়ে আগেই বেশ কিছু লেখা হয়েছে। মোদ্দা কথা হল, অস্থায়ী তালাককে ইদ্দতের সময় ছাড়া অন্য কোনো স্থায়ী তালাকে স্ত্রী স্বামীর কাছ হতে এক কড়ি কণাও পাবে না। এ ব্যাপারে আরও কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করছি।
সহিহ্ মুসলিম বই ৯, হাদিস ৩৫১৪:ফাতেমা বিনতে কায়েস অভিযোগ করলেন যে তার স্বামী আল মাখযুলমী তাকে তালাক দিয়েছে কিন্তু কোন খোরপোষ দিতে অস্বীকার করেছে। ফাতেমা আল্লাহর রসুলের কাছে এ বিষয়ে বলল। আল্লাহর রসুল বললেন, “তোমার জন্য কোন ভাতা নাই। তোমার জন্যে ভাল হবে ইবন আল মাখতুমের ঘরে থাকা। সে অন্ধ, তাই তার অবস্থিতিতে তুমি তোমার পোশাক খুলতে পারবে। (অর্থাৎ তার সামনে পর্দা অবলম্বনে তোমার কোন অসুবিধা হবে না।)
সহিহ্ মুসলিম বই ৯, হাদিস ৩৫৩০:ফাতেমা বিনতে কায়েস বললেন: আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিল। আল্লাহর রসুল আমার জন্য কোন প্রকার থাকা খাওয়ার ভাতার ব্যবস্থা করলেন না।
এর পরেও কি আমরা বলতে পারি যে, ইসলামে তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের উপর ন্যায়বিচার করা হচ্ছে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন